ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে দম্পতি হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন॥ দুজনের স্বীকারোক্তি

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১৯ মে ২০১৮

টাঙ্গাইলে দম্পতি হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন॥ দুজনের স্বীকারোক্তি

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ১৮ মে ॥ ঘটনার প্রায় নয় মাস পর সদর উপজেলার রসুলপুরে অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক অনিল কুমার দাস ও তার স্ত্রী কল্পনা রানী দাসের নৃশংস হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করছে পুলিশ। সৎভাইয়ের জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে এ হত্যা করা হয় এবং এই হত্যাকান্ডে ছয়জন অংশগ্রহণ করে বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানায়। শুক্রবার দুপুরে টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। জানা যায়, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট রুপম কান্তি দাসের আদালতে গত ১৩ মে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। পরদিন গত ১৪ মে গ্রেফতার হওয়া অপর দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- সদর উপজেলার রসুলপুর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (৩২), মৃত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে ফরহাদ (৪৮), রসুলপুর গ্রামের মৃত আমির হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া (৩৩) এবং রসুলপুর শালিনাপাড়ার বাহাজ উদ্দিনের ছেলে মঞ্জুরুল ইসলাম মিঞ্জু (৩৩)। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, অনিল কুমার দম্পতি হত্যাকা-ে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে। এছাড়া পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় জানান, স্কুল শিক্ষক অনিল কুমার দাসের পার্শ্ববর্তী বিক্রমহাটী এলাকায় ৬০ শতাংশ জায়গা রয়েছে। সেই জায়গা আত্মসাৎ করার জন্য তার বৈমাত্রেয় ভাই স্বপন কুমার দাস ওরফে স্বপন সৌমিত্র পরিকল্পনা করে। তার সঙ্গে যোগ দেয় রসুলপুর এলাকার কয়েক মাদকসেবী। তারা মিলে পরিকল্পনা করে কিভাবে জমি অনিল কুমার দাসের কাছ থেকে লিখে নেয়া যায়। এ কাজ করতে পারলে স্বপন সৌমিত্র তার সহযোগীদের পাঁচ লাখ টাকা দেবে এবং জমি বিক্রির অর্ধেক টাকাও তাদের দেয়া হবে বলে জানায়। ঘটনার দিন রাতে ছয় হত্যাকারী শিক্ষক অনিল কুমারের বাসায় ওয়াল টপকে যায়। সেখানে জমির তিনটি দলিলে স্বাক্ষর করতে বলে। স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানালে শিক্ষক অনিল কুমার দাসকে তারা বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। পরে স্ত্রী কল্পনা রানী ঘটনাটি দেখে ফেলায় তাকেও হত্যা করা হয়। হত্যাকারীরা তাদের লাশ গলায় ইটের বস্তা বেঁধে বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কের খোলা কূপে ফেলে দেয়। পুলিশ সুপার জানান, এ হত্যাকা-ে জড়িত অভিযোগে গত ১২ মে গ্রেফতার হওয়া রসুলপুর গ্রামের জাহিদুল ইসলাম ও ফরহাদ টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। তাদের জবানবন্দীতে হত্যারহস্য বেরিয়ে আসে। পরে পুলিশ গত ১৪ মে রসুলপুর গ্রামের মনিরুজ্জামান ভুইয়া ওরফে খোকন ভুইয়া ও শালিনাপাড়া গ্রামের মঞ্জুরুল ইসলাম মিঞ্জুকে গ্রেফতার করে। তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হলে আদালতের বিচারক রুপম কান্তি দাস তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, এই হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে। হত্যা মিশনে ছয়জন সরাসরি অংশ নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তদন্ত চলমান রয়েছে। আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা পরবর্তীতে জানা যাবে। দুজন আসামিকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। নিহত অনিল কুমার দাসের বৈমাত্রেয় ভাই স্বপন সৌমিত্র জামিন নিয়ে বর্তমানে পলাতক রয়েছে। মামলার বাদী নিহতের ছেলে নির্মল কুমার দাস বলেন, তদন্ত সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। এভাবে তদন্তের ধারা অব্যাহত থাকলে আমি খুশি। উল্লেখ্য, বিগত ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই রাতের কোন এক সময় অনিল কুমার দাস ও তার স্ত্রী কল্পনা রানী দাসকে দুর্বৃত্তরা শ্বাসরোধ করে হত্যার পর তাদের গলায় ইটের বস্তা বেঁধে বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কের খোলা কূপে ফেলে রেখে যায়। পরদিন দুপুরে পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে। পরে ২৭ জুলাই নিহতের ছেলে বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
×