ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

এ বছর আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ৩ মে ২০১৮

এ বছর আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য পেতে পারে। সেই সঙ্গে তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লার মতো জ্বালানি পণ্যের দাম ২০ শতাংশ বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। বিশ্ব ব্যাংকের ‘কমোডিটিস মার্কেট আউটলুক’ প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বিশ্ব ব্যাংক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লা অর্থাৎ জ্বালানির দাম এ বছর গড়ে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। গত অক্টোবর মাসে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে ধারণা করা হয়েছিল, জ্বালানির দাম ১৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। সে হিসেবে অনুমানের চেয়ে বেশি বাড়ছে জ্বালানির দাম। বিশ্ব ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান অর্থনীতিবিদ শান্তনান দেবরাজন এ বিষয়ে বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি আগের চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে। সেই সঙ্গে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নীতি অনিশ্চয়তার বিষয়ে সতর্ক করেন তিনি। বিশ্ব ব্যাংক ২০১৯ সালের জন্যও জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৬৫ ডলার থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে। তেল উত্তোলনকারী দেশগুলো তাদের উৎপাদন সীমিত রাখা এবং বিশ্ববাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এমন পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশ কী পরিমাণ পণ্য উৎপাদন, আমদানি বা রফতানি করবে তার একটি ধারণা দেয়া হয়েছে। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে চাল উৎপাদনের পরিমাণ ২০১৭ সালে ৩ কোটি ৪৬ লাখ টন থেকে এ বছর (২০১৮ সালে) কিছুটা কমে ৩ কোটি ২৭ লাখ টন হতে পারে। ফলে চাল আমদানির পরিমাণ এ বছর ৩৬ লাখ মেট্রিক টন পর্যন্ত হতে পারে। চিনি আমদানির পরিমাণও ২১ লাখ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে এ বছর ২৯ লাখ মেট্রিক টন হতে পারে। একই সঙ্গে বাড়বে গম আমদানির পরিমাণও। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ১৪ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন তুলা আমদানি করেছে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে এর আকার কিছুটা বেড়ে ১৫ লাখ ৭৩ হাজার এবং ১৫ লাখ ৪৬ হাজার মেট্রিক টন হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে কৃষিজাত এবং কাঁচামালের দাম এ বছর ২ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। বৈরী আবহাওয়া এবং আবাদ কমে যাওয়ায় এমনটি উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ধাতব পদার্থের দাম বৃদ্ধির পূর্বাভাসও রয়েছে। বিশেষ করে, চীনে নিম্নমানের ইস্পাত উৎপাদন কমিয়ে আনার নীতি গ্রহণ, পরিবেশবান্ধব উৎপাদনে খরচ বৃদ্ধি দাম বাড়ার একটি কারণ। নিকেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সার্বিকভাবে ধাতব পদার্থের দাম ৯ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এ বছর নিকেলের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। সোনা ও রুপার মতো মূল্যবান ধাতুর দাম এ বছর তিন শতাংশ বাড়তে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির প্রত্যাশায় উচ্চ মূল্যের এসব ধাতব পণ্যের মূল্য বাড়বে। বিশ্বে এ বছর খাদ্যশস্য, ভোজ্য তেল এবং অন্যান্য খাবারের দাম বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। আবাদ কম হওয়া এর একটি বড় কারণ। চলতি বছরের শুরুতে এল নিনো বায়ুপ্রবাহের কারণে মধ্য আমেরিকার কলা উৎপাদন এবং আর্জেন্টিনার সয়াবিন উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিশ্ববাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি। ২০১৪ সালে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের ব্যাপক দরপতনের ফলে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর অর্থনীতি পরিবর্তন হতে শুরু করে। ব্যাপক হারে আয় কমে যাওয়ায় তেলনির্ভর দেশগুলো তাদের বাজেটে কাটছাঁট করে। একই সঙ্গে দেশগুলোর বেসরকারী অর্থনৈতিক কর্মকা-ও কমে যায়। আয়বৈষম্য বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাও কিছু তেলনির্ভর দেশে দেখা যায়। বিশ্ব ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস প্রসপেক্ট গ্রুপের ডিরেক্টর আয়হান কোস উল্লেখ করেন, বেশিরভাগ তেল উত্তোলনকারী দেশ আর্থিক চ্যালেঞ্জে রয়েছে।
×