ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুই দিনের আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন শুরু

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

দুই দিনের আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলা একাডেমির আয়োজনে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো দুই দিনের আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন। দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে সমান্তরালে চলা সাহিত্যের গতি-প্রকৃতিনির্ভর আলোচনায় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে এ সম্মেলন। প্রসঙ্গক্রমে উঠে এসেছে দক্ষিণ এশিয়ার থিয়েটারবিষয়ক ভাবনা। ‘দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক সাহিত্য’ শিরোনামের এ সাহিত্য সম্মেলনের প্রথম দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছে চারটি সেমিনার। আজ শুক্রবার আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের শেষ দিনে আরও দুটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। পহেলা ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনকালে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার সকালে ছিল উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ড. ফকরুল আলম। আলোচনায় অংশ নেন ভারতের অনুবাদক ও গবেষক রাধা চক্রবর্তী। সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। ফকরুল আলম বলেন, বাঙালী লেখকদের ইংরেজী কথাসাহিত্যে প্রান্তীয় মানুষের স্বর যেমন ওঠে আসে তেমনি নতুন এক সাহিত্য রীতিরও তারা জন্ম দিয়ে চলেন যার মধ্যে সময়-দেশ ও মানুষের মহাস্বরই প্রতিধ্বনিত হয়ে চলে। রাধা চক্রবর্তী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক সাহিত্যে নানান অভিমুখ পরিলক্ষিত হলেও মানবমুখী প্রবণতাই প্রধান। রফিকুল ইসলাম বলেন ঔপনিবেশিক বাস্তবতা দক্ষিণ এশিয়ার সাধারণ মানুষকে যেমন স্বাধীনতার অদম্য স্পৃহা দান করেছে তেমনি এ অঞ্চলের লেখকদের মাঝে নতুন সাহিত্যিক রূপরীতি অনুসন্ধানের মানস গঠন করেছে। শামসুজ্জামান খান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক সাহিত্যের গতি প্রকৃতি অনুধাবন এ ধরনের সম্মেলন বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এ অঞ্চলের মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবন এবং একই সঙ্গে এর প্রাণচঞ্চল সাহিত্য সম্পদের সাক্ষাত পেতে আমাদের দক্ষিণ এশিয় সাহিত্যের নিবিড় পাঠ এবং বিশ্লেষণ প্রয়োজন। সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে দক্ষিণ এশিয়ার কথা সাহিত্যবিষয়ক আলাপচারিতায় অংশ নেন ভারতের লেখক অরুণা চক্রবর্তী ও বাংলাদেশের ড. ফিরদৌস আজিম। বক্তাদ্বয় বলেন, সাহিত্যিককে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে নবায়ন করে নিতে হয়। চারপাশের মুহুর্মুহু পরির্বতনকে আত্মস্থ করতে হয় এবং ইতিবাচক দৃষ্টিতে জীবনকে অবলোকন করতে হয়। জীবনরসের সন্ধান না পেলে সাহিত্য মানুষের সঙ্গে সংযোগহীন হতে শুরু করে। দক্ষিণ এশিয়ার কথাসাহিত্যেও ব্যক্তি ও সমষ্টি উভয়ই সমগুরুত্ব লাভ করেছে। এর পর ছিল ‘দক্ষিণ এশিয়ার কথাসাহিত্য’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে মূল বক্তব্য উপস্থান করেন রিফাত মুনিম। আলোচনা করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, শ্রীলঙ্কার সাহিত্যিক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক জি বি দিশানায়েক, কলম্বিয়ার কথাসাহিত্যিক আন্দ্রেজ মাউরিসিয়ো মুনজ ও খালিকুজ্জামান ইলিয়াস। বক্তারা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার কথাসাহিত্যিকরা যেমন শিল্পমান সম্পর্কে সচেতন তেমনি মানুষের অধিকারের কথা নতুনতর গদ্য রীতিতে পরিস্ফূট করছেন। যদিও একমাত্রিক বিশ্বায়নের প্রভাবে কথাসাহিত্যের ভাষাও আজ এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি উপনীত। এ অঞ্চলের কথাসাহিত্য-পরিসরে দলিত সাহিত্য, নারীস্বর যেমন গুরুত্ব পেয়েছে তেমনি লিখিত রীতির পাশাপাশি মৌখিক কথকতার রূপরীতিও কথাসাহিত্যের অবয়বে ফুটে উঠেছে। ‘দক্ষিণ এশিয়ান থিয়েটার’ বিষয়ক আলোচনাপর্বে মূল বক্তব্য উপস্থান করেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। আলোচনায় অংশ নেন শফি আহমেদ, নাসির উদ্দিন ইউসুফ এবং ভারতের নাট্যজন অংশুমান ভৌমিক। বক্তারা বলেন, ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় নাটক শিল্পমাধ্যম হিসাবে আজ এক নতুন দিগন্তের সামনে এসে উপস্থিত। সারা বিশ্বের শৈল্পিক উত্তরাধিকারকে বহন করে দক্ষিণ এশিয়ার নাটকে সাম্প্রতিক সময়ে প্রান্তিক মানুষের জীবনছবি, নারীদের জীবনসংগ্রাম এবং সর্বতোমুখী বৃত্ত ভাঙ্গার প্রয়াসে ঋদ্ধ। মৌলিক নাটকের পাশাপাশি অনূদিত ও রূপান্তরিত নাটকে দক্ষিণ এশিয়ার জীবনের সঙ্গে অন্বয় সাধন এক নতুন নাট্য আঙ্গিকের জন্ম দিয়েছে। পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী থিয়েটারের সমান্তরালে সাম্প্রতিক সময়ে প্রতœথিয়েটার, পরিবেশ-থিয়েটার ইত্যাদি এ অঞ্চলের থিয়েটারকে শিল্পসত্য ও মানবমুক্তির সত্যের মুখোমুখি করে। সন্ধ্যায় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এবার পুরস্কার পেয়েছেন কানাডা-প্রবাসী কবি মাসুদ খান এবং যুক্তরাজ্য-প্রবাসী কবি মুজিব ইরম। পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের হাতে পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০ হাজার টাকার চেক, পুষ্পস্তবক, সনদ এবং ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। পুরস্কার তুলে দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আজ শুক্রবার সম্মেলনে শেষ দিনে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে ‘দক্ষিণ এশিয়ার কবিতা’ শীর্ষক আলোচনা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক কায়সার হক। আলোচনায় অংশ নেবেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, নেপালের কবি আভি সুবেদি, পাকিস্তানের লেখক ফাতেমা হাসান, অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন এবং সাদাফ সায্। ‘দক্ষিণ এশিয়ার ভাষা এবং অনুবাদ’ শীর্ষক সমাপনী আলোচনা পর্বে বক্তব্য উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক আবদুস সেলিম। আলোচনায় অংশ নেবেন রাশিদ আসকারী, ফায়েজা হাসনাত এবং জি এইচ হাবীব। সমধারা কবিতা উৎসব ॥ সাহিত্যের কাগজ সমধারা প্রকাশনার পাশাপাশি ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস গবেষণা, অবহেলিত শিশুদের স্বাক্ষরজ্ঞানসহ সামাজিক কাজকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় একুশ শতকের কবিদের মূল্যায়নের লক্ষ্যে আয়োজন করছে সমধারা কবিতা উৎসব। চতুর্থবারের মতো এই উৎসব অনুষ্ঠিত হলো বৃহস্পতিবার। বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানিকতায় উপস্থিত ছিলেন দুই বাংলার অগ্রজ ও অনুজ কবিরা। এ পর্বে ২০০ কবির ২০০ কবিতায় সাজানো কাব্যগ্রন্থ ‘পদাবলীর যাত্রা’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে সমধারা সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয় কবি মুহম্মদ নূরুল হুদাকে। উৎসব উদ্বোধন করেন কবি মৃণাল বসু চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন ভাষাসৈনিক ড. করিফা খাতুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম ও কবি হেলাল হাফিজ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সমধারা সম্পাদক ও উৎসব আয়োজক সালেক নাছির উদ্দিন। উৎসবের দ্বিতীয় পর্বে পরিবেশিত হয় সেলিনা হোসেনের গায়ত্রী সন্ধ্যা উপন্যাস অবলম্বনে আবৃত্তি প্রযোজনা ‘দেশভাগ থেকে স্বাধীনতা’। মিজবাহিল মোকার রাবিনের গ্রন্থনায় প্রযোজনাটির নির্দেশনায় ছিলেন সালেক নাছির উদ্দিন। ‘মোদের গরব মোদের আশা’ সঙ্গীত সঙ্কলনের প্রকাশনা ॥ নবীন কণ্ঠশল্পী সিফায়েত উল্লাহ মুকুল। তার কণ্ঠে উঠে এলো অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেন ও দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান। কালজয়ী সেসব গান নিয়ে প্রকাশিত হলো সঙ্গীত সঙ্কলন ‘মোদের গরব মোদের আশা’। আধ্যাত্মিক অনুভব ও প্রেমের গানের সমাহারে সঙ্কলনটি প্রকাশ করেছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লালমাটির বেঙ্গল বই প্রাঙ্গণে অডিও এ্যালবামটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। মোদের গরব মোদের আশা অডিও এ্যালবামের মোড়ক উন্মোচন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ডাঃ সারওয়ার আলী। মোড়ক উন্মোচন শেষে শিল্পী এ্যালবামে ঠাঁইপ্রাপ্ত গানগুলো গেয়ে শোনান সিফায়েত উল্লাহ মুকুল। সঙ্গীত সঙ্কলনটির মূল্যায়ন করে দেয়া এক বাণীতে সঙ্গীতজ্ঞ ড. সন্্জীদা খাতুন বলেছেন, বাংলা কাব্যসঙ্গীতে বাণী আর সুরের যৌথ সাধনা এক সময়ে সোনার ফসল ফলিয়েছে। আমাদের দেশে রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলের গান পরিচর্যা আর সমাদর পেলেও দ্বিজেন্দ্রলাল-রজনীকান্ত-অতুলপ্রসাদের সৃষ্টি সে রকম চর্চিত এবং প্রচারিত হয়নি। এর কারণ, অতীতের সরকারী বিরূপতা। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরে এই তিন কবির সব ধরনের গানের প্রতি আমাদের মনোযোগ বেড়েছে। মনে রাখতে হবে, একুশের ভাষা আন্দোলনের কাল থেকে অতুলপ্রসাদ সেনের ‘মোদের গরব মোদের আশা/আমরি বাংলাভাষা’ এ দেশের বাঙালীর প্রাণের গান হয়ে ওঠে। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধন-ধান্যে-পুষ্পে ভরা’- ও দেশপ্রেমের প্রিয় বাণী হয়ে উঠেছিল। রজনীকান্ত সেনের ‘মায়ের দেয়া মোটা কাপড়’ মাথায় তুলে নেবার আবেদনও হয়েছিল আমাদের মুক্তিসাধনার অন্যতম গান। নবীন শিল্পী সফায়েত উল্লাহ মুকুলের সিডিতে দ্বিজেন্দ্র-রজনী-অতুলপ্রসাদের নানান স্বাদের গান উপস্থাপিত হয়েছে। এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। দশটি গান দিয়ে সাজানো হয়েছে সঙ্গীত সঙ্কলনটি। গানগুলো হলোÑ মোদের গরব মোদের আশা, সখিরে মরম পরশে তারি গান, বেলা ব’য়ে যায়, মম মনের বিজনে, ধীরে ধীরে মোরে, প্রেমে জল হয়ে যাও গলে, মুরলী কাঁদে ‘রাধে রাধে’ ব’লে, মোরা নাচি ফুলে ফুলে, কে গো গাহিলে পথে ও আজি তোমার কাছে। শিশু একাডেমির মাতৃভাষা দিবসের আয়োজন ॥ মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বৃহস্পতিবার বিকেলে কবিতা ও ছড়াপাঠের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। সেই একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আয়োজনে ছিল পুরস্কার বিতরণ, আলোচনা এবং একাডেমির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, গাজীপুর ও নরসিংদী জেলা শাখার প্রশিক্ষণার্থী শিশুদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত কবি আসাদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির প্রশিক্ষণার্থী শিশু বন্ধু মোঃ সামিন ইর্তিজা।
×