ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের আয়ু কমে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৫ মে ২০১৮

কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের আয়ু কমে যাচ্ছে

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে অনুপ্রবেশ করা লাখ লাখ রোহিঙ্গার সেবার নামে ভারী যানবাহন চলাচল করায় দেবে যাচ্ছে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক। এ সড়কের ওপর দিয়ে প্রতিদিন মালভর্তি শত শত ট্রাক চলাচল করছে। সড়কের ধারণ ক্ষমতার চাইতেও বেশি ভারী অসংখ্য গাড়ি চলাচলের কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রাস্তার ফাউন্ডেশন। বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে খানাখন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। সচেতন মহল বলেন, রোহিঙ্গা সেবার নামে চলাচল করা ভারী যানবাহনের কারণে একদিকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের স্থায়িত্ব যেমন নষ্ট হয়ে পড়ছে, অপরদিকে সরকারের কোটি কোটি টাকায় নির্মিত ব্রিজগুলোও নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। আয়ু কমে যাচ্ছে কক্সবাজার টেকনাফ মহাসড়কের। স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত অন্তত তিন সহস্রাধিক গাড়ি এ সড়কের ওপর দিয়ে চলাচল করছে প্রতিদিন। রোহিঙ্গাদের স্থাপনা নির্মাণকল্পে অনেক সময় ১০ চাকার গাড়িভর্তি ভারী পণ্য আনা হচ্ছে আশ্রয় শিবিরে। এতে সড়কের একাধিক স্থান মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এ কারণে প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে অসংখ্য মানুষের। গত দু’সপ্তাহে জেলার বরেণ্য দুই রাজনীতিবিদসহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১৩ জনের। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে বহু মানুষ। সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও যেহেতু রোহিঙ্গা সেবার নামে বিভিন্ন পণ্য ভর্তি সারিবদ্ধ গাড়ি। তাই গাড়ির সম্মুখে ব্যানার লাগানো থাকায় পুলিশও কিছুই করতে পারছে না বলে জানা গেছে। সচেতন মহল বলেন, মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চল হওয়ায় কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কটি আগে থেকেই অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হিসেবে চিহ্নিত। এ সড়ক দিয়ে সীমান্ত বাণিজ্যের পণ্য বহন করা হয়ে থাকে। আমদানি রফতানিকারকদের পণ্যগুলো সহজে বাজারজাত করতে পণ্য ভর্তি ট্রাক সহজে পৌঁছতে হয় চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে। সময়মতো বাজার ধরতে না পারলে প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে ব্যবসায়ীদের। আমদানিকৃত ওসব পণ্য থেকে সরকার প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে চলেছে। রোহিঙ্গাদের পণ্য বোঝাই ভারী যানবাহনের সংখ্যা যে হারে বেড়ে গেছে এবং সড়কের ক্ষতিসাধন হচ্ছে, এতে জরুরী মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িগুলোও দ্রুত গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো দায় হয়ে পড়বে বলে মত প্রকাশ করেছেন অভিজ্ঞ মহল। কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া সোমবার জনকণ্ঠকে বলেন, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের ওপর দিয়ে যে হারে ভারী গাড়ি চলাচল করছে, অন্য সড়কের ন্যায় তা বাধাও দেয়া যাচ্ছে না, বন্ধ করাও সম্ভব হচ্ছে না। আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছি। তিনি বলেন, যেখানে রাস্তা-সড়কে চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হয়, জনসেবার লক্ষ্যে সেখানে জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার করা হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে যে হারে ভারী গাড়ি চলছে, এভাবে যদি ভারী যানবাহন চলাচল অব্যাহত থাকে, তাহলে ওই সড়কে আর সংস্কার কাজ করা যাবে না। পুরো সড়কটি পুনঃনির্মাণ করতে হবে। রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। তাদের সেবার কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার ভারী গাড়িগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা এবং সড়ক রক্ষার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পত্র পাঠানো হয়েছে।
×