ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী

দেশের প্রত্যেক নাগরিক ট্যাক্স কার্ড পাবে

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১৯ মার্চ ২০১৮

দেশের প্রত্যেক নাগরিক ট্যাক্স কার্ড পাবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো দেশের প্রত্যেক নাগরিককে ট্যাক্স কার্ড দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি মনে করেন, এমন উদ্যোগ ব্যক্তিগত পর্যায়ে করদাতাদের উৎসাহিত করবে এবং তারা সামাজিকভাবেও সম্মানিত হবেন। এর ফলে রাজস্ব আহরণও বাড়বে। অর্থমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি এক টাকাও ট্যাক্স দেন, তার জন্যও ট্যাক্স কার্ড করা হবে। আগামী অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতির সঙ্গে আলাপকালে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রবিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে এই প্রাক-বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এতে সভাপতিত্ব করেন। এতে বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং সদস্যরা অর্থমন্ত্রীকে আগামী বাজেটে করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানো, কর ব্যবস্থার সংস্কার করে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা, ব্যক্তিগত আয়ের সর্বোচ্চ শ্রেণীর জন্য করের পরিমাণ কমানো, সব নাগরিকের জন্য ট্যাক্স কার্ডের প্রচলন করার তাগাদা দেন। এর পাশাপাশি শিক্ষা খাতের দুরবস্থা, শিক্ষার গুণগত মান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি, চিকিৎসক সঙ্কট ইত্যাদি বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। স্বাচিপের নাম ভাঙ্গিয়ে কর্মস্থলে থাকেন না ডাক্তাররা ॥ আলোচনায় সরকারপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নাম ভাঙ্গিয়ে ডাক্তাররা কর্মস্থলে থাকেন না বলে অর্থমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি। জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি বলেন, কঠোর নির্দেশনা সত্ত্বেও চিকিৎসকরা গ্রামে থাকেন না। উচ্চশিক্ষার অজুহাত এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) পরিচয়ে চিকিৎসকরা কর্মস্থলে থাকেন না। ঢাকায় চলে আসেন। জেলা এবং উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসকদের থাকতে না চাওয়ার প্রবণতা নতুন নয়। নানা সময় সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েও এই প্রবণতায় রাশ টানতে পারেনি। সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা হাসপাতাল থাকতে না চাইলে চাকরি ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানান ডাক্তারদের। কিন্তু এরপরেও পরিস্থিতির বলার মতো উন্নতির প্রমাণ মেলেনি। আলোচনায় সিমিন হোসেন রিমি ছাড়াও আরও কয়েকজন সংসদ সদস্য নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় চিকিৎসক সঙ্কটের কথা তুলে ধরেন। সিমিন হোসেন রিমি চিকিৎসকদের উপজেলায় না থাকার প্রবণতা ঠেকাতে আরও কঠোর এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান। গাজীপুরে নিজের এলাকার পরিস্থিতি তুলে ধরে রিমি বলেন, দেশের শ্রেষ্ঠ উপজেলা হাসপাতালগুলোর মধ্যে আমার উপজেলা কাপাসিয়ার অবস্থান আট নম্বরে। এত ভাল অবস্থানের পরেও আমার উপজেলায় চিকিৎসক ধরে রাখতে পারি না। গত নয় বছরে হাসপাতালে স্থায়ী কোন এ্যানেসথেসিস্ট (অবেদনবিদ) দিতে পারেনি। বাধ্য হয়ে আমি নিজের উদ্যোগে সপ্তাহে দুই দিন বাইরে থেকে এ্যানেসথেসিস্টের ব্যবস্থা করছি। ঢাকার খুব কাছে আমার উপজেলার যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে অন্য উপজেলাগুলোর চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক। চিকিৎসক সঙ্কট দূর করার জন্য সরকারকে গভীরভাবে বিষয়টি দেখতে হবে। ব্যাংক নির্বাহীদের বেতন কমানোর সুপারিশ ॥ ব্যাংকিং ব্যবস্থার দুরবস্থার কথা তুলে ধরে সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা সাম্প্রতিককালে আমেরিকায় অর্থনৈতিক মন্দার পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংকগুলোর একজন এক্সকিউটিভ, এমডি, সিইও, ডিএমডির বেতন ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। যেখানে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী প্রধানমন্ত্রীর বেতন সাকল্যে দুই লাখ টাকার মতো। ব্যাংকের নির্বাহীদের এই বেতন অস্বাভাবিক বেশি। এতে লাগাম টানা দরকার। হাছান মাহমুদ বলেন, কর জাল গত নয় বছরে বাড়লেও মাথাপিছু আয়ের তুলনায় করের আদায় কম। করের আদায় বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সবার জন্য বিনামূল্যে ট্যাক্স ফাইল করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে হাছান বলেন, ব্যক্তিগত ট্যাক্স উপরের দিকে অনেক বেশি। ফলে অনেকেই ট্যাক্স ফাঁকি দেন। এটা কিছুটা কমানো হলে অনেকেই ট্যাক্স দিতে উৎসাহিত হবেন। পরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, যারা ট্যাক্স দেবে তাদেরই ট্যাক্স কার্ড দেয়া হবে। সে একটাকা দিলেও। অনেক ব্যবসায়ী জনগণের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করলেও সরকারি কোষাগারে জমা দেয় না জানিয়ে হাছান বলেন, ভ্যাট আদায় বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম বিদ্যুত ও পানির অপচয় রোধ করতে সব জায়গায় সেন্সর প্রযুক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি করের হার কমিয়ে আনার তাগাদা দিয়ে তাজুল বলেন, এতে কর জালের আওতা বাড়বে এবং সবাই ট্যাক্স দিতে উৎসাহিত হবে। ব্যক্তিগত আয় পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত কর মওকুফের আবেদন জানান তাজুল। পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার উপকারিতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তাদের ট্যাক্স ছাড় দেয়া প্রয়োজন যাতে অন্যরা পরিবেশবান্ধব গ্রিন ফ্যাক্টরি করতে পারে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মীর শওকত আলী বাদশা উপকূলীয় মাছ চাষ উন্নয়নে আরও বেশি বরাদ্দের দাবি জানান। বাণিজ্যিকভাবে হরিণ চাষের অনুমতি দিতে সরকারে প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বাদশা বলেন, বাণিজ্যিকভাবে হরিণ চাষ করলে মাংসের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সুন্দরবনে চোরাই হরিণ শিকারের প্রবণতাও কমে আসবে। আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, সংসদ সদস্য মকবুল আহমেদ, সুবিদ আলী ভুঁইয়া, জাহিদ আহসান রাসেল, রেবেকা মোমেন প্রমুখ।
×