ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকের আগ্রাসী ঋণে লাগাম টানার সময়সীমা আরও শিথিল

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ১০ এপ্রিল ২০১৮

ব্যাংকের আগ্রাসী ঋণে লাগাম টানার সময়সীমা আরও শিথিল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকগুলোর আগ্রাসী ঋণে লাগাম টানার সময়সীমা আরও শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর এডিআর নির্দেশিত মাত্রায় নামিয়ে আনার সময়সীমা ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। সোমবার এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা দেশের সব তফসিলী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই নিয়ে দু’দফা সময়সীমা বর্ধিত করল বাংলাদেশ ব্যাংক। সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোর আগ্রাসীভাবে ঋণ বিতরণ ঠেকাতে ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) কমিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জুনের মধ্যে এডিআর সীমা কমিয়ে আনতে বলা হয়। চলতি বছরের ৩০ জুন এ নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সার্কুলার অনুযায়ী, সাধারণ ব্যাংকগুলোর জন্য সর্বোচ্চ ৮৩ দশমিক ৫০ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোর এডিআর ৮৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। যাদের এর চেয়ে বেশি আছে তাদের জুনের মধ্যে নামিয়ে আনতে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু ব্যাংকগুলোর দাবির মুখে এর তিন সপ্তাহ না যেতেই গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রথমধাপে এই সময়সীমা ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঐ নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, আগের নির্দেশনার আংশিক পরিবর্তন করে পরিপালনের সময়সীমা ৩০ জুনের পরিবর্তে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুনঃনির্ধারণ করা হলো। এ ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি বা তার পূর্বে ব্যাংক কর্তৃক গ্রাহকের অনুকূলে প্রদত্ত কমিটমেন্ট বর্ণিত সময়সীমার মধ্যে অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর ফান্ডেড ঋণে পরিণত হলে এবং এর এডিআর/আইডিআর সাময়িক বৃদ্ধিজনিত বিষয়টি সার্কুলারের নির্দেশনার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করা হবে না। তবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তা সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে। কিন্তু এই সময়সীমা আরও বাড়ানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করে ব্যাংক মালিকরা। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংক মালিকদের সংগঠন ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি)-র যৌথ বৈঠকে নগদ জমার হার হ্রাসের পাশাপাশি এডিআর সমন্বয়ে সময়সীমা বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। এর প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় দফায় এডিআর সমন্বয়ে আরও সময় দিয়ে সোমবার সার্কুলার জারি করল বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংকগুলোকে তাদের এডিআর নির্দেশিত মাত্রায় নামিয়ে আনার কার্যক্রম ২০১৯ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়া এডিআর নির্দেশিত মাত্রার চেয়ে উচ্চতর থাকা ব্যাংকগুলোর জন্য পূর্বতন কমিটমেন্টের সূত্রে বা নতুনভাবে কোন ঋণ যোগান বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক এ্যাসেট-লায়াবিলিটি ম্যানেজমেন্ট (এএলএম) গাইডলাইন্সে নির্দেশিত অন্যান্য সূচকসংশ্লিষ্ট শৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ না হলে তা অবশ্য পরিহার্য হবে। এ বিষয়ে ব্যাংকের ট্রেজারি এবং অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও নিরীক্ষা বিভাগের মাধ্যমে সতর্ক ও কার্যকর নজরদারি বজায় রাখায় কোন ধরনের শৈথিল্য ও বিচ্যুতি ব্যাংকের উর্ধতন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দ্বারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে। একইসঙ্গে এডিআর নির্দেশিক মাত্রা অতিক্রান্ত থাকা ব্যাংকগুলোর জন্য নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বিধিসম্মত মাত্রায় নামিয়ে আনার কর্মপরিকল্পনা আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগে দাখিল করতে হবে। এছাড়া এ বিষয়ে অগ্রগতির মাসিক প্রতিবেদনও প্রতি মাসান্তের ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিভাগে দাখিল করার কথা বলা হয়েছে সার্কুলারে। সার্কুলারে আরও বলা হয়, এডিআর নির্দেশিত সীমার মধ্যে থাকা ব্যাংকগুলোর জন্যও নতুন ঋণ মঞ্জুর ও যোগান কার্যক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারিকৃত এএলএম গাইডলাইন্সের নির্দেশিত শৃঙ্খলার যথাযথ অনুসরণের কার্যকর সতর্ক নজরদারি অবশ্য পরিপালনীয় হবে।
×