ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

শেয়ারবাজারে জড়িত কাউকে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় নিয়োগ ঠিক নয়

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

শেয়ারবাজারে জড়িত কাউকে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় নিয়োগ ঠিক নয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ধস-পরবর্তী শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের দুই মেয়াদে সময়সীমা শেষ হচ্ছে। ইতোমধ্যে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনকে ফের দুই বছরের জন্য পুনর্নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কমিশনার আমজাদ হোসেন আগামী ৩০ মে বিদায় নিচ্ছেন। আরেক কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামী দুই দফায় ৭ বছর পূর্ণ সত্ত্বেও দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছেন। এমতাবস্থায় শূন্য হতে যাওয়া নিশ্চিত ১টি ও দোদুল্যমানসহ ২টি পদে শেয়ারবাজারের স্বার্থে শেয়ার ব্যবসায় জড়িত কাউকে নিয়োগ দেয়া ঠিক হবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বিএসইসির বর্তমান কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামী ২০১১ সালের ৪ মে ও মোঃ আমজাদ হোসেন একই বছরের ৩০ মে যোগদান করেন। যাদের ২ দফায় নিয়োগের ৭ বছর পূর্ণ হতে চলেছে আগামী ৩ মে ও ২৯ মে। এদের মধ্যে মোঃ আমজাদ হোসেন আগামী ৩০ মে বিদায় নেবেন বলে জানিয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন। আর হেলাল উদ্দিন নিজামি আরেক দফায় পুনর্নিয়োগ পেতেও পারেন আবার নাও পারেন। এ হিসাবে বিএসইসিতে একজন কমিশনার নিয়োগ দিতে হবে তা নিশ্চিত। আর হেলাল উদ্দিন নিজামীর আরেক দফায় পুনর্নিয়োগ না হলে, ২ জন কমিশনার নিয়োগ দিতে হবে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এমন কোন ব্যক্তিকে বিএসইসিতে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া উচিত না। অন্যথায় স্বার্থের সংঘাত (কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট) হবে। কারণ যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে শেয়ার ব্যবসায় জড়িত ব্যক্তি তার স্বার্থের কথা ভাববেন। এছাড়া শেয়ার ব্যবসায় জড়িত থাকার কারণে বিভিন্ন নেটওয়ার্ক বা বিভিন্নজনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। যেগুলোও সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলবে। তিনি আরও বলেন, ইকোনমিক, ফাইন্যান্স, এ্যাকাউন্টস ব্যাকগ্রাউন্ড ভাল এমন ব্যক্তিকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। যার সততা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই এবং স্বাধীনচেতা। যে চাপের মুখে নতি স্বীকার করবে না। দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড এ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সভাপতি দেওয়ান নুরুল ইসলাম বলেন, একাডেমিকভাবে অভিজ্ঞদের পাশাপাশি বাস্তবিক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদেরও বিএসইসিতে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে নিয়োগ কমিটির মাধ্যমে এই কাজ করা যেতে পারে। অতিত রেকর্ড ভাল এমন কাউকে বেছে কমিটি নিয়োগ দেবে। তবে এক্ষেত্রে শেয়ারবাজারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের না দেয়াই ভাল হবে। কারণ ওই ব্যক্তি অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না বা দুর্বলতা কাজ করবে। যেটাকে বলে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। তবে শেয়ারবাজারের সঙ্গে এক সময় জড়িত থাকলেও ৩-৫ বছর ধরে নেই এমন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, সাবেক কমিশনার আরিফ খান বিএসইসিতে যোগদানের আগে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ছিল এবং পরও সেখানেই ফিরে গেছে। এক্ষেত্রে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হয়েছে। যা অন্যসব দেশে হলে সম্ভব হতো না। তাই কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া উচিত। দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট এ্যান্ড ম্যানেজম্যান্ট এ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সাবেক সভাপতি এএসএম শায়খুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজার অর্থনীতির একটি বড় জায়গা এবং ভবিষ্যত অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এমতাবস্থায় শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) যোগ্য ও সৎ কমিশনারের কোন বিকল্প নেই। সার্চ কমিটির মাধ্যমে যাছাই করে এই যোগ্য ও সৎ কমিশনার নিয়োগ করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, যেসব ব্যক্তি শেয়ারবাজার বা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে চাকরিরত, তাদের কমিশনে নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। অন্যথায় কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হবে।
×