ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজালালে মশামাছি তেলাপোকা নিধনে বিশেষ অভিযান

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১০ মার্চ ২০১৮

শাহজালালে মশামাছি তেলাপোকা নিধনে বিশেষ অভিযান

আজাদ সুলায়মান ॥ মশা-মাছি, তেলাপোকা ও ইঁদুর নিধনে বিশেষ অভিযানে নেমেছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এসব পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে সমন্বিত পদক্ষেপ। সিটি কর্পোরেশন ও বিমানবন্দরের কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে ত্রিমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। কমে এসেছে মশার উৎপাত। যাত্রী, দর্শক ও কর্মচারীদের পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে রক্ষায় দীর্ঘ ও স্বপ্ল মেয়াদী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কাজি ইকবাল করিম। সম্প্রতি ইঁদুরের আক্রমণে এক অতিথি আহত ও মশার কারণে একটি ফ্লাইট বিলম্বিত হওয়ার ঘটনায় জরুরী ভিত্তিতে এসব সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া হয়। জানা গেছে, শাহজালাল বিমানবন্দরের সমগ্র এলাকাকে আপাতত তিন ভাগে বিভক্ত করে জরুরী ভিত্তিতে পেস্ট কন্ট্রোলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিমানবন্দর টার্মিনাল ভবনের চারপাশের বাইরের খোলা জায়গায় প্রতি সন্ধ্যায় মশার ওষুধ ছিটানো শুরু হয়েছে গত ম্ঙ্গলবার থেকে। এ ক্ষেত্রে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন শুধু ওষুধ ও ফগার মেশিন সরবরাহ সহায়তা দিচ্ছে। আর জনবল ও গাড়ি দিচ্ছে সিভিল এভিয়েশন। উভয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বাইরের মশা নিধনের কাজ চলছে। বিমানবন্দরের মশার মূল প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে টার্মিনাল ভবনের পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিমের জলাশয় ও জঙ্গলকে। মূলত এখান থেকে মশা প্রতিদিন টার্মিনালের ভেতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন গেট দিয়ে। সেজন্য আপাতত বাইরের এলাকায় ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এমনকি রানওয়ে সংলগ্ন এয়ার সাইট ও বে-এরিয়ায় যেখানে উড়োজাহাজ পার্কিং করা হয়, তার আশপাশেও ছিটানো হচ্ছে ওষুধ। এতে বাইরের মশার উৎপাত অনেকটাই কমে এসেছে বলে জানিয়েছেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন কাজি ইকবাল করিম। এদিকে শাহজালাল বিমানবন্দরের নিজস্ব উদ্যোগে টার্মিনাল ভবনের প্রতিটি গেটে প্রতি সন্ধ্যায় জ্বালানো হচ্ছে ধূপ। একযোগে ৫০ পয়েন্টে ধূপের ধুঁয়োয় মশার মিছিল আর ভেতরে ঢোকার সুযোগ পাচ্ছে না। এতে একদিকে যেমন পরিবেশটা সুগন্ধময় হচ্ছে তেমনি মশার উৎপাত থেকেও স্বস্তি মিলছে। ধূপ জ্বালানোর আইডিয়া সম্পর্কেও চমৎকার তথ্য দিলেন পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কাজি ইকবাল করিম। বলেছেন, একযোগে ধূপ জ্বালানোর আইডিয়াটা আমার নয়; এটা আমাদের বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার স্যারের। তিনিই বিমানবন্দরের মশার উৎপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার এই কৌশল প্রয়োগের পরামর্শ দেন। সম্প্রতি তার এই কৌশল প্রয়োগ করা হয় বিমানবন্দরের লাগোয়া পশ্চিম দিকের খোলা জায়গায় একটি অনুষ্ঠানে। এভাবে ধূপ জ্বালিয়ে মশার উৎপাত থেকে অতিথিদের নিস্তার দেয়া হয়েছিল। স্যারের নির্দেশে শাহজালাল বিমানবন্দরেও প্রতিদিন সন্ধ্যায় জ্বালানো হচ্ছে ধূপ। এতে মশার আক্রমণ আর তেমন নেই বলা চলে। তারপরও টুকটাক কিছু থাকলে তা অসহনীয় নয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা যায় টার্মিনালের নিচের ভিআইপি গেটে ধূপ জ্বালানোর কাজ তদারকি করছেন শাহজালালের এফডব্লিউও মোঃ সেলিম মিয়া। তিনি নিজে উপস্থিতি থেকে অত্যন্ত সতর্কতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এই গুরুদায়িত্ব পালন করছেন। বিমানবন্দরের মতো স্পর্শকাতর স্থানে ধূপ জ্বালানোর কাজটি করতে হচ্ছে সর্বক্ষণিক নিরাপত্তা কর্মীদের উপস্থিতিতে। জনবলের অভাবে সেলিমকেই একাধিক শিফটে সকাল-সন্ধ্যায় কাজ করতে হচ্ছে। এতে সুফলও মিলছে। গ্রুপ ক্যাপ্টেন কাজি ইকবাল করিম বলেন, এই সেলিমের ওপরই এখন নির্ভর করতে হচ্ছে। তাকে একাই গোটা বিমানবন্দরের ধূপ জ্বালানোর মতো জটিল কাজ সামলাতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যাগেজ এরিয়ায় এপিবিএন সদস্যকে ধূপ জ্বালানোর তদারকি করার সহায়তা চাওয়া হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া একাকী কোন বিশেষ সংস্থার পক্ষে এ কাজ সামাল দেয়া দুরূহ। এদিকে তেলাপোকা ও ইঁদুরের উৎপাত থেকে রেহাই পেতে নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। আপাতত বিমানবন্দর টার্মিনাল ভবনের পাবলিক স্পেশ যেমন, চারটি ভিআইপি রুম, নিচের ও উপরের কনকর্স হল, চেকইন কাউন্টার,ইমিগ্রেশন ও ব্যাগেজ এরিয়ার কাজ করানো হবে আউট সোর্সিং করে। এ জন্য ইতোমধ্যে হিটম্যান পেস্ট কন্ট্রোল নামে একটি শীর্ষ কোম্পানিকে পরীক্ষামূলকভাবে তেলাপোকা ও ইঁদুর মারার দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আগামী মঙ্গলবার থেকে এসব পয়েন্টে হিটম্যান পেস্ট কন্ট্রোল কাজ শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শহীদ্ উল্লাহ পাটওয়ারি। অপর একটি সূত্র জানায়, এসবের পাশাপাশি টার্মিনালের বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান যেমন বলাকা,মসলিন,স্ক্ইা লাউঞ্জ, ইবিএল, এমটিবি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, স্পাইস রেস্টুরেন্ট, ডিউটি ফ্রি শপ ও এরোসসহ সব দোকানপাট এবং সব এয়ারলাইন্সের অফিস নিজ নিজ দায়িত্বে ভাল কোন পেস্ট কোম্পানি দিয়ে করানোর আদেশ জারি করা হতে পারে। আগামী মঙ্গলবার বিমানবন্দরের মাসিক সমন্বয় সভায় এসব প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানকে নিজ নিজ দায়িত্বে তেলাপোকা ও ইঁদুর মারার নির্দেশনা আসতে পারে বলে একটি সূত্র জানায়। জরুরী ভিত্তিতে এ ছাড়া আর কোন উপায় নেই বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরেরর এক কর্মকর্তা। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালক কাজি ইকবাল করিম বলেন, জরুরী ভিত্তিতে আপাতত কিছু পদক্ষেপ নিতেই হচ্ছে। পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার কাজও চলবে। কারণ শাহজালালে বর্তমানে কমপক্ষে ৮ লাখ স্কয়ার বর্গফুটের বিশালাকার জায়গার মশা-মাছি, তেলাপোকা মারার কাজ স্পট কোটেশনে সম্ভব নয়। এজন্য ইজিপি করতেই হবে। সেটা সময়সাপেক্ষ হবার। এরই মধ্যে ওই কাজের স্পেসিফিকেশন ঠিক করার কাজও চলছে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করার আগ পর্যন্ত জোড়াতালি দিয়েই শাহজালালকে রক্ষা করতে হবে মশা-মাছি, ইঁদুর ও তেলাপোকার আক্রমণ থেকে। বিশেষ করে ধূপ জ্বালানোর কাজটা চলতেই থাকবে। এতে সুফল মিলছে। সবাই ভালও বলছে।
×