ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত আলোচনা ও প্রিয়াঙ্কা গোপের সঙ্গীতসন্ধ্যা

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ১৩ মার্চ ২০১৮

বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত আলোচনা ও প্রিয়াঙ্কা গোপের সঙ্গীতসন্ধ্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলছে অগ্নিঝরা মার্চ মাস। ঘুরেফিরে আসছে বাঙালীর অহঙ্কার মুক্তিযুদ্ধের কথা। সেই সূত্রে বারংবার উচ্চারিত হচ্ছে স্বাধীনতার মহান স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কীর্তিকথা। তেমনই এক আয়োজন অনুষ্ঠিত হলো সোমবার। বসন্ত বিকেলে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত আলোচনায় অংশ নিলেন বিশিষ্টজনরা। আর সন্ধ্যায় গানের সুরে সিক্ত হলো শ্রোতারা। সে আসরে গান শুনিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গোপ। জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী উদ্্যাপনের অংশ হিসেবে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন আমরা সূর্যমুখী। অনুষ্ঠানের আলোচ্য বিষয় ছিল ‘বঙ্গবন্ধুর সাংস্কৃতিক ভাবনা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’। এ বিষয়ে আলোচনা করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য দেন আমরা সূর্যমুখীর নির্বাহী পরিচালক শফিকুল ইসলাম সেলিম। সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময়ে তাঁর চেয়ে অনেক শিক্ষিত নেতা ছিলেন। কিন্তু জীবনের পাঠ তাঁর চেয়ে বেশি আর কেউ নিতে পারেননি। সাধারণ মানুষকে তিনি যেভাবে চিনতে পেরেছিলেন সেটা আর কেউ পারেননি। তিনি ছিলেন বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর। তার মতো মানবিক গুণাবলীও অন্য কারও ছিল না। মানুষের প্রতি এ ভালবাসার কারণেই তাঁর ডাকে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল এবং প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন ৩০ লাখ শহীদ। সব মিলিয়ে বলা যায়, বঙ্গবন্ধুর বিবর্তনের ইতিহাস হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাস। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ আজ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের অংশ। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণাও দিয়েছিলেন এই মার্চ মাসেই। এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী। হয়ে উঠেছেন এ দেশের সংস্কৃতির অগ্রপথিক। তাই বঙ্গবন্ধুর আচার-আচরণ, চলন-বলন ও মানসিকতাকে ধারণ করাই হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতি। আরেফিন সিদ্দিক বলেন, পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ প্রচার করতে দেয়া হয়নি। ইতিহাসের পাতা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল সাতই মার্চের ভাষণ। যা আমাদের আজও আলোড়িত করে। শিহরণ সৃষ্টি করে ধমনীতে। মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কারণ কেউ ভাবেনি, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হবে নিরস্ত্র বাঙালী। আলোচনা শেষে সুরের ¯্র্েরাতধারায় শ্রোতার অন্তরে প্রশান্তির পরশ ছড়িয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গোপ। পরিবেশন করেছেন দেশাত্মবোধক সঙ্গীত, নজরুলসঙ্গীত ও পুরনো দিনের গানসহ পনেরোটি গান। গেয়েছেন ‘আজ তবে এইটুকু থাক’, ‘আজি যে জলসা ঘরে’, ‘এখনো সারেঙ্গীটা বাজছে’, ‘আমি দূর হতে তোমাকেই’, ‘আমার মন বলে তুমি আসবে’, ‘সাগর সৈকতে’সহ নানা আঙ্গিকের গান। শিল্পকলায় লালন উৎসব ॥ গান ও আলোচনায় উঠে এলো মরমিসাধক লালন সাঁইজির জীবন ও দর্শন। সোমবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হলো লালন উৎসব। শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে লালন রিসার্চ এ্যান্ড কালচারাল ফাউন্ডেশন। বসন্তের সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত দুটি পর্বে বিভক্ত আয়োজনের শুরুতেই ছিল আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন লালন গবেষক ও নর্দান ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল করিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন দার্শনিক অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, বরেণ্য লালনসঙ্গীত শিল্পী ফরিদা পারভীন ও মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমেদ। প্রধান আলোচক ছিলেন লালন তত্ত্বসাধক বিনোদ শাহ ফকির। এ ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন বংশীবাদক গাজী আব্দুল হাকিম ও লালন গবেষক আবু ইসহাক। ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ড. বি এন দুলালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত ও শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন দুলাল গোমস্তা ও জিএম জোয়ার্দার। আলোচনায় বক্তারা-মহাত্মা লালন সাঁইজির নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়, লালনের জীবন ও দর্শনের গবেষণার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং স্কুল-কলেজের পাঠ্য বইয়ে লালন ফকিরের জীভন ও দর্শনের ওপর পাঠদানসহ বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। তারা বলেন, আজকে বিশ্বে যে অস্থিরতা চলছে, হানাহানি-মারামারি, মানুষে মানুষে বিভেদের যে দেয়াল তৈরি হয়েছে তা থেকে মুক্তি পেতে হলে লালন সাঁইজির দর্শন ও তার পথ অনুসরণ অত্যন্ত প্রয়োজন। কেননা, সাঁইজি সব সময় মানুষে-মানুষে মিলন চেয়েছেন। মানুষে-মানুষে কোন ভেদাভেদ দেখেননি, সকল মানুষ মিলেমিশে থাকুক এটাই সারাজীবন চেয়ে গেছেন। আলোচনা শেষে শুরু হয় সঙ্গীতানুষ্ঠান। এ পর্বে ছিল ফরিদা পারভীনের একক কণ্ঠে লালন সাঁইজির গান পরিবেশন এবং আবু ইসহাকের সেই গানের ওপর তাত্ত্বিক আলোচনা-বিশ্লেষণ। ফরিদা পারভীন গেয়ে শোনান- পারে লয়ে যাও আমায়, পারে কে যাবি নবীর নৌকাতে আয়, খাঁচার ভিতর অচিন পাখি, সেখানে সাঁইয়ের বারামখানা, বাড়ির পাশে আরশি নগরসহ প্রায় ২০টি গান।
×