ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

৭ মের বদলে ১০ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৬ মে ২০১৮

৭ মের বদলে ১০ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সময় তিন দিন পিছিয়েছে। এবার ৭ মের পরিবর্তে ১০ মে সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এই সময় নাও ঠিক থাকতে পারে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১০ মেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আকাশের উদ্দেশে ভূমি ছাড়বে। যদি আবহাওয়া বৈরী হয় তাহলে আরও কিছু সময় লাগবে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, আরও বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাকি থাকায় ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ এর উৎক্ষেপণ সময় পেছানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শনিবার রাতে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের নতুন সময় ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের তারিখ নির্ধারণ করার আগে পরীক্ষা নিরীক্ষার সব প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করা হবে। এ কারণে ৩ দশমিক ৭ টন ওজনের স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণে দেরি হচ্ছে। স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণে দেরি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। যে কোন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের আগে কয়েক দফা পরীক্ষা করতে হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রেও তাই করা হচ্ছে। এরপর সম্ভাব্য সময়ের মধ্যে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে যাবে। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার কাছ থেকে স্যাটেলাইটটির উৎক্ষেপণের তারিখ নিশ্চিত হওয়ার জন্য ঢাকা থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে এখন অবস্থান করছেন। শনিবারও স্যাটেলাইটটির পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ চলছে। দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই এটি মহাকাশের উদ্দেশে উৎক্ষেপণ করা হবে। স্পেসএক্স বলছে, প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না হলে নির্ধারিত সময়েই স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ হবে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সে ‘ফ্যালকন-৯’ রকেট স্যাটেলাইটটি মহাকাশে পাঠাবে। ফরাসি কোম্পানি থালেস আলেনিয়ার প্রস্তুতকৃত স্যাটেলাইটটি স্পেস এক্স নামে পরিচিত মার্কিন প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস কর্পোরেশন উৎক্ষেপণ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ কানাভিরাল এয়ার ফোর্স স্টেশন থেকে তা উৎক্ষেপণ করা হবে। বঙ্গবন্ধু-১ এর সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের মালিকানা থাকা দেশের তালিকায় উঠবে। বাংলাদেশ হবে বিশ্বের স্যাটেলাইটের মালিকানা থাকা ৫৮তম দেশ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ সেবাদানসহ দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো নিজস্ব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম প্রচার করতে পারবে। কক্ষপথে স্থাপনের পর স্যাটেলাইটটি থেকে ১৫ বছর সেবা পাওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের বিষয়ে বিটিআরসি জানিয়েছে, ৭ মে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে এটা স্পেসএক্স তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছিল। এ জন্য বিটিআরসির পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্ততি নেয়া হয়। এখন আবহাওয়ার কারণে আবার নতুন সময় নির্ধারণ করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের জন্য রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনা হয়েছে। মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমায় প্রায় ২১৯ কোটি টাকায় ১৫ বছরের জন্য এই কক্ষপথ কেনা হয়। স্যাটেলাইট পাঠানোর কাজটি বিদেশে হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাংলাদেশ থেকেই। এজন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। যা নিয়ন্ত্রণে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনের যন্ত্রপাতিও আমদানি করেছে বিটিআরসি। কয়েক দফা তারিখ পরিবর্তন হলেও স্যাটেলাইট নির্মাণ ব্যয় বাড়েনি। বিটিআরসি জানিয়েছে, সঠিকভাবে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করলে আট দিন পর এটি মহাকাশে বরাদ্দ পাওয়া ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছবে। কয়েক দফা তারিখ পরিবর্তনের পর এবার চূড়ান্তভাবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি। উৎক্ষেপণের পর মহাকাশে ৮ দিন উড়ে নিজ কক্ষপথে পৌঁছার পর সেখান থেকেই স্যাটেলাইটটি কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। তখন থেকেই দেশের প্রায় ৩৭টি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তাদের সম্প্রচার কাজ চালাতে পারবে। টিভি চ্যানেলগুলো প্রচলিত ক্যাবলভিত্তিক প্রচারের পরিবর্তে ছোট ডিস এ্যান্টেনার মাধ্যমে ডাইরেক্ট টিভি সিগন্যাল পাবে।
×