ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

টি২০তে লঙ্কানদের কাছে হার দিয়ে শুরু বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

টি২০তে লঙ্কানদের কাছে হার দিয়ে শুরু বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলঙ্কার কাছে ফাইনালে হেরে শিরোপা হাতছাড়া হয়েছে। এরপর টেস্ট সিরিজেও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেছে। এবার দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজের প্রথম টি২০তে বৃহস্পতিবার ৬ উইকেটে হারল বাংলাদেশ। তাতে করে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়েও পড়ল। টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহীম (৪৪ বলে ৬৬*), সৌম্য সরকার (৩২ বলে ৫১) ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৩১ বলে ৪৩) এমনই দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন তাতে করে রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ। ৫ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৯৩ রান করে। বাংলাদেশের টি২০ ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ স্কোর। এরপর ব্যাট করতে নেমে এই রানও যেন কিছুই মনে করলেন না শ্রীলঙ্কা ব্যাটসম্যানরা। কুশল মেন্ডিসের ৫৩, দাসুন শানাকার অপরাজিত ৪২, থিসারা পেরেরার অপরাজিত ৩৯ ও দানুশকা গুনাথিলাকার ৩০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৬.৪ ওভারে ১৯৪ রান করে জিতে যায় শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কা এর আগে ১৭৬ রানের বেশি অতিক্রম করে কখনই জিততে পারেনি। এবার জেতার তাড়নায় খেলতে নেমে জয় তুলে নেয়। বাংলাদেশ যেখানে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্কোর গড়ার রেকর্ড করেও হারে। সেখানে শ্রীলঙ্কা নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে রেকর্ড করে জিতে। বাংলাদেশের মতো সমানতালে খেলতে থাকেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরাও। ৬ ওভারে বাংলাদেশের চেয়ে ৪ রান (৬৭ রান) কম করে শ্রীলঙ্কা। কুশল মেন্ডিস তো ২৫ বলেই হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেন। দানুশকা গুনাথিলাকাকে (৩০) নাজমুল ইসলাম অপু থামালেও মেন্ডিসকে যেন থামানোই যাচ্ছিল না। আফিফ হোসেন ধ্রুব শেষ পর্যন্ত ৫৩ রান করা মেন্ডিসকে আউট করে দেন। দ্রুত উপুল থারাঙ্গাকেও ফেরানো যায়। কিন্তু রানের গতি যেন দ্রুত চলতেই থাকে। ১০ ওভারে বাংলাদেশের চেয়েও ৯ রান (১০৯ রান) বেশি করে শ্রীলঙ্কা। দেখতে দেখতে পঞ্চম উইকেটে দাসুন শানাকা ও থিসারা পেরেরা ৩০ বলে ৬৫ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরাও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। সৌম্য সরকার অভিষিক্ত জাকির হাসানকে নিয়ে এমন ব্যাটিংই করতে থাকেন, ৪ ওভারেই ৪৯ রান করে ফেলে বাংলাদেশ। সৌম্য এমনই ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করেন, ১৫ বলেই ৩২ রান করে ফেলেন। কিন্তু আরেকদিকে থাকা জাকিরও একই তালে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ১০ রানের বেশি করতে পারেননি। জাকির আউটের পর মুশফিকুর রহীম ব্যাট হাতে নামেন। তিনিও সৌম্যের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যেতে থাকেন। পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারেই স্কোরবোর্ডে ৭১ রান জমা হয়ে যায়। কি দুর্দান্ত সূচনা। ১০ ওভারে স্কোরবোর্ডে ১০০ রানও হয়ে যায়। মনে হচ্ছিল ২০০ রান অনায়াসে হবে। সৌম্য এর মধ্যে ৩০ বলেই টি২০ ক্যারিয়ারে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেন। কিন্তু দলের স্কোরবোর্ডে ১০০ রান যোগ হওয়ার পরই যেন রানের চাকায় গতি থেমে যায়। মুহূর্তেই যে সৌম্য (৫১) ও রানের খাতা খোলার আগেই অভিষিক্ত আফিফ হোসেন ধ্রুব আউট হয়ে যান। জীবন মেন্ডিসের প্রথম ওভারেই স্পিন ঘূর্ণির সামনে পড়ে ১১তম ওভারের প্রথম ও তৃতীয় বলে সৌম্য ও আফিফ সাজঘরে ফেরেন। এরপর মুশফিকের সঙ্গে যোগ দেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দুইজন মিলে আলো ঝলমলে জুটি উপহার দেন। দুইজন আবার ব্যাট হাতেও দেখান নৈপুণ্য। তাতে করে দল ১৭৩ রানে যায়। দুইজনের চতুর্থ উইকেটের জুটিও ৭৩ রানে যায়। এমন মুহূর্তে মাহমুদুল্লাহ আউট হয়ে গেলেও মুশফিক শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন। টি২০ ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি করার সঙ্গে ৪৪ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৬৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। কব্জির ব্যথায় তার ম্যাচ খেলাই হুমকির মুখে ছিল। সেই মুশফিক খেললেন। দলের হয়ে ম্যাচটিতে সর্বোচ্চ ইনিংসও করলেন। তার এই ইনিংসে বাংলাদেশও সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ল। এর আগে ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯০ রান করেছিল বাংলাদেশ। যা টি২০তে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল। সেই স্কোরকেও এবার ছাপিয়ে গেল বাংলাদেশ। কিন্তু জয় তুলে নেয়া আর গেল না। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ছাড়া বিধ্বস্ত দলে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ। আবার ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও হারে বাংলাদেশ। তাতে করে দলের ক্রিকেটাররা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ার কথা। কিন্তু দেখা গেল পুরো উল্টো। ব্যাটিংয়ে আরও সতেজ যেন ক্রিকেটাররা। ঘুরে দাঁড়ানোর নেশায়, জেতার নেশায় নিজেদের সামর্থ্যরে সবটুকু দিতে প্রস্তুত হয়ে ওঠেন। তা দেনও। কিন্তু বোলাররা সেই মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি। তাতে করে প্রথম টি২০তেও শ্রীলঙ্কার কাছে হারল বাংলাদেশ।
×