ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতে এনামুলের জবানবন্দী

ফয়জুরের পরিবারের সবাই ধর্মান্ধ জঙ্গী মতাদর্শী

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২১ মার্চ ২০১৮

ফয়জুরের পরিবারের সবাই ধর্মান্ধ জঙ্গী মতাদর্শী

শংকর কুমার দে ॥ বিশিষ্ট লেখক ও সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যাচেষ্টায় তার ওপর হামলাকারী ফয়জুর হাসানের পরিবারের সবাই উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ জঙ্গী মতাদর্শী। এ ধরনের তথ্যের কথা প্রকাশ পেয়েছে জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় হামলাকারী ফয়জুরের ভাই এনামুল হাসান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে। জবানবন্দী দেয়ার পর আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সিলেট মহানগর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (তৃতীয়) আদালতের বিচারক হরিদাস কুমার এর কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী নেয় হামলাকারীর ভাই এনামুল হাসান। জাফর ইকবালকে হত্যা চেষ্টায় ফয়জুর হাসান হামলা করার সময়ে ছাত্র-শিক্ষকের হাতে ধরা পড়ার তার মোবাইল ফোন, ট্যাব নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় এনামুলকে। এনামুল কেন হামলাকারী ভাই ফয়জুরের মোবাইল ফোন, ট্যাব নিয়ে পালিয়ে গেছে তার বর্ণনা দিয়েছে আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, হামলাকারী ফয়জুরের ভাই এনামুলকে ৮ দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হলে সে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেন। জাফর ইকবালকে হত্যাচেষ্টায় তার ভাই ফয়জুর হামলার ঘটনার পর এনামুল কী কারণে সিলেট ছাড়ে এবং তার ভাই ফয়জুর মোবাইল ফোন ও ট্যাব কোন কাজে ব্যবহার করতো, এসব তথ্যও আদালতকে জানিয়েছে জবানবন্দীতে। এর আগে গত ১৩ মার্চ এনামুল হাসানকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তার ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ৮ মার্চ গাজীপুর থেকে এনামুলকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর আগে রবিবার আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে হামলাকারী ফয়জুর হাসান। গত ১৫ মার্চ একই আদালতে জবানবন্দী দেন ফয়জুরের বাবা মাওলানা আতিকুর রহমান। এ হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরা হলেন ফয়জুর হাসান, তার বাবা আতিকুর রহমান, মা মিনারা বেগম, মামা ফজলুর রহমান, ভাই এনামুল হাসান ও ফয়জুরের বন্ধু সোহাগ মিয়া। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে দেখা যায়, একমাত্র বন্ধু সোহাগ ছাড়া সবাই হামলাকারী ফয়জুরের পরিবারের সদস্য। ফয়জুলের পরিবারের সবাই যে উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ জঙ্গী মতাদর্শী তার প্রমাণ দেয় তাদের গ্রেফতার, রিমান্ড, জিজ্ঞাসাবাদ, জবানবন্দীতে। গত ৩ মার্চ বিকেলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মুক্তমঞ্চে একটি অনুষ্ঠান চলাকালে ড. জাফর ইকবালকে পেছন থেকে মাথায় ছুরিকাঘাত করে ২৪-২৫ বছর বয়সী ফয়জুর। হামলার পরপরই ফয়জুরকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। হামলার দিন রাতেই ফয়জুরদের বাড়ি থেকে তার মামা ফজলুর রহমানকে আটক করা হয়। এছাড়া তাদের গ্রামের বাড়ি থেকে আটক করা হয় তার এক চাচাকে। এরপর গত ৪ মার্চ রাতে ফয়জুরের বাবা আতিকুর রহমান ও মা মিনারা বেগম সিলেট মহানগরের জালালাবাদ থানায় আত্মসমর্পণ করেন। গত ৮ মার্চ সন্ধ্যা ৬টার দিকে পুলিশ গাজীপুর এলাকা থেকে এনামুলকে গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার এনামুল আদালতে জবানবন্দী দেয়ার পর আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাফর ইকবালকে হত্যাচেষ্টায় হামলাকারী ফয়জুর হাসানের বাবা, মা, ভাই, মামাই শুধু উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ জঙ্গী মতাদর্শী নয়, তার চাচারাও সালাফি বা আহলে হাদিস মতবাদের অনুসারী। তাদের প্রভাবে প্রথমে সালাফি মতবাদের অনুসারী হয়ে ওঠে জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ফয়জুল হাসান ওরফে ফয়জুর। দাখিল পাসের পরপরই পরিবর্তন দেখা যায় তার আচরণে। ধর্মীয় নানা বিধিনিষেধ মানতে শুরু করে কঠোরভাবে। অনলাইনে জড়িয়ে পড়ে জঙ্গীবাদের মতাদর্শে। গাজীপুর থেকে তার ভাই এনামুলকে আটকের পর হামলাকারী ফয়জুরের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এবং ট্যাব থেকে যোগাযোগের তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। হামলকারী ফয়জুলের মোবাইল ফোন, ট্যাব পরীক্ষা করে দেখা গেছে এতে উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ জঙ্গী মতাদর্শের বিভিন্ন হুজুরদের ওয়াজ ও ইসলামের শত্রুদের কতল বা খতম করার জন্য জিহাদের আহ্বান। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, হামলাকারী ফয়জুলের ধর্মান্ধ পরিবারে বেড়ে ওঠার কারণে দুই বছর আগে ২০১৬ সালে পাল্টাতে শুরু করে সে। তখন থেকেই সে অনলাইনে আহলে হাদিস সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখালেখি পড়ে এবং একপর্যায়ে কট্টরপন্থী হয়ে যায়। সেলফ র‌্যাডিক্যালাইজড হয়ে যাওয়ার পর সে প্রাথমিক ধাপেই জাফর ইকবালকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সালাফি বা আহলে হাদিস থেকে জঙ্গীবাদে যোগ দেয়ার পর হামলাকারী ফয়জুর নিজের পরিবারেও জঙ্গীবাদের দাওয়াত দেয়। জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ফয়জুল হাসান জঙ্গী মতাদর্শের হয়ে ওঠার নেপথ্যে তার পরিবারের উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধতার বিষয়টি কাজ করেছে বলে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দাবি।
×