ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বৈশাখী উৎসব

বর্ণিল আয়োজনে এবার আগেভাগেই প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৩১ মার্চ ২০১৮

বর্ণিল আয়োজনে এবার আগেভাগেই প্রস্তুতি

সমুদ্র হক ॥ এবার অনেকটা আগেভাগেই নববর্ষ বরণের আয়োজন শুরু হয়েছে। বর্ণিল বৈশাখী উৎসবের রেশ এখন ঘরে ঘরে। মনে হবে ঈদের আমেজ। বৈশাখী কেনাকাটাও একটু করে বাড়ছে। বগুড়া নিউ মার্কেটের দোকানি নুরুল ইসলাম বললেন, এবার তাড়াতাড়ি বৈশাখী পণ্য কেনার হিড়িক পড়েছে। ঠাহর করতে না পারায় বৈশাখী পণ্য ঠিকমতো তোলা হয়নি। দ্রুত অর্ডার দিতে হচ্ছে। বগুড়ার সবচেয়ে বড় শপিং মল টাচ এ্যান্ড টেকের স্বত্বাধিকারী গ্রুপের রেজাউল বারী ঈসা বললেন, প্রতিদিনই বৈশাখী কেনাকাটার ভিড় বাড়ছে। সাধারণত চৈত্রের শেষের দিকে গতি আসে। এবার তা অনেক আগেই এসেছে। ছোটদের বর্ণিল পোশাক, মেয়েদের শাড়ি, ছেলেদের পোশাকের মধ্যে পাঞ্জাবির প্রাধান্য বৈশাখী আনন্দের সঙ্গে মিশে গেছে। কি শহর, নগরী কি গ্রামে প্রতিটি বাড়িতেই নানা আয়োজন। বৈশাখের দিনে খাদ্য তালিকায় কি থাকবে তা আগে থেকেই নির্ধারণ করা হচ্ছে। মৃৎ শিল্পীরা ছোটদের খেলনাপাতি আগেই বানিয়ে হাট-বাজারে নিয়ে যাচ্ছে। তারা অপেক্ষা বৈশাখী মেলার। এবারের বৈশাখী মেলার আয়োজন নগর ছাড়িয়ে গ্রাম পর্য়ায়েও নেয়া হচ্ছে। বগুড়ার সোনাতলার রানীরপাড়া গ্রামের বাসেত আলী জানালেন, বাঙালী নদীর তীরে পুরানো খেয়াঘাটে এবার মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। নববর্ষ বরণের সবচেয়ে বড় আনন্দ মেলা। বগুড়া নগরীর আর্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা শোভাযাত্রাকে বর্ণাঢ্য করতে শিল্প শোভিতভাবে বাঙালীর ঐতিহ্যের সামগ্রী তৈরি করছে। কুমোরবাড়িগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে। তাদের একদ- ফুরসত নেই। মৃত্তিকা শিল্পকে কতভাবে উপস্থাপন করা যায় তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ছোট্টমণিদের মাটির খেলনাপাতি, ফলফলাদি, বড়, মাঝারি, ছোট ফুলদানি নক্সি করা কলসি, ঠিলা গৃহস্থালি হাঁড়িপাতিলসহ নানা সামগ্রী বৈশাখী মেলার জন্য তৈরি করা হচ্ছে। বগুড়া নগরীতে মেলার প্রস্তুতি নিয়েছে বগুড়া থিয়েটার। তারা প্রায় তিনযুগ ধরেই মেলার আয়োজন করে। এখন মাঠে বোরো আবাদের শেষ সময়। কৃষক দ্বিতীয় দফায় টপড্রেসিং (নিবির পরিচর্যা) নিয়ে ব্যস্ত। দিনাকয়েক পরে বৈশাখের আনন্দের ঢেউ পড়ায় চৈত্রের রোদের মধ্যেও তাদের ক্লান্তি নেই। গ্রামের ঘরদোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ শুরু করে দিয়েছে গাঁয়ের বধূরা। আঙিনা, উঠান (বহির্আঙ্গিনা) মাটি পানিতে গুলিয়ে কাপড়ের ন্যাকড়া দিয়ে লেপে ঝকঝকে করবে তারা। শহুরে জীবনে শখের পান্তাভাতের আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে যুক্ত হওয়া ইলিশ মাছ কেনার প্রস্তুতিও নিচ্ছে অনেকে। বৈশাখের আগে দাম বাড়তে পারে এমন শঙ্কায় অনেকে ইলিশ কিনে রেফ্রিজারেটরে রেখে দিচ্ছে। গ্রামের জীবনমান উন্নত হওয়ায় পান্তাভাতও বৈশাখের প্রথম দিনের আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। একটা সময়ে গ্রামের পাথারে, বটতলা, হাটখোলা, খেয়াঘাটে বৈশাখের দিনে মেলা বসত। এখন গ্রামে আগের মতো বটগাছ দেখা যায় না। গ্রামীণ সড়কে সেতু নির্মিত হওয়ায় খেয়াঘাটও কমে গেছে। প্রতিটি খেয়াঘাটের কাছেই থাকে ঢুলিদের আবাস। বৈশাখের আনন্দে ঢুলিরাও ঢোল বাজিয়ে উৎসব করে। এখন সেই ঢুলিদেরও আকাল। ঢোলবাদকরা ব্যান্ড পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তারপরও বগুড়ার গ্রামগুলোতে বৈশাখী আয়োজন চলছে।
×