ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

দিশেহারা কৃষক

কুড়িগ্রামে বোরোক্ষেত নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৪ এপ্রিল ২০১৮

কুড়িগ্রামে বোরোক্ষেত নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রামের বিভিন্ন ক্ষেতে বোরো ধানে ব্লাস্ট আক্রমণে শত-শত কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এর কারণে ধানের শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে। ধানের গাছে শীষ থাকলেও শীষে নেই পরিপূরক ধান। এতে করে ফলন নিয়ে শঙ্কিত বোরো চাষীরা। আবহাওয়াকেই দায়ী করছে কৃষি বিভাগ। কুড়িগ্রাম জেলায় এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ১১ হাজার ৮৪২ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৪৭ হেক্টর। ফলন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ লাখ ৬১ হাজার ৯১৫ মেট্রিক টন। এরমধ্যে হাইব্রিডে ৪ দশমিক ৭৬ মে. টন, উফশি ব্রিধান-২৮ এ ৩ দশমিক ৯৩ মে. টন এবং স্থানীয়তে এক দশমিক ৯৪ মে. টন। এরমধ্যে জেলায় ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে ২ দশমিক ৫৫ হেক্টর অর্থাৎ ১৫ বিঘা উফশি ব্রিধান-২৮ ধান। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে শতশত একর ফসলী জমির কৃষকদের। বোরো ধান ক্ষেতে শীষ বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই ব্লাস্ট ভাইরাসে আক্রমণে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ধানক্ষেত। এতে ধান দেখা গেলেও ধানের ভিতরে নেই কোন চাল। ফলে চিটে হচ্ছে ফসল। প্রথমে শীষের গোড়া পচে যায়। এতে করে ধান গাছের উপরি অংশে রস পৌঁছতে না পারায় তা দানা পুষ্ট হতে পারে না। শুকিয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে শীষ বের হওয়া ধানক্ষেত। কুড়িগ্রামের উলিপুরের বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে আধা-পাকা ধানের সমারোহ। বাম্পার ফলনের আশা কৃষকের। কিন্তু কৃষকের মুখে সে হাসি যেন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। নেক-ব্লাস্ট ছত্রাকের কারণে ধানক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে কীটনাশক ওষুধ ছিটিয়ে কোন কাজ হচ্ছে না। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, সব জাতের ধানক্ষেতে এ ছত্রাক আক্রমণ করেনি। বিশেষ করে ব্রি-২৮ জাতের ধানক্ষেতে এ ছত্রাক আক্রমণ করেছে। সোমবার জেলার উলিপুর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক জমিতে নেক-ব্লাস্ট ছত্রাক আক্রমণ করেছে। এসব জমির ধানের শীষ সাদা হয়ে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষকরা তাদের ক্ষেতের ধান দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে অনেক কৃষক সর্বশান্ত হয়ে পড়বে। গুনাইগাছ ইউনিয়নের পূর্ব কালু ডাঙ্গা গ্রামের কৃষক কবির উদ্দিন, আব্দুল ওহাব, আবুল হোসেনের এক বিঘার ধানক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। ওই এলাকার দলবাড়ি, পুটিগাড়ি ও নাউয়ার ডোবা বিলের প্রতিটি ২৮ জাতের জমিতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষক কমল উদ্দিন জানালেন গতবার তার ৩ একর জমির ২৮ জাতের সম্পূর্ণ ধানক্ষেত ব্লাস্ট রোগে নষ্ট হয়ে যায়। ওই ইউনিয়নের কাঁঠালবাড়ি এলাকার কৃষক পঙ্কজ সরকার বলেন, তার এক একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ওষুধ দিয়েও কোন কাজ হয়নি। তবে রামধন গ্রামের ভোলা মাস্টার ও রাজবল্লভ গ্রামের তিতু মাস্টারসহ ১৫-২০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, তাদের জমিতে নেক-ব্লাস্ট ছত্রাক আক্রমণ করেছিল, সময়মতো কীটনাশক স্প্রে করাতে অনেক কমে গেছে। এছাড়া উপজেলার দলদলিয়া, থেতরাই, বজরা, হাতিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ধানক্ষেতে নেক-ব্লাস্ট ছত্রাকের আক্রমণ লক্ষ করা গেছে। উপজেলা কৃষি আফিসার অশোক কুমার জানান, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে। তবে চলতি মাসের ২৫ তারিখ থেকে আগামী মাসের ৩ তারিখ পর্যন্ত ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। তাই যেসব জমির ধান ৮০ ভাগ পেকেছে সেসব কৃষক ভাইদের তা দ্রুত কর্তনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা স্টেনজা, ট্রুপার, সেলটিমা, উল্কা, নোভিটা ওষুধ জমিতে স্প্রে করার পরও ক্ষেত রক্ষা করতে পারছে না। কুড়িগ্রামের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ জানান, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় পাতা ব্লাষ্ট, গিট ব্লাস্ট এবং নেক ব্লাস্ট ভাইরাসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে ক্ষেত। এজন্য কৃষকদেরকে জমিতে পানি ধরে রাখা এবং ধানের শীষ বের হবার আগে ও পরে দু’বার স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
×