ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদাকে বিদেশে পাঠানোর দাবি

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৩১ মার্চ ২০১৮

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদাকে বিদেশে পাঠানোর দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উন্নত চিকিৎসার জন্য কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর দাবি জানিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি জানান। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতির আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারের কাছে তাকে অবিলম্বে জামিনে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানান। ফখরুল বলেন, বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে গিয়ে আমার দেখা করার কথা থাকলেও পরে কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তা স্থগিত করা হয়। কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে খালেদা জিয়া অসুস্থ। তবে আমাদের নেত্রী কি ধরনের অসুস্থ তা সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের জানানো হয়নি। এতে আমরা উদ্বিগ্ন। এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা শঙ্কা প্রকাশ করছি। আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি, এখন তার নিঃশর্ত মুক্তি চাই। মুক্তি পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দেশে না বিদেশে হবে। যেহেতু তিনি এর আগে দেশের বাইরে চিকিৎসা করিয়েছেন, সেহেতু মুক্তি পেলে তিনিই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। প্যারোলে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, আমরা প্যারোলে মুক্তির কথা বলিনি। আমরা বলেছি তাকে মুক্তি দিতে হবে। তার জামিন হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এখন তাকে মুক্তি দেয়া যেতে পারে। মুক্তি তার প্রাপ্য। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য আমাদের স্পষ্ট প্রস্তাব রয়েছে। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক যারা রয়েছেন তাদের দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসকদের সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য সর্বোত্তম ব্যবস্থা হচ্ছে, যেটা তার প্রাপ্য তাকে জামিনে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন খালেদা জিয়াকে নির্জন কারাগারে রেখে সরকার মানসিক নির্যাতন করছে। তাকে যে পরিবেশে রাখা হয়েছে, তাতে স্বাস্থ্যের আরও অবনতির আশঙ্কা করছি আমরা। তিনি আগে যে চিকিৎসাগুলো নিয়েছেন, তা বিদেশে নিয়েছেন। তার ফলোআপ করাটা জরুরী। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার খাবারটাও যথাযথ পরীক্ষা করে দেয়া হচ্ছে না। উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া কি ধরনের অসুস্থ তা এখন পর্যন্ত বিএনপি বা কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। তবে আইনজীবীরা এর আগে বিভিন্ন সময়ে আদালতকে বলেছেন, ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্র, চোখ ও হাঁটুর সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে তিনি বিভিন্ন ওষুধ খান। এ ছাড়া খাবারও তিনি বেছে বেছে খান। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয় খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা কয়েকবার কারাগারে গেলেও কারাফটক থেকে তাদের ফেরত আসতে হয়। কারা কর্মকর্তারা তাদের বলেন, প্রয়োজন হলে তারাই খবর দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠাকুরগাঁওয়ে গিয়ে যে ভাষায় সমালোচনা করেছেন, তাতে ভোট বাড়বে দাবি করে আনন্দ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। এ সময় হাসতে হাসতে ফখরুল বলেন, আমি মিষ্টি পাঠাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে। আমার অনেক উপকার করেছেন তার জন্যে। তিনি আমার অনেক ভোট বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ সময় হাসতে হাসতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা যারা আছি ঈর্ষান্বিত’। কারণ, এভাবে উনাকে স্পন্সর করবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী! দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী হাসতে হাসতে বলেন, ‘আন্ডারহ্যান্ড ডিলিং আছে কিন্তু!’ ড. মোশাররফ আবারও বলেন, ‘শেরেবাংলা এক সময় বলতেন, যদি হিন্দুরা তার সমালোচনা না করত, উনাকে গালাগালি না করত, সবাইকে তিনি জিজ্ঞাসা করতেন, আমার রাজনীতি ভুল হইতেছে কিনা, ওরা গালাগাল দেয় না ক্যান? সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ প্রমুখ। এদিকে মির্জা ফখরুলের সংবাদ সম্মেলনের পর তার বক্তব্য একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য রাখেন সেখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, কারাগারে অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে এবং কারামুক্তির পর খালেদা জিয়া দেশে নাকি বিদেশে চিকিৎসা করাবেন সে বিষয়ে তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে কিছু কিছু সংবাদমাধ্যমে মহাসচিবের এই বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রচার করা হয়। এতে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। খালেদাকে ছাড়া সরকারের নির্বাচনী পরিকল্পনা ভুল- মওদুদ ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ছাড়া সরকারের নির্বাচনী পরিকল্পনা ভুল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশের মাটিতে কোন দিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে না। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট নামক সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। মওদুদ বলেন, ঠাকুরগাঁও আমাদের দলের মহাসচিবের নির্বাচনী এলাকা। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার আমাদের মহাসচিবের কঠোর সমালোচনা করেছেন। বিএনপি মহাসচিব নাকি মিথ্যা কথা বলেন। এতে একটা লাভ হয়েছে, আমাদের মহাসচিবের ভোট অনেক বেড়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মওদুদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে ছয়বার সংসদে আক্রমণ করেছেন। আমরা কী আপনার সমতুল্য? আপনি হলেন প্রধানমন্ত্রী। আসলে আপনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন নাই। এ কারণে আপনার মনে দুর্বলতাটা রয়ে গেছে। মওদুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারী সুবিধা নিয়ে ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন জেলায় গিয়ে ভোটের প্রচার চালাচ্ছেন। এগুলো সবই অনৈতিক ও নির্বাচন কার্যবিধির পরিপন্থী। তিনি যদি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নিজ খরচে জনসভা করে ভোট চাইতেন, তাহলে কারও কিছু বলার ছিল না। মওদুদ বলেন, মিথ্যাচার কাকে বলে তা বাংলাদেশে না এলে কেউ বুঝবে না। মিথ্যা এ দেশের সর্বোচ্চ লেভেলে, এমনকি জুডিসিয়ারিতেও এখন মিথ্যাচার স্থান পেয়ে গেছে। মিথ্যাকে সত্য বলা হচ্ছে, সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে মওদুদ বলেন, যতই ষড়যন্ত্র করেন, যতই খালেদা জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত করেন, কোন লাভ হবে না। তিনি মুক্ত হয়ে দেশের মানুষের কাছে ফিরে আসবেন। তাকে কারাগারে রেখে যদি নির্বাচন করার চিন্তা করেন, তাহলে আপনারা বিরাট পলিটিক্যাল মিস ক্যালকুলেশন করছেন। তিনি বলেন, এ সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এজন্য তারা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক তা চায় না। তিনি বলেন, বাকশাল এবং সামরিক শাসন আমলগুলোর চেয়েও বর্তমান সরকারের শাসনকাল নিকৃষ্টমানের। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সাহাদাত হোসেন সেলিম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, নিপুণ রায় চৌধুরী, ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান প্রমুখ। একদলীয় শাসনের জন্যই খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানো হয়েছে- খসরু ॥ একদলীয় শাসনের কাজটি পরিপূর্ণ করতে এবং গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্যই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাগপা আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আমির খসরু বলেন, একদলীয় শাসন প্রতিহত করতে পারেন এক ব্যক্তিই, তিনি হচ্ছেন খালেদা জিয়া। তিনি হলেন গণতন্ত্রের মা। সতাই দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্যই খালেদা জিয়াকে জেলে রাখা হয়েছে। উনাকে ধ্বংস করতে পারলে, উনার দল ধ্বংস হয়ে যাবে, দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে এবং একদলীয় শাসনের কাজটি পরিপূর্ণ হবে। আমির খসরু বলেন, সরকারের এক মন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে। আমরা খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথাই জানলাম না, এর মধ্যে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার কথা চলে আসছে। সরকারের কথাবার্তায় তাদের উদ্দেশ্য জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। জাগপা সভাপতি অধ্যাপিকা রেহানা প্রধানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম, এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার প্রমুখ।
×