ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুগ্ধ খামারিদের সঙ্গে ব্র্যাকের প্রতারণা

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১৫ মার্চ ২০১৮

দুগ্ধ খামারিদের সঙ্গে ব্র্যাকের প্রতারণা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ক্রেতা নেই। নেই সংরক্ষণের ব্যবস্থা। কমে গেছে দাম। ফলে বিপাকে পড়েছেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বড় দুগ্ধ উৎপাদন খামার এবং চরাঞ্চলের প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র খামারি ও গাভী পালনকারীরা। লোকসানে পড়ে ইতোমধ্যে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। কম দামে গাভী বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। ফলে দারিদ্র্য এ জনপদের মানুষের দিন বদলের সম্ভাবনাময় খাতটি বন্ধের হুমকিতে পড়েছে। সাত বছর আগে উলিপুর উপজেলা সদরে ব্র্যাক দুগ্ধ শীতলকরণ কেন্দ্র স্থাপন করে দুধ কেনা শুরু করেছিল। এই কেন্দ্রটিকে ঘিরে একে একে গড়ে ওঠে বড় ৪৩টি দুগ্ধ উৎপাদন খামার। সেই সঙ্গে ৫৪টি চরাঞ্চলে দু’শতাধিক ক্ষুদ্র খামার গড়ে ওঠে। আর প্রান্তিক পর্যায়ে বেড়ে যায় গাভী পালন। দুধ বিক্রির নিশ্চয়তা এবং ভাল দাম পাওয়ায় সম্প্রসারিত হচ্ছিল খাতটি। কিন্তু আকস্মিকভাবে এক বছর আগে ব্র্যাক তাদের ক্রয় কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়ায় দুধের বাজারে ধস নামে। ক্রেতার অভাবে দাম কমতে-কমতে প্রতি লিটারের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকায় নেমে এসেছে। চরাঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। ফলে লোকসানে পড়েছেন খামারি-পালনকারীরা। বন্ধ হয়ে গেছে ২০টি খামার। ব্র্যাকের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় এখানকার দুগ্ধ শীতলকরণ কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানালেন ব্র্যাকের স্থানীয় শাখা ব্যবস্থাপক মোঃ রফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এক বছর হলো এটি বন্ধ আছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বর্তমানে এখানে দুধ কেনা-বেচা বন্ধ রয়েছে।’ দুধের ক্রেতা সঙ্কটে লোকসানে পড়ে অন্যদের মতো নিজের গড়ে তোলা খামারটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানালেন উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখানে ক্রেতা সঙ্কট দেখা দেয়ায় খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যেমন আমার প্রতিদিন দুইশ’ লিটার দুধ উৎপাদন হতো সেটি আমি বন্ধ করে দিয়েছি।’ এখানে দুগ্ধ উৎপাদন একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে গড়ে উঠছিল। এজন্য এখানে ক্রয় কেন্দ্র স্থাপন জরুরী হয়ে পড়েছে বলে জানালেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল আাজিজ প্রধান। তিনি বলেন, ‘এখানে যদি একটি বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয় তাহলে খামারিরা গাভী পালনে আগ্রহী হবে। নতুন নতুন খামার গড়ে উঠবে। যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে।’ মিল্কভিটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এখানে দুগ্ধ শীতলকরণ কেন্দ্র স্থাপনের অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মর্তুজা আল-মুঈদ। উপজেলার খামার ও প্রান্তিক পর্যায়ে পালিত উন্নত ও শংকর জাতের ৫ হাজার এবং দেশী জাতের ২৭ হাজার গাভী থেকে গত বছর ৯০ লাখ লিটারের মতো দুধ উৎপাদন হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৫ লাখ লিটার উদ্বৃত্ত ছিল বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর।
×