ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশীয় প্লেনটির রহস্য জানা গেল না আজও

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৯ মার্চ ২০১৮

মালয়েশীয় প্লেনটির রহস্য  জানা গেল না আজও

আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল ও আশপাশের দ্বীপগুলোর কাছাকাছি জলসীমায় বিধ্বস্ত হওয়া বিমানের ধ্বংসাবশেষ ও যন্ত্রাংশ কিছুদিন পর পরই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। সম্ভবত এগুলো ২০১৪ সালের ৮ মার্চে নিখোঁজ হওয়া মালয়েশিয়ার এমএইচ-৩৭০ যাত্রীবাহী বিমানের খন্ডিত অংশ বলে অনেকের ধারণা। স্টার অনলাইন ও বিবিসি। চার বছর আগে যাত্রী ও ক্রুসহ ২৩৯ জনকে নিয়ে বিমানটি চীনের বেজিংয়ের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। বিমানযাত্রীদের অধিকাংশই ছিলেন চীনা নাগরিক। নিখোঁজের পর ১২টিরও বেশি দেশ সম্মিলিতভাবে মালাক্কা প্রণালী ও দক্ষিণ চীন সাগরের ৩৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে এর খোঁজে অনুসন্ধান তৎপরতা চালায়। কিন্তু এর কোন হদিশ পাওয়া যায়নি। এ সময় অনেকেই নানা ধরনের সম্ভাবনা ও নিখোঁজের পেছনে ষড়যন্ত্র তত্ত্বেরও অবতারণা করেন। কেউ কেউ বলেছিলেন বিমানটি ছিনতাই হয়েছিল। নাইজেল ক্যাথর্ন নামে এক ব্রিটিশ সাংবাদিক দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডের যৌথ সামরিক মহড়াকালে বিমানটি গুলিবিদ্ধ হয়। প্রায় একই ধরনের অভিমত প্রকাশ করেন মালয়েশিয়ার জনপ্রিয় নেতা মাহাথির মোহাম্মদ। তার মতে, বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর যোগসূত্র থাকতে পারে। তাই সকল সন্দেহ ভঞ্জন ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিরসনের জন্য সমগ্র বিশ্ব এই বিমান নিখোঁজের চার বছর পরও এটির কী পরিণতি হয়েছিল, কারা এর জন্য দায়ী তা জানার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) নিরাপত্তা বিষয়ক তদন্ত দল নিখোঁজ বিমানের অনুসন্ধান কার্যক্রম নিয়ে চতুর্থবারের মতো অন্তর্বর্তীকালীন বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে উদ্ধারকৃত ধ্বংসাবশেষের ওপর ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল প্রকাশিত এক তদন্ত রিপোর্ট সংযুক্ত ও প্রকাশিত হয়। এই রিপোর্ট প্রকাশ করা পর্যন্ত বিধ্বস্ত বিমানের তিনটি অংশ যে এমএইচ-৩৭০ বিমানের তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই তিনটি যন্ত্রাংশ হচ্ছে বিমানের বাম ও ডান ডানার দুটি ফ্ল্যাপারন (বিমানের গতি নিয়ন্ত্রণ ও ওঠানামার কাজে সহায়ক যন্ত্র) ও বাম ফ্ল্যাপের কিছুটা অংশ। এছাড়া কেবিন ক্রুদের ব্যবহার্য কিছু জিনিসও এতে পাওয়া গেছে। তবে এমএইচ-৩৭০ বিমানের মূল কাঠামো এখনও কোথাও কারও চোখে পড়েনি। কিন্তু মূল কাঠামো খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত এর আগে মালয়েশিয়ার আইসিএও তদন্ত রিপোর্ট ও অস্ট্রেলিয়ার ট্রান্সপোর্ট সেফটি ব্যুরোর (এটিএসবি) তদন্ত রিপোর্ট চূড়ান্ত বলে মেনে নিতে হয়। অস্ট্রেলীয় তদন্ত প্রতিবেদনে অনুসন্ধান কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য ও ইতিহাস এবং সেই সঙ্গে তদন্ত কর্মকান্ড সম্পর্কে কিছু সুপারিশ করে উপসংহার টানা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায় যে, অত্যাধুনিক যুগেও কীভাবে একটি বিশাল যাত্রীবাহী বিমান পূর্বদিকের গন্তব্য পথ ছেড়ে পশ্চিম দিকে রওনা হয় এবং বিধ্বস্ত হওয়ার চার বছর পরও তার হদিস পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে মার্কিন তদন্তকারীদের কথা অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হতে পারে। তারা বলেন, বিমানটি ভিয়েতনামের রাডার থেকে হারিয়ে যাওয়ার পর মালয় উপদ্বীপ ঘুরে পশ্চিম দিকের আকাশ পথে ৪/৫ ঘণ্টা সময় উড়ে থাকতে পারে। এই চার-পাঁচ ঘণ্টার উড়ন্ত গতিবেগে বিমানটি ভারত মহাসাগর বা আরব সাগরের কোথাও বিধ্বস্ত হতে পারে। মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক বলেন, নিখোঁজ বিমানে যে পরিমাণ জ্বালানি ছিল তাতে বিমানটি আরও ৭ ঘণ্টা উড়েছিল বলে ধারণা করা যায়। তাই যে কোনদিন বিমানের মূল কাঠামো যদি আফ্রিকার তাঞ্জানিয়া বা মাদাগাস্কারের সমুদ্র তলদেশে দৃশ্যমান হয় তবে বিমান নিখোঁজের আগের তদন্ত রিপোর্টগুলো অনেকটা সারবত্তাহীন বলে প্রমাণিত হবে।
×