ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

‘স্যার এমন তো কথা ছিল না’

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৭ মার্চ ২০১৮

‘স্যার এমন তো কথা ছিল না’

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ এক বছর ধরে মহাদেব মাস্টার আমার টাকা ফেরত দিচ্ছে না। উল্টো আমাকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। মিথ্যা মামলার আসামি করা হবে বলেও হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমি এখন কোথায় যাব? আমার সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে তার বিচার কোথায় পাব? কথাগুলো বলছিলেন যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়নের ছোট খুদড়া গ্রামের কুমারেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে তাপস কুমার রায়। দেশে ফিরে মহাদেব কুমার মণ্ডলের কাছে গিয়ে তাপস বলেন, স্যার এমন তো কথা ছিল না। খালি হাতে দেশে ফিরে আসলাম। তখন তিনি বলেন, আবার টাকা দাও, এবার তোমার সিঙ্গাপুর পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। দ্বিতীয় দফায় তিন লাখ ৮২ হাজার টাকা দিই। সিঙ্গাপুর গিয়ে আবারও জানতে পারি আমার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। দুই মাস পর দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হই। মহাদেব মাস্টারকে বিশ্বাস করে টাকা দিয়ে দুইবার প্রতারণার শিকার হয়েছি। তাপস জানান, তাকে প্রথম দফায় চার লাখ টাকার বিনিময়ে ভাল চাকরির প্রলোভনে সিঙ্গাপুরে পাঠান হয়। প্রতিশ্রুতি ছিল, প্রথম শ্রেণীর কোম্পানিতেই তার চাকরি হবে। কিন্তু এক বছর শেষ না হতেই তিনি জানতে পারেন, তার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। এক পর্যায়ে ফিরে আসতে বাধ্য হন। তিনি বলছিলেন, সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য বাঘারপাড়ার বন্দবিলা ইউনিয়নের গাইদঘাট গ্রামের গোবিন্দ ম-লের ছেলে ও গাইদঘাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মহাদেব কুমার ম-লকে দুই দফায় ৭ লাখ ৮২ হাজার টাকা দিয়েছি। প্রথম দফায় ২০১৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুর পাঠান হয়। ওই সময় তাকে চার লাখ টাকা দেই। সেখানে যাওয়ার পর জানতে পারি, আমাকে এক বছরের জন্য পাঠান হয়েছে। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে আসি। মহাদেব মাস্টারকে বলি ‘স্যার আমি তো দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছি, আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে।’ আমার কথা শুনে মহাদেব মাস্টার বলেন, আবার সিঙ্গাপুর পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে কাউকে বলা যাবে না। আমি তার কথায় বিশ্বাস করি। এক পর্যায়ে আবার চার লাখ টাকা দাবি করলে, ৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা দেই। এরপর ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আমাকে পুনরায় সিঙ্গাপুর পাঠান হয়। সেখানে গিয়ে জানতে পারি, আমার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। আমাকে দেশে ফিরে আসার জন্য হুমকি-ধমকি দেয়া হয়। দুই মাস পর আবার দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হই। দেশে ফিরে এসে মহাদেব মাস্টারের কাছে টাকা ফেরত চাইলে টালবাহানা শুরু করে। এক বছর ধরে টাকার জন্য ঘুরছি। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে গাইদঘাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরাবর অভিযোগ দেই। অভিযোগের ভিত্তিতে সালিশ হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, আমার তিন লাখ টাকা মহাদেব মাস্টার ফেরত দেবে। কিন্তু সেই সালিশের সিদ্ধান্ত তিনি বাস্তবায়ন করেননি। এরপর বন্দবিলা ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দেই। পরিষদের সালিশেও টাকা ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নেন মহাদেব মাস্টার। কিন্তু সালিশ মানলেও তিনি টাকা ফেরত দেননি। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালকের কাছে অভিযোগ দেই। অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৭ জানুয়ারি দুইপক্ষকে ডাকা হয়। সেখানে শুনানিও হয়েছে। এ অবস্থায় মহাদেব মাস্টার আমাকে টাকা ফেরত না দিয়ে নানাভাবে হয়রানির হুমকি দিচ্ছে। শুনছি, মিথ্যা মামলায়ও আমাকে ফাঁসান হবে। তাপস কুমার রায় বলেন, আমি এনজিও, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মহাদেব মাস্টারকে টাকা দিয়েছি। পাওনাদাররা আমাকে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। আমি বাড়িতে থাকতে পারছি না। জানতে চাইলে মহাদেব কুমার ম-ল বলেন, আমি কারও কাছ থেকে টাকা নেয়নি। তাপস আমার ভগ্নিপতি কিংবা অন্য কারও কাছে টাকা দিয়েছে কী না জানি না। স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও ইউনিয়ন পরিষদের সালিশেও আমি টাকা ফেরত দেয়ার কোন সিদ্ধান্তে রাজি হইনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। জানতে চাইলে বন্দবিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান বলেন, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, ইউপি মেম্বর ও আমার উপস্থিতিতে স্কুল পরিচালনা কমিটি ও ইউনিয়ন পরিষদের সালিশে মহাদেব মাস্টার স্বীকার করেছেন, তাপসের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। দ্রুত টাকা ফেরত দেবেন। কিন্তু টাকা না দিয়ে টালবাহানা শুরু করেছেন। তিনি আরও বলেন, তাপস দুইবার প্রতারণার শিকার হয়েছে। ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। টাকা না পেলে ওর বাঁচার পথ থাকবে না। মানবিক দিক বিবেচনায় আমি বার বার চেষ্টা করছি টাকাগুলো ফিরিয়ে দেয়ার। কিন্তু মহাদেব মাস্টার টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কালক্ষেপণ করছে।
×