ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সোনালি আঁশে সেজেছে রাজধানী

পাটে নতুন প্রাণ সুসময়ে ফেরার স্বপ্ন

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৪ মার্চ ২০১৮

পাটে নতুন প্রাণ সুসময়ে ফেরার স্বপ্ন

মোরসালিন মিজান ॥ হারিয়েই গিয়েছিল পাট। অতীত হয়ে গিয়েছিল। তবে সম্ভাবনা যেটুকু, মরেনি কোনদিন। কোনদিন ফুরোয়নি। সোনালি আঁশ নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিলেন কৃষক। উদ্যোগী হয়েছিল সরকার। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। এ পর্যায়ে এসে বলা যায়, পাটের ঐতিহ্য কিছুটা হলেও ফিরেছে। গ্রাম থেকেও যে পাট নিশ্চিহ্ন হতে চলেছিল, এখন তা দৃশ্যমান হচ্ছে রাজধানী শহরে। পাট ও পাটের নানা উপকরণ দিয়ে সুন্দর সেজেছে ঢাকা। চলছে বর্ণাঢ্য উৎসব অনুষ্ঠান। এভাবে গৌরবের ইতিহাসটি তুলে ধরার পাশাপাশি পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এখন নতুন করে ভাবা হচ্ছে পাট নিয়ে। এরই মাঝে উৎপাদন বেড়েছে। বেড়েছে আয়। বিশেষ করে বলতে হয় বেসরকারী খাতের কথা। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে ৬৬ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে এটি ১৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। ভবিষ্যতেও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে চায় বাংলাদেশ। সে লক্ষ্যে চলছে নানা প্রস্তুতি। বলার অপেক্ষা রাখে না, পাট দিবস উদযাপন এরই অংশ। আগামী ৬ মার্চ পাট দিবস। গত বছর থেকে এই দিবস উদযান করা হচ্ছে। এবারও দিনটি ঘিরে চলছে দশদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। চলতি মাসের প্রথম দিন থেকেই সাজতে শুরু করে ঢাকা। এখন রাজধানী শহরের প্রধান প্রধান সড়ক নতুন চেহারা পেয়েছে। সড়ক বিভাজকের ওপর পাটকাঠি। গ্রামের উঠোনে ভেজা পাটকাঠি যেভাবে শুকোতে দেয়া হয়, ঠিক সেভাবে সাজানো। গত কয়েকদিন কাজী নজরুল ইসলাম এ্যাভিনিউয়ের পুরোটা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ল্যাম্পপোস্টের সমান্তরালে পাটকাঠি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মূল রাস্তার ধারে ডিজিটাল ব্যানার। বিশাল বিশাল ব্যানারে পাটসমৃদ্ধ গ্রামের ছবি। সবুজ পাটের ক্ষেত। গাছ থেকে ছাল আলাদা করা, ধুয়ে শুকোতে দেয়ার দৃশ্য। আরও কত কত স্মৃতি! সামনে আনার চেষ্টা হয়েছে। কাওরানবাজারের সার্ক ফোয়ারা মোড়টি যেন পাটের গ্রাম। পাট মাথায় নিয়ে ছুটে যেতে দেখা যায় কৃষককে। ছবির কৃষক বটে। মাথায় সত্যি পাটের বোঝা। দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় না। পাট বহন করার জন্য বিশাল বিশাল নৌকো ব্যবহার করা হতো। সেসব নৌকো দিয়ে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন রাস্তা। চলছে নানা উৎসব অনুষ্ঠানও। ‘জাতীয় পাট দিবস-২০১৮’ উপলক্ষে শুক্রবার মানিকমিয়া এ্যাভিনিউ থেকে বর্ণাঢ্য পাট র‌্যালি ও ঢাকা-ফরিদপুর-ঢাকা রোড শোর আয়োজন করা হয়। ‘সোনালি আঁশের সোনার দেশ, পাট পণ্যের বাংলাদেশ’ বের হওয়া রোড শোতে বিভিন্ন বয়সী মানুষ অংশগ্রহণ করেন। নারীরা পাটের শাড়ি পরেছিলেন। পুরুষের মাথায় ছিল কৃষকের মাথাল। রোড শোর উদ্বোধন করেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মির্জা আজম বলেন, পাটের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। পরদিন শনিবার ছিল নৌ শোভাযাত্রা। হাতিরঝিলে এই শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। পাট বহন করে গঞ্জের উদ্দেশ্যে ছুটে চলা নৌকোর কথা মনে পড়ে যায় দেখে। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পাট দিবসের মূল অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। ৮ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে হবে সমাপনী অনুষ্ঠান।
×