ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুবকের সম্পত্তি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:০০, ১৬ মার্চ ২০১৮

যুবকের সম্পত্তি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ অতি গোপনে যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির (যুবক) সম্পত্তি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। গ্রাহকের টাকায় কেনা সংস্থাটির ৪০টি বড় ধরনের সম্পত্তির কোন হদিস নেই। অন্যদিকে, নতুন করে আবাসন ব্যবসায় সক্রিয় হওয়ারও চেষ্টা চালাচ্ছে যুবক। জমি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নতুন করে গ্রাহকদের কাছ থেকে মাসিক কিস্তি হিসেবে আবারও টাকা নিচ্ছে সংস্থাটি। আইন অনুযায়ী, যুবকের রেজিস্ট্রেশন বাতিল থাকায় পুরো বিষয়গুলো অবৈধ। আমানত ফেরত না পেয়ে ধুকে ধুকে মরছে যুবকের সাড়ে তিন লাখ গ্রাহক। এত কিছুর পরও কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী জমি উদ্ধার ও সম্পত্তি রক্ষায় প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, গোপন করা সম্পত্তি পুনরায় বিক্রির জন্য ফের মাঠে নেমেছে যুবকের কতিপয় উদ্যোক্তা। সরকার গঠিত ‘যুবক সংক্রান্ত সর্বশেষ কমিশনের’ কাছে এ তথ্য গোপন করা হয়েছে। উল্লেখিত সম্পত্তির অবস্থান ও পরিমাণের হিসাবের তথ্য কোনটিই কমিশনকে দেয়া হয়নি। তথ্য অনুযায়ী, পুরনো গ্রাহকদের জমি দেয়ার নতুন প্রলোভন দিয়ে টাকা উত্তোলন করছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে জমি দেয়ার কথা বলে নতুন করে গ্রাহকদের কাছ থেকে কিস্তি নিচ্ছে যুবকের লোকজন। নতুন পরিকল্পনায় জেলা পর্যায়ে আড়াই লাখ টাকা ও ঢাকার আশপাশে তিন লাখ টাকায় ৩ কাঠার প্লট দেয়ার আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। অনেকেই এ প্রলোভনের কবলে পড়ছেন। এর মধ্যে সংগঠনটির সবচেয়ে বেশি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে পটুয়াখালী, বরিশাল, খুলনা, কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলায়। ঢাকার সম্পত্তিগুলো অতি গোপনে বিক্রি করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যুবকের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের সংগঠন জনকল্যাণ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাহমুদুল হোসেন মুকুল জনকণ্ঠকে বলেন, জমি দেয়ার নামে যুবক নতুন করে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করছে। নতুন করে আবার প্রতারণা শুরু করেছে যুবক। সাড়ে তিন লাখ গ্রাহকের ভাগ্য অনিশ্চয়তায় ফেলে আবার তারা নতুন গ্রাহক তৈরি করছে। না জেনে, না বুঝে এসব গ্রাহক মরণ ফাঁদে পা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশা করছি। পাশাপাশি গ্রাহকদের এ ধরনের ফাঁদে পা না দেয়ার জন্যও সতর্ক করছি। আমি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এদিকে, রফিকুল ইসলাম কমিশনের রিপোর্টের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে প্রগ্রেসিভ হাউজিং লিমিটেড, ফ্যান্টাসি রিয়েল এস্টেট, নিউ ফ্যান্টাসি রিয়েল এস্টেট, নারায়ণগঞ্জ, হাউজিং লিমিটেড, ভিক্টোরিয়া হাউজিং লিমিটেড, ময়মনসিংহ হাউজিং লিমিটেড, ইউনিক হাউজিং লিমিটেডের তথ্য কমিশনের কাছে গোপন করা হয়। এছাড়া যশোর রিয়েল এস্টেট, খুলনা রিয়েল এস্টেট, প্লান্টে প্রপার্টিজ ও বরিশাল হাউজিং লিমিটেডের সম্পত্তির তথ্য দেয়া হয়নি। পটুয়াখালী হাউজিং লিমিটেড, রাজশাহী হাউজিং লিমিটেড, কিংডম হাউজিং লিমিটেড, টিউলিপ হাউজিং লিমিটেড, ইয়ুথ এ্যালায়েন্স প্রপার্টি জের (পাবলিক) তথ্য গোপন করা হয়েছে। তথ্য গোপনের তালিকায় আছে- জেনারেল হাউজিং লিমিটেড, জে. এম. হাউজিং লিমিটেড, গ্রীন বাংলা হাউজিং লিমিটেড ও পল্লবী হাউজিং লিমিটেড। এছাড়া প্রকল্পের তথ্য গোপন করা হয় সৈকত প্রকল্প-১, ২, খেজুর তলা প্রকল্প, দ্য চিটাগাং ইলেক্ট্রনিক্স, জেসমিনাস এপার্টমেন্ট, কর্ণফুলী রিভারভিউ প্রকল্প, এসটিটি প্রপার্টিজ লিমিটেড, সেতু বন্ধন সিটি প্রকল্প, বারৈয়ার হাট প্রকল্প, মীরসরাই প্রকল্প ১, ২, চটগ্রাম উত্তর সিটি প্রকল্প-২, সীতাকু- প্রকল্প ১, ২, হাটহাজারী প্রকল্প-১, চটগ্রাম দক্ষিণ সিটি প্রকল্প-১, কুমিল্লা প্রকল্প, সীতা ভ্যালি প্রকল্প ও রোজ গার্ডেনের। অনুসন্ধানে জানা গেছে, উল্লেখিত সম্পত্তি এখন গোপনে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি সম্পত্তি দেয়ার নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে নতুন করে টাকা সংগ্রহ করছে। সম্প্রতি খুলনা শামছুর রহমান রোডে অবস্থিত এক বিঘার একটি সম্পত্তি আড়াই কোটি টাকায় বিক্রি করেছে যুবকের চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন ও নির্বাহী পরিচালক হোসাইন আল মাসুদ। এ সম্পত্তির বর্তমান বাজার মূল্য ৪০ কোটি টাকা। স্থানীয় গ্রাহকরা জানতে পারে আদালতে মামলা করার ফলে আদালত ৪৭৮১/১৭ কবলা দলিল বিক্রির কার্যক্রম স্থগিত করে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া চট্টগ্রামের সীতাকু- উপজেলায় যুুবক ফোনের টাওয়ার স্থানীয় এক চেয়ারম্যানের কাছে বিক্রি করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর পল্টনে বি কে টাওয়ার বিক্রির পাঁয়তারাও চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন ক্রেতা এই টাওয়ার কেনার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যুব কল্যাণ সোসাইটির সহ-সভাপতি আবুল বারী (বারেক) জনকণ্ঠকে বলেন, সম্পত্তি গোপনে বিক্রির পাশাপাশি নতুন করে যুবক তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। এসব বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া না হলে গ্রাহকরা বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন। ওই সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আবু তাহের বলেন, যুবকের গ্রাহকদের সম্পত্তি রক্ষায় সরকার প্রশাসক নিয়োগ না দেয়া এসব সম্পত্তি হাত ছাড়া হচ্ছে। সম্পত্তি বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তা বিক্রি করে দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে এ ব্যাপারে নজর দিচ্ছে না। তিনি বলেন, এসব সম্পত্তি বিক্রি করে যুবকের কর্তৃপক্ষ মালয়েশিয়া চলে যাবেন বলে তথ্য আছে আমাদের কাছে।
×