ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়কের মেরামত চলছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৬ মার্চ ২০১৮

বর্ষা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়কের মেরামত চলছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গতবছর অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়কে মেরামত চলছে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম বলছেন, আগামী জুন মাসের মধ্যে সব সড়কের খানাখন্দ ঠিক হয়ে যাবে। গেল বছরের বন্যায় পাঁচ হাজার কিলোমিটারের বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথাও জানান সচিব। সোমবার সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সচিব সড়ক-মহাসড়ক সংস্কারের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। সম্প্রতি জনকণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সড়ক-মহাসড়কের বেহাল চিত্র নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সড়কের অবস্থা খারাপ হওয়ায় আসন্ন রোজার ঈদে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিরও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় রিপোর্টে; যার প্রেক্ষিতে তড়িঘড়ি সংবাদ সম্মেলন করে দেশের সড়ক-মহাসড়কের চিত্র তুলে ধরা হলো সরকারের পক্ষ থেকে। রোজার ঈদ সামনে রেখে মহাসড়কের রক্ষণাবেক্ষণে নেয়া কর্মসূচীর ৪০ শতাংশ ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, আগামী এপ্রিলের মধ্যে কাজটা চোখে পড়ার মতো হবে, জুনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন রোজার ঈদ হতে পারে। ঈদযাত্রার মৌসুমে যাতে সড়কে কোন ভোগান্তি না হয় সেজন্য মেরামতের কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমরা বলতে চাচ্ছি, আমাদের কর্মযজ্ঞ চলছে। পত্র-পত্রিকায় বলা হচ্ছে, রাস্তার এই (বাজে) অবস্থা। এই অবস্থার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে। রাস্তার খানাখন্দ জুনের মধ্যে এগুলোর মেরামত দৃশ্যমান হবে। সচিব জানান, দেশে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) আওতাধীন ৮৭৬ মহাসড়ক আছে। এর মধ্যে ৯৬টি জাতীয়, ১২৬টি আঞ্চলিক এবং ৬৫৪টি জেলা মহাসড়ক। গত বর্ষা মৌসুমে ২২ জেলার ৬২ স্থানে ৪ দশমিক ৯২ কিলোমিটার মহাসড়ক বিলীন হয়ে যায় এবং ৭৫ স্থানে ৬৭ দশমিক ২০ কিলোমিটার মহাসড়ক পানিতে তলিয়ে যায়।এছাড়া তিন পার্বত্য জেলায় ২৫১ স্থানে পাহাড়ধসে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে; বন্যায় ৫ হাজার ১১৫ কিলোমিটার মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ড হয় বলে তথ্য দেন নজরুল। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ খাতে এক হাজার ৭০৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অনুকূলে ১৩ হাজার ৭০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যা ও অতিবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অতিরিক্ত আরও এক হাজার ১৬৬ কোটি টাকার চাহিদা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সড়ক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে, যার অধিকাংশ কাজ চলমান। মন্ত্রণালয়ের ২৩টি টিমের মাধ্যমে এ কার্যক্রম তদারকি করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ ৬১ শতাংশ শেষ হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নজরুল বলেন, রবিবার দুদকের রিপোর্ট আমার হাতে এসেছে। দেখেশুনে ব্যবস্থা নেব। দুদক সুনির্দিষ্ট করে কোন ইঞ্জিনিয়ারের নাম বলেনি, কোথায় এমন ঘটনা ঘটেছে তাও বলেনি, তবে তাদের কথার যৌক্তিকতা আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টি এবং আগাম বন্যার বিষয়টি মাথায় রেখে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও মেরামত করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, তারা নক্সায় পরিবর্তন আনছেন। রাজনৈতিক বিবেচনায় ঠিকাদার নিয়োগের কারণে তাড়াতাড়ি সড়ক নষ্ট হয়ে যায় এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সচিব দাবি করেন, তিনি গত অক্টোবরে এ দায়িত্বে আসার পর থেকে কোন রাজনৈতিক তদ্বির পাননি। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ ধরনের (রাজনৈতিক বিবেচনায় ঠিকাদার নিয়োগ) কোন রিপোর্ট আমাদের কাছে নেই। ঠিকাদারের কোন চরিত্র আমাদের জানা নেই, ঠিকাদার ঠিকাদারই। তিনি বলেন, কে কোন্ দল করে, কোন্ দল সমর্থন করে এ বিষয়টা আমরা বিবেচনায় নেই না এবং ঠিকাদার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেটা বিবেচ্য বিষয়ও নয়। ১০০ কোটি টাকার নিচে সব টেন্ডার এখন অনলাইনে করা হয় জানিয়ে সওজের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, অধিকাংশ কাজ দরপত্র ছাড়াই করা হয় বলে যে অভিযোগ করা হয় তা ‘অসত্য’। বড় কাজগুলো ক্রয় কমিটির মাধ্যমে করা হয়। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এ বিভাগের অধীন বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরাও সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতাধীন সারাদেশে মোট সড়কের পরিমাণ ২১ হাজার ৩০২ দশমিক ০৮ কিলোমিটার। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিগত ৯ বছরে লেন বৃদ্ধি ও প্রশস্তকরণসহ বর্তমান সরকারের আমলে মহাসড়কের যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় অগ্রসরমান। চলতি অর্থবছরে রক্ষণাবেক্ষণ খাতে প্রাপ্ত বরাদ্দ বিভাজন হচ্ছে দৈনন্দিন মেরামতের জন্য ১০০ কোটি টাকা, পিএমপি মাইনর কর্মসূচীর আওতায় ৫৫৯ কোটি টাকা, পিএমপি মেজর কর্মসূচীর আওতায় ১১২৫ কোটি (অতিরিক্ত প্রাপ্ত বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকাসহ) টাকা এবং অন্যান্য খাতে ২০ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা। মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ খাতে গৃহীত কর্মসূচীর বাস্তবায়ন অগ্রগতি ফেব্রুয়ারিতে ৪০ ভাগ বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। বিগত ৫ বছরে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ধারাবাহিকভাবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শতভাগ সাফল্য অর্জন করেছে। চলতি অর্থবছরেও সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে আশা প্রকাশ করা হয়।
×