ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

চীনের এক্সিম ব্যাংকে ৪৩ কোটি ডলারের চাহিদাপত্র

পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রের অর্থায়ন নিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রের অর্থায়ন নিশ্চিত

রশিদ মামুন ॥ পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রের অর্থায়ন নিশ্চিত (ফাইন্যান্সিয়াল ক্লোজার) হয়েছে। চীনের এক্সিম ব্যাংকে সোমবার ৪৩ কোটি ডলারের চাহিদাপত্র (ইনভয়েস) পাঠিয়েছে বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। এর মধ্য দিয়ে দেশের মেগা কয়লাচালিত বিদ্যুত প্রকল্পগুলোর মধ্যে প্রথম পায়রা-১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের অর্থ দেশে আসছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির ৩৮ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। চীনের আর্থিক সহায়তায় দেশটির যৌথ অংশীদারিত্বে বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে। পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর ঘিরে যে বিশাল উন্নয়ন কর্মকা- চলছে সেখানে এই বিদ্যুত কেন্দ্রটির অগ্রগতি সব থেকে বেশি। সরকার এই প্রকল্পকে ‘সুপার ফাস্ট প্রজেক্ট’ আখ্যা দিয়েছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে। আগামী জুলাই থেকে কেন্দ্রের যন্ত্রাংশ বাংলাদেশে আসবে। তখন থেকেই তা সংযোজনও শুরু হবে। আশা করা হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করতে পারবে। বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম সোমবার বিকেলে ফাইন্যান্সিয়াল ক্লোজারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আজই (সোমবার) ৪৩ কোটি ডলারের ইনভয়েস এক্সিম আমরা ব্যাংককে পাঠিয়েছি। পর্যায়ক্রমে বাকি অর্থ ছাড় করবে চীন। তিনি জানান, এক্সিম ব্যাংক বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণে এক দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে। এই ঋণের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে আসবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৭টি হিসাব (এ্যাকাউন্ট) খোলা হয়েছে। যার মধ্যে নয়টি হিসাব ইউএসডি এ্যাকাউন্ট রয়েছে। চীনা এক্সিম ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংক হিসেবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক কাজ করছে। সবগুলো এ্যাকাউন্ট স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকেই খোলা হয়েছে। বিসিপিসিএল সূত্র জানায় আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুত কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে আগামী ২০১৯ সালের জুন মাসে আর দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসবে একই বছর ডিসেম্বরে। বিদ্যুত কেন্দ্রের ইউনিট প্রতি উৎপাদন ব্যয় হবে ছয় টাকা ৬৫ পয়সা। চীন, অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে বিদ্যুত কেন্দ্রটির জন্য কয়লা আমদানি করা হবে। কেন্দ্রের কয়লা সরবরাহের জন্য ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে বিসিপিসিএল। বিদ্যুত কেন্দ্রের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ের দিকে রয়েছে। চলতি বছর মাঝামাঝি সময় থেকে বিদ্যুত কেন্দ্রের মূল যন্ত্রাংশ সংযোজন শুরু হবে। আগামী বছর জুনের মধ্যেই প্রথম ইউনিটর নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, বিদ্যুত কেন্দ্রটির সঞ্চালন লাইন নির্মাণে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি পিজিসিবি কিছুটা পিছিয়ে ছিল। আগামী বছর বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের আগেই তাদের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ হলেও জুনের মধ্যে সাবস্টেশন নির্মাণ কাজ শেষ হবে কি না সে বিষয়ে আশঙ্কা রয়েছে। তবে ডিসেম্বরে দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসার আগেই সাবস্টেশন নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছে পিজিসিবি। বিদ্যুত কেন্দ্রটির সমান অংশীদারিত্ব রয়েছে দেশীয় কোম্পানি নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনা কোম্পানি চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি) বিদ্যুত কেন্দ্রের সমান অংশীদার। কেন্দ্র নির্মাণে ২০ ভাগ অর্থ দুই রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বিনিয়োগ করছে বাকি ৮০ ভাগ ঋণ দিচ্ছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। বিদ্যুত কেন্দ্রটির দরপত্রেই ঠিকাদারকে ঋণ সংস্থানের আগে ১৫ ভাগ অর্থ খরচ করার শর্ত দেয়া হয়েছিল। অর্থাৎ এখন ৩৫ ভাগ অর্থের কাজ চলছে। বিদ্যুত কেন্দ্রের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে সাধারণত ৩০ ভাগ অর্থের বেশি খরচ হয় না। বাকি অর্থ বিদ্যুত কেন্দ্রর যন্ত্রাংশ আমদানিতে ব্যয় করা হয়। বিদ্যুত কেন্দ্রের যন্ত্রাংশ আমদানির প্রক্রিয়া এর মধ্যে শেষ করা হয়েছে। দেশে চুক্তি হওয়া কেন্দ্রের মধ্যে পায়রার পাশাপাশি কাজ চলছে রামপাল-১৩২০ মেগাওয়াট এবং মাতারবাড়ি-১২০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের। রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রটি ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানির (এনটপিসি) সঙ্গে সমান অংশীদারিত্বে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) নির্মাণ করছে। প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করছে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। কেন্দ্রটির মালিকানা বাংলাদেশ সরকারের। কেন্দ্রটি জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে।
×