ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সারের বস্তায় ওজনে কম, ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ৯ মার্চ ২০১৮

সারের বস্তায় ওজনে কম,  ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ চট্টগ্রামের আনোয়ারা বিসিআইসির গুদাম থেকে দুইমাসে বরাদ্দের ২ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উত্তোলন করে প্রায় ৩০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে কক্সবাজারের চকরিয়ার ২০ সার ডিলার। সরকারীভাবে সৌদি আরব থেকে আমদানি চুক্তিতে আনা ওইসব ইউরিয়া সার উত্তোলন করে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দুই দফায় ব্যাপক ওজন কারচুপির শিকার হয়েছে ওই ডিলাররা। ডিলারদের দাবি, ওজনে কারচুপির মাধ্যমে দুইমাসে বরাদ্দের ২ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন থেকে অন্তত দুইশত মেট্রিক টন সার কম দেয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিসিআইসির সরকারী গুদামভিত্তিক সিন্ডিকেট চক্র জালিয়াতির মাধ্যমে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা থেকে কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাত কেজি ইউরিয়া সার হাতিয়ে নিয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলার বেশিরভাগ ডিলারের গুদামে মজুদ করা এসব সার পরিমাপ করতে গিয়ে ওজন কারচুপির ঘটনাটি ধরা পড়েছে। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আতিক উল্লাহ বলেন, উপজেলার ২০ ডিলারের অনুকূলে জানুয়ারি মাসে ১ হাজার ২’শ মেট্রিক টন ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১ হাজার ১৫০’শ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার বরাদ্দ দেয়া হয়। অনুমতিপত্র সংগ্রহের পর ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ডিলাররা চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বিসিআইসির সরকারী গুদাম থেকে এসব ইউরিয়া সার উত্তোলন করেছেন। তিনি বলেন, জানুয়ারি মাসে উত্তোলনের পর ডিলাররা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে এবং নিজেদের প্রতিষ্ঠান থেকে কৃষকের মাঝে বেশির ভাগ বিক্রি করে দিয়েছে। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে চকরিয়া উপজেলার এক সার ডিলার কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হওয়ায় উত্তোলনকৃত ইউরিয়া সারের বস্তা পরিমাপ করা হয়। তাতে দেখা যায়, একটি বস্তায় পাঁচ থেকে সাত কেজি সার কম রয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনার পর উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মহিউদ্দিন ও সংশ্লিষ্ট এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে উপজেলার ২০ ডিলারের গুদামে থাকা এসব ইউরিয়া সার পরিমাপ করা হয়। এতে বেশির ভাগ ডিলারের কাছে রক্ষিত সারের বস্তায় ওজনে কারচুপির ঘটনাটি ধরা পড়ে। ইতোমধ্যে ঘটনাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কক্সবাজারের উপ-পরিচালক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, যাচাই বাছাই করে তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি চট্টগ্রামের বিসিআইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে লিখিতভাবে জানানো হবে। উপজেলা বিসিআইসির সার ডিলার এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল কাদের সোহেল বলেন, উত্তোলনকৃত এসব ইউরিয়া সার আমদানি চুক্তির আওতায় সরকারীভাবে সৌদি আরব থেকে আনা হয়। প্রথমে উত্তোলন করা সারের বস্তায় ডিলারদের অগোচরে কারচুপির বিষয়টি ধরা পড়েনি। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাপক ওজন কারচুপির শিকার হয়েছে ডিলাররা। এতে বেশিরভাগ ডিলার আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, উত্তোলনকৃত এসব ইউরিয়া সার বিক্রি করে ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ তুলে অনেক স্থানে উল্টো কৃষকরা বিক্রেতাদের সঙ্গে সংঘাতের লিপ্ত হয়েছে। ডিলাররা অভিযোগ করেন, আমদানির পর ইউরিয়া সারগুলো চট্টগ্রামের আনোয়ারার বিসিআইসির সরকারী গুদামে মজুদ করা হয়। এরপর কৌশলে গুদামভিত্তিক সিন্ডিকেট চক্র জালিয়াতির মাধ্যমে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা থেকে কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাত কেজি ইউরিয়া সার হাতিয়ে নিয়েছে। কিছু কিছু বস্তায় দুই থেকে তিন কেজি কম পাওয়া গেছে। সার ডিলার আবুল হাশেম বলেন, প্রতি বস্তা ৫০ কেজির ইউরিয়া সার সরকারীভাবে বিক্রি করা হয় ৭ শ’ টাকা মূল্যে। সেই হিসেবে ওজনে কারচুপির মাধ্যমে দুইমাসে বরাদ্দের ২৩৫০ মেট্রিক টন থেকে হাতিয়ে নেয়া দুইশত মেট্রিক টন সারের মূল্য দাঁড়ায় ২৮ লাখ টাকা। উত্তোলনের পর সারগুলো বিসিআইসির গুদাম থেকে চকরিয়া উপজেলার ডিলারদের গুদামে আনতে পরিবহন খরচ পড়েছে আরও দুই থেকে তিন লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ডিলারদের প্রায় ৩০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতিসাধন হয়েছে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরউদ্দিন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, বিসিআইসি থেকে উত্তোলনকৃত ইউরিয়া সারে ওজনে কারচুপির ঘটনাটি ইতোমধ্যে আমাকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অবহিত করেছেন। তাকে বিষয়টি লিখিতভাবে দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে এবং সংঘটিত ঘটনার প্রেক্ষিতে ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতে বিষয়টি কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উপর মহলকে জানানো হবে।
×