ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ি বরাদ্দে অনিয়ম

দুদকের ১৫ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা আবেদন হাইকোর্টে খারিজ

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৬ এপ্রিল ২০১৮

দুদকের ১৫ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ  করা আবেদন হাইকোর্টে  খারিজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারের ১৮টি পরিত্যক্ত বাড়ি বরাদ্দে অনিয়ম করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ১৫টি মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রাজউক অফিসারের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে বিচারিক আদালতে সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসসহ আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা চলতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। অন্যদিকে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমই-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদারসহ সাতজনকে অন্তবর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। এর ফলে তাদের কারা মুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চগুলো এ আদেশ প্রদান করেছেন। সরকারের ১৮টি পরিত্যক্ত বাড়ি বরাদ্দে অনিয়ম করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ১৫টি মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রাজউক অফিসারের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় দেন। আদালতে রাজউকের তৎকালীন অফিসার কাজী রিয়াজুল মনিরের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। আইনজীবী খুরশিদ আলম খান জনকণ্ঠকে জানান, ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মামলাগুলো করা হয়েছিল। বিচারিক আদালতে মামলাগুলো সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু হাইকোর্টের রুলসহ স্থগিতাদেশ থাকায় বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের জারি করা ওই রুল খারিজ করে দেয়ায় এসব মামলা চলতে আর কোন বাধা থাকল না। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সরকারী ১৮টি পরিত্যক্ত বাড়ি সাজানো দরপত্র ডেকে অস্বাভাবিক কম দামে বিক্রির অভিযোগে ২০০৭ সালের মার্চে সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাসসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা করে দুদক। মামলায় ওই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র দেয়া হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাজানো দরপত্রের মাধ্যমে এবং প্রকৃত দামের চেয়ে কম দাম দেখিয়ে ১৮টি সরকারী বাড়ি বিক্রি করে আসামিরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। এতে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ১২৭ কোটি ৬৪ লাখ ১৯ হাজার টাকা। অভিযোগপত্রে আরও ১৪ আসামির নাম যুক্ত হয়। তাদের বিরুদ্ধে সুবিধা আদায়ের অভিযোগ তোলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ঢাকার বিশেষ জজ-৩ আদালতে বিচারাধীন ১৫টি মামলায় বিনা দরপত্রে ১৮টি সরকারী বাড়ি বিক্রি সংক্রান্ত ১২৭ কোটি ৬৪ লাখ ১৯ হাজার ৫৯ টাকা দুর্নীতির অভিযোগে আসামি মির্জা আব্বাসসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন এ আদালতের তৎকালীন বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন। অভিযোগ গঠনের আদেশে উল্লেখ করা হয়, ‘পরিত্যক্ত বাড়ি নম্বর এনডব্লিউ (আই)-৬, রোড নম্বর-৫৩, গুলশান, ঢাকার নিলাম দরপত্র আহ্বান করা হয়। বাড়ি নম্বর কে-৬, সড়ক নম্বর-৮৯, গুলশান, বাড়ি নম্বর সিএনজি-১৬, সড়ক-১১৩, গুলশান, বাড়ি নম্বর বি-৫, সড়ক নম্বর-১১৩, গুলশান, বাড়ি নম্বর-১২০, সড়ক-২, পুরাতন ধানমন্ডি, বাড়ি নম্বর-১৩৯, সড়ক নম্বর-২, ধানমন্ডি, বাড়ি নম্বর-৫৪০/এ (পুরাতন), সড়ক নম্বর-১২, ধানমন্ডি, বাড়ি নম্বর-৫৪০/বি (পুরাতন), সড়ক নম্বর-১২ (পুরাতন), বাড়ি নম্বর-৭২৩/এ (পুরাতন), সড়ক নম্বর-১৪ (পুরাতন), বাড়ি নম্বর-৭২৩/বি, সড়ক নম্বর-১৪ ধানমন্ডি, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ১৭ নম্বর ও ১৮ নম্বর কলেজ স্ট্রিট, বাড়ি নম্বর-৭/১, নওরতন কলোনি, শান্তিনগরসহ সর্বমোট ১৮টি পরিত্যক্ত বাড়ি রাজউক কর্তৃক সাজানো দরপত্রে কারচুপি ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ পছন্দের ব্যক্তিদের পাইয়ে দিয়ে প্রকারান্তরে নিজে লাভবান হয়ে সরকারের ১২৭ কোটি ৬৪ লাখ ১৯ হাজার ৫৯ টাকার অর্থের ক্ষতি সাধন করেন। ৭ জনের জামিন ॥ তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমই-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদারসহ সাতজনকে অন্তবর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। এর ফলে তাদের কারা মুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। বৃহস্পতিবার তাদের পক্ষে করা জামিন আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আজ শ্রমিক নেতাদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আনজারুল হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোরশেদ। এর আগে গত ১ এপ্রিল সভাপতি মন্টু ঘোষসহ আটজন নেতা ঢাকার মহানগর হাকিম মিজানুর রহমানের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। আদালত মন্টু ঘোষের জামিন মঞ্জুর করলেও বাকিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এবার হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেন তারা। কারাগারে থাকা মামলার সাত আসামি হলেন- টিইউসির সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম মিন্টু, আন্তর্জাতিক সম্পাদক মঞ্জুর মঈন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাজেদুর রহমান শামীম, টিইউসির গাজীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জালাল হাওলাদার, সাভার আশুলিয়া শাখার সভাপতি লুৎফর রহমান এবং টিইউসির কেন্দ্রীয় সদস্য মোঃ শাহজাহান।
×