ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নৌযান দুর্ঘটনা এড়াতে ওভারলোডিং ইন্ডিকেটর

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ২৬ মে ২০১৮

নৌযান দুর্ঘটনা এড়াতে ওভারলোডিং ইন্ডিকেটর

মাদারীপুরের মেয়ে আমিরা খানম আয়শা নৌযানে দুর্ঘটনা এড়াতে ওভারলোডিং ইন্ডিকেটর উদ্ভাবন করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তার এ উদ্ভাবনটি চলতি বছর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে। সেই সঙ্গে উজ্জ্বল করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম। আমিরা খানম আয়শা শরীয়তপুর জেড. এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ৩য় বর্ষের ছাত্রী। আমিরা মাদারীপুর পৌরসভার ১নং শকুনি মহল্লার হামিদ শিকদার সড়কের আহসান হাবিব ও মিনারা খানমের বড় মেয়ে। সে ২০০৯ সালে মাদারীপুর টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি (ইলেকট্রনিক্স) পাস করে। ২০১৪ সালে শরিয়তপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৬ জেড.এইচ. সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং (ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ) বিভাগে ভর্তি হয়। চলতি বছর ১২-১৩ মে শরীয়তপুর জেড.এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় আমিরা খানম আয়শা তার সহপাঠী আমির হামজাকে সঙ্গে নিয়ে নৌযানে ওভারলোডিং ইন্ডিকেটর উদ্ভাবন করে মেলায় প্রদর্শন করে। মেলায় প্রদর্শিত এটি অন্যান্য উদ্ভাবনকে ছাপিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে। আমিরার এ উদ্ভাবনে অনুপ্রেরণা, মেধা ও শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান মোঃ সোহেল রানা এবং প্রভাষক জহিরুল ইসলাম। নৌযানে দুর্ঘটনা এড়াতে উদ্ভাবিত ওভারলোডিং ইন্ডিকেটরের কাজ হলো-এটি কোন লঞ্চ বা স্টিমারে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করলে লাইট ও শব্দ সংকেত (এলার্ম) এর মাধ্যমে যাত্রীদের জানাবে যে, এই নৌযানে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট একটি মোবাইল নাম্বারে কল চলে যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত যাত্রী বা অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে নির্দিষ্ট ওজনে না আনা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ইন্ডিকেটর সার্কিট থেকে সংকেত দিতেই থাকবে। ঠিক একই সময় নৌযানে স্থাপিত ইন্ডিকেটর থেকে কন্ট্রোল রুমে সেট করা নাম্বারে কল চলে যাবে। এটি ব্যবহার করে বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে এ কলের মাধ্যমে লঞ্চ বা নৌযানের ওভারলোডিং-এর বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যে জানা যাবে। এতে ব্যবহৃত মোবাইল সিস্টেমটি এ কলটির কাজ করতেই থাকবে। এ সিস্টেম ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট ওজন এরপর লঞ্চটি আরও অতিরিক্ত ওজন/যাত্রী বহন করলেই এ সার্কিটটি এলার্ম ও লাইট জ্বালিয়ে ইন্ডিকেট করতে থাকবে। এর পরেও যদি অতিরিক্ত যাত্রী বহন বা ওজনের কারণে লঞ্চ বা নৌযানটি দুর্ঘটনার কবলে পরে ডুবে যায়; তখনও সার্কিট থেকে কল যেতেই থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে সার্কিট ততক্ষণ পর্যন্ত সংকেত পাঠাতে থাকবে। শুধু তাই নয় নাম্বার লোকেট করে ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে ডুবে যাওয়ার আগের লোকেশনও জানা সম্ভব হবে। ফলে উদ্ধার কাজ ত্বরান্বিত হবে এবং যাত্রীদের মৃত্যুঝুঁকি কম থাকবে। ফলে পিনাক-৬ এর মত হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমবে। এ সার্কিটে কিছু ইলেকট্রনিক্স কম্পোনেট ব্যবহার করা হয়েছে এবং এটির সঙ্গে মোবাইল সিস্টেম ব্যবহার করার কারণে এটি অনেকটা সহজলভ্য। বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। দেশের নৌযাত্রা নিরাপদ রাখার বিষয়টি মাথায় রেখে এ ইন্ডিকেটর তৈরির মূল উদ্দেশ্য বলে আমিরা দাবি করেছে। আমিরার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, ইচ্ছা শক্তি, কল্পনা ও মেধার বিকাশ ঘটিয়ে তা বাস্তবায়নে এ সার্কিটে সংযুক্ত করার চেষ্টা করেছে। আগামীতে আরও আপডেট করে নতুন কিছু সংযুক্ত করার ইচ্ছা আছে তার। যাতে নৌপথে দুর্ঘটনা পুরোপুরি এড়াতে না পারলেও অনেকটা কমে আসবে এবং জীবনের ঝুঁকিও বহুলাংশে হ্রাস পাবে। উদ্ভাবিত ইন্ডিকেটর সার্কিটটি নৌযানের দুর্ঘটনা রোধে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে বলেও আমিরার বিশ্বাস। আমিরা খানম আয়শা ভবিষ্যতে নৌযানে অতিরিক্ত ওভারলোড হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে এমন ধরনের নতুন কিছু উদ্ভাবনের চিন্তা করছে। এছাড়া ও যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে লঞ্চ বা কোন নৌযান দুর্ঘটনার কবলে পরে ডুবে যায়; তা‘হলে জরুরী দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে। এ ধরনের নতুন কিছু উদ্ভাবনের চিন্তা মাথায় রেখে গবেষণার কাজে এগিয়ে যাচ্ছে আমিরা। -সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে
×