ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

চৈতালি সন্ধ্যায় গান ও কবিতায় বৈশাখী উৎসব

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৩ এপ্রিল ২০১৮

চৈতালি সন্ধ্যায় গান ও কবিতায় বৈশাখী উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শহরের চারপাশে সাজ সাজ রব বিরাজমান। হাতছানি দিচ্ছে বাঙালীর শিকড়সন্ধানী উৎসব। জাতিসত্তার সুন্দরতম প্রকাশে চলছে নানা আনন্দযজ্ঞের প্রস্তুতি। আজ শুক্রবারের রাতটি পেরোলেই কাল শনিবার প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। তাই নববর্ষের আবাহনী বারতায় এখন বর্ণিল যান্ত্রিক নগরী ঢাকা। নববর্ষের আগেই রাজধানীতে শুরু হয়েছে বর্ষবরণের আয়োজন। সেই সুবাদে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত বৈশাখ উৎসব। এ দিন সন্ধ্যায় সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় এ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। লালমাটিয়ার বেঙ্গল বইয়ে অনুষ্ঠিত এ উৎসবের প্রতিপাদ্য ‘পরান ভরি দাও’। পঞ্চকবির গান, যন্ত্রসঙ্গীত, কবিতা আবৃত্তি, লোকসঙ্গীত ও বাউল গানে সাজ্জিত চার দিনের আয়োজনটি চলবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। শহুরে সংস্কৃতিপ্রেমীদের মন রাঙ্গানো অনুষ্ঠানটি পহেলা বৈশাখ চলবে দিনব্যাপী। বাকি দিন সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হবে অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার চৈতালী সন্ধ্যায় বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থী শিল্পীদের সরোদ বাদনে শুরু হয় অনুষ্ঠান। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মোহময় সুরে শ্রোতার অন্তরে ছড়ায় স্নিগ্ধতা। পরিবেশিত হয় রাগ ভুপালী। সরোদের শব্দধ্বনি থামতেই গান আর কবিতার যুগলবন্দী পরিবেশনায় এগিয়ে যায় প্রথম দিনের আয়োজন। গানের ফাঁকে ফাঁকে কবিতাপাঠ কিংবা কবিতাপাঠের মাঝে বেজেছে সঙ্গীতের সুর। দরদিয়া কণ্ঠে গান শুনিয়েছেন শারমিন সাথী ইসলাম। গেয়েছেন পঞ্চকবির গান। ভেসে বেড়িয়েছে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, দ্বিজেন্দ্রলাল, অতুল প্রসাদ ও রজনীকান্ত সেনের সুর। তার গাওয়া কয়েকটি গানের শিরোনাম ছিল ‘রসঘন শ্যাম’, ‘কেউ ভোলে না কেউ ভোলে’, ‘রসিয়া বিজনবনে’, ‘তুমি যে প্রাণের বধূ’ ও ‘কাঁদালে তুমি মোরে’। কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে আবৃত্তি করেছেন বাচিকশিল্পী হাসান আরিফ। পাঠ করেছেন রবীন্দ্র-নজরুলসহ সমকালীন কবিদের কবিতা। মানবিক উজ্জীবনের প্রত্যাশায় আয়োজিত এ উৎসবের দ্বিতীয় দ্বিতীয় আজ শুক্রবার। এ দিন সন্ধ্যায় শ্রোতাদের সময় চেতনার গান শোনাবে জনপ্রিয় সঙ্গীতদল জলের গান। শনিবার পহেলা বৈশাখে দিনব্যাপী আয়োজনে পরিবেশিত হবে পথিক বাউলের গান। রবিবার উৎসবের সমাপনী দিনের সন্ধ্যায় লোকগান শোনাবেন হালিমা পারভীন ও ভজন বাউল। কবিতাপাঠের আসর ‘চির বসন্তের চিঠি’ ॥ কবিরা স্বকণ্ঠে পাঠ করলেন স্বরচিত কবিতা। কখনও আবার বাচিকশিল্পীরা কণ্ঠে তুলেন প্রিয় কবির কবিতা। এভাবেই কবিতার শিল্পীত বিদায়ী বসন্তলগ্নের সন্ধ্যাটি হয়ে উঠল দারুণ উপভোগ্য। কবিতানুরাগীদের হৃদয় রাঙ্গিয়ে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হলো ‘চির বসন্তের চিঠি’ শীর্ষক কবিতাপাঠের আসর। ল্যাব এইড ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে কবিতার সঙ্গে ছিল সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আয়োজনের শুরুতেই ‘ওহে গৃহবাসী’ গানের সুরে নাচ করে স্পন্দনের নৃত্যশিল্পীরা। এরপর শুরু হয় সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্ব। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। সভাপতিত্ব করেন ল্যাব এইড গ্রুপের চেয়ারম্যান সালেহা আহমেদ। আলোচনা পর্ব শেষে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, রুবী রহমান, জাহিদুল হক, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, অসীম সাহা, কাজী রোজী, কামাল চৌধুরী, মোহমা¥দ সাদিক, মুহাম্মদ সামাদ, আসাদ মান্নান, কামরুজ্জামান কামু ও শিহাব শাহরিয়ার। কবিতা আবৃত্তি করেন সৈয়দ হাসান ইমাম, আশরাফুল আলম, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ও ডালিয়া আহমেদ। সবশেষে কবিতা থেকে সুরারোপিত গান শোনান লুৎফর হাসান ও গাজালা মাহমুদ। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসব আজ ॥ সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নাট্যচর্চার তাগিদে যুক্ত হলো একঝাঁক তরুণ। গড়ে উঠল নাট্যদল নাগরিক সম্প্রদায়। ১৯৭৩ সালে দেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাটক মঞ্চায়ন করে নাট্যদলটি। নাটক মঞ্চায়নের সাড়ে চার দশক ও প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আজ শুক্রবার থেকে দলটির আয়োজনে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী নাট্য উৎসব। বিকেলে রাজধানীর মহিলা সমিতির আনন্দ অঙ্গনে এ উৎসবের উদ্বোধন হবে। আয়োজনের মধ্যে রয়েছে নাট্য সৃজনশীলতায় নাগরিক প্রণোদনা ঘোষণা এবং সৈয়দ শামসুল হক ও খালেদ খান স্মৃতি সম্মাননা ঘোষণা। সুরের ধারার বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রবিষয়ক সেমিনার ॥ সুরের ধারার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলছে চার দিনের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনে ছিল রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক সেমিনার। সন্ধ্যায় ছিল সুরের ধারার শিল্পী ও প্রথিতযশা শিল্পীদের একক ও সমবেত কণ্ঠে গান ও অতিথিদের বক্তৃতা। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রথম অধিবেশনে প্রবন্ধ পাঠ ও আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ব ভারতীর উপাচার্য সবুজকলি সেন। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশ্বজিৎ ঘোষের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুরের ধারার চেয়ারম্যান রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক আজিজুর রহমান তুহিন ও ভারতের কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়।
×