ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে প্রাধান্য পাবে রোহিঙ্গা ইস্যু

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ৬ এপ্রিল ২০১৮

ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে প্রাধান্য পাবে রোহিঙ্গা  ইস্যু

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ, ফিলিস্তিন সমস্যা, মুসলিম উম্মাহর চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন বিষয় ঢাকায় অনুষ্ঠেয় ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৫তম সম্মেলনে প্রাধান্য পাবে। এছাড়া এই সম্মেলনে অংশ নিতে আসা প্রতিনিধিদের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। ওআইসি সম্মেলনের বিষয়ে অবহিত করার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকার বিভিন্ন মিশনের কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এসব জানিয়েছেন। ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৫তম সম্মেলন আগামী ৫-৬ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন মিশনের কূটনীতিকদের ব্রিফিং করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ব্রিফিংয়ে সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, মিসর, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, কানাডা, ফিলিস্তিন, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশের কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ, আগা খান ইন্টারন্যাশনাল, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা যোগ দেন। ব্রিফিংয়ের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ৪৫তম ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের বিষয়ে কূটনীতিক ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের অবহিত করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কূটনীতিকদের জানান, এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘টেকসই শান্তি, সংহতি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ইসলামী মূল্যবোধ’। এই সম্মেলনে ফিলিস্তিন ইস্যু, মুসলিম উম্মাহর চ্যালেঞ্জ, শান্তিপূর্ণ মুসলিম বিশ্ব, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ, রাখাইনের সংখ্যালঘু মুসলিমদের মানবিক সঙ্কট ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য পাবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ বর্তমানে রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলা করছে। ওআইসি সম্মেলনে অংশ নিতে আসা প্রতিনিধিদের জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে। যেসব প্রতিনিধি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করতে চাইবেন, তারা সেখানে যেতে পারবেন। সম্মেলন সফলের লক্ষ্যে কূটনীতিকদের সহায়তা প্রত্যাশা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রায় সাড়ে তিন দশক পর এ নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাদেশ ওআইসির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কোন সম্মেলনের আয়োজন করতে চলেছে। এই সম্মেলন সামনে রেখে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ১৯৮৩ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় আসন্ন এ সম্মেলন থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারে দেশের মাটিতে বড় ধরনের সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। গত বছর মে মাসে আইভরি কোস্টের আবিদজানে ৪৪তম সম্মেলনে ওআইসিভুক্ত সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশে ৪৫তম সম্মেলন হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র, ওআইসির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ ওআইসি ট্রয়কার অংশ এবং আগামী তিন বছরের ওআইসির ৮ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য হয়। এবারের ওআইসির সম্মেলন ঢাকায় হওয়ায় এর গভীর তৎপর্য রয়েছে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকার্তারা। তারা বলেছেন, সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করবে ওআইসি। আন্তর্জাতিক ফোরামগুলো রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় যেভাবে সোচ্চার রয়েছে, ঠিক এমন সময়ে এই ধরনের বড় আয়োজন বাংলাদেশকে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে। সম্মেলন থেকে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা নিজ নিজ দেশের অবস্থান আরও দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করবেন এবং সেখান থেকেও একটি রেজ্যুলেশন পাস হবে। এতে করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আরও সহজতর হবে। সব মিলিয়ে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা ঘনীভূত হবে।
×