ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

আসামিকে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২৮ মার্চ ২০১৮

আসামিকে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, ২৭ মার্চ ॥ বরগুনার আমতলী উপজেলার কথিত ইদি আমিন হত্যা মামলায় এক নিরপরাধ আসামিকে গ্রেফতারের পর ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে নির্যাতন ও ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী আদায়ের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই মামলার এজাহারভুক্ত ১১নং আসামি স্ত্রী সাজেদা বেগম লিখিতভাবে এ অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছর ৬ জানুয়ারি বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার, গুলিশাখালী ইউনিয়নের বাজারখালী গ্রামের মৃত আবদুল রশিদ মৃধার ছেলে স্থানীয় লোকজনের কাছে সন্ত্রাসী ও মাদক সেবনকারী হিসাবে পরিচিত ইদি আমিনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। বাজারখালী সাইক্লোন সেন্টারের বারান্দা থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইদি আমিনের মৃতদেহ কোন ধরনের আঘাতের চিহ্ন ছিল না। স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে, নিহতের স্ত্রী সৌমির সঙ্গে কোন প্রকার আলোচনা না করে নিহতের ভাই ইয়ামিন মৃধাকে বাদী করে এবং ইদি আমিনের কয়েক ঘনিষ্ঠজনদের সাক্ষী করে সাংবাদিক পরিবার ও তার কয়েক স্বজনকে পূর্ব বিরোধের জের হিসাবে হয়রানির উদ্দেশে থানায় একটি সাজানো হত্যা মামলা দায়ের করেন। ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জনকণ্ঠের সাংবাদিক মোকলেছুর রহমানের ছোট ভাই আসাদুজ্জামান। ২০১৬ ইউপি নির্বাচনে তিনি নুরুল ইসলামের সঙ্গে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। মূলত এর জের ধরেই ইদি আমিনের কথিত হত্যার ঘটনায় আসাদুজ্জামানকে ১নং ও সাংবাদিক মোকলেছুর রহমানকে ৫নং, তার ভাই মানবকণ্ঠের চীফ রিপোর্টার সিদ্দিকুর রহমান, তার আশি উর্ধ বাবা, ছোটি ভাই, ভাগ্নেসহ একই পরিবারের ৮ জনসহ মোট ১২ জনকে আসামি করা হয়। (মামলা নং ১২, তারিখ ০৭/০১/২০১৭ ইং) । এই মামলায় পুলিশ তিন জনকে সন্দেহ ভাজন হিসাবে আটক করে। ইদি আমিনের কথিত হত্যা মামলার প্রধান আসামি আসাদ মৃধাসহ ওই আসামিদের গ্রেফতারের পর পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসা বাদ করে। দীর্ঘ ৬ মাস তদন্ত করে। এক এজাহারভুক্ত আসামিসহ তিন সন্দেহ ভাজনকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোন প্রকার অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। পরবর্তীতে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের প্রত্যক্ষ তদবিরে মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিবি পুলিশ মামলাটি ৭ মাস তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। পুলিশ ও ডিবির দীর্ঘ তদন্ত ও নিহত ইদি আমিনের স্ত্রী সৌমির সন্দেহ ওই ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের দিকে। তাদের ধারণা নুরুল ইসলাম নিজেই প্রতিপক্ষ ওই সাংবাদিক পরিবারকে হয়রানি করতেই ইদি আমিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করাতে পারেন! ইদি আমিন হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত মোঃ আসাদুর রহমান ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে এই মিথ্যা মামালা প্রত্যাহারের দাবিতে ইতিমধ্যে জেলার সর্বত্র পোস্টার, লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি উঠেছে। ঠিক তখনই ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নিজেকে আড়াল করতে আরেকটি জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে ডিবি পুলিশকে দিয়ে এক নাটক সাজিয়েছেন। ইদি আমিনের কথিত হত্যা মামলার ১১ নং আসামি মোকলেছুর রহমান গ্রেফতার করে। ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে, ইলেকট্রিক শক দিয়ে আদালতে মিথ্যা জবানবন্দী দেয়াতে বাধ্য করে। তার স্ত্রী সাজেদা বেগম লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম তার সঙ্গে সরাসরি দেখা করে বলেন, “তোমার স্বামী খুন করেনি এটা আমি জানি, তোমার স্বামীকে খবর দিয়ে এলাকায় আসতে বলো ডিবির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। চার্জশীট থেকে তোমার স্বামীর নাম বাদ দেয়া হবে, এলাকায় ব্যবসা করার জন্য কিছু আর্থিক সাহায্য করা হবে”। সাজেদা বেগম তার স্বামীকে এ কথা জানালে, তিনি স্ত্রী সন্তানদের কাছে চলে আসে। মোখলেছুর রহমানের গ্রামে আসার বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নিশ্চিত হয়ে, ডিবি পুলিশ দিয়ে তাকে গ্রেফতার করায় এবং শারীরিক নির্যাতন ও ইলেকট্রিক শক দিয়ে, তাদের শেখানো কথা আদালতে বিচারকের সামনে বলতে বাধ্য করে। মোখলেছুর রহমানের স্ত্রী সাজেদা বেগম, বরগুনা জেলহাজতে দেখা করতে গেলে মোখলেছুর রহমান তাকে জানান, তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের শিখানো কথা না বললে তাকে মেরে ফেলা হতো। তার নির্দেশে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় ডিবি পুলিশ। আদালতে গিয়ে বিচারকের সামনে তাদের শেখানো কথা না বললে পুনরায় ডিবি পুলিশের কার্যালয় এনে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। জীবন বাঁচাতে আদালতে বিচারকের সামনে তাদের শেখানো বলেন।
×