ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সুন্দরের প্রতিচ্ছবি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও নৃত্য উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সুন্দরের প্রতিচ্ছবি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও নৃত্য উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খেয়ালের মোহময়তায় শুরু হয় সান্ধ্যকালীন সঙ্গীতাসর। প্রায় পাঁচ ঘণ্টার আয়োজনে দেখা মেলে নয়নজুড়ানো মনিপুরী নৃত্য। জাতীয় নাট্যশালায় রাত গড়ানো অনুষ্ঠানে শোনা যায় সেতারের সুমধুর সুর। কানে এসেছে হৃদয়ে কড়া নাড়া বেহালার বাদন। বাঁশির সুরে আলোড়িত হয়েছে শ্রোতার অন্তরাত্মা। সারেঙ্গী, সানাই ও সরোদের সুরে মন হয়েছে উচাটন। এভাবেই কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীতের সঙ্গে নাচের নান্দনিকতায় সুন্দরের প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দিল শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও নৃত্য উৎসব। নবীন ও প্রবীণ শিল্পীদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত তিনদিনের এ উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল রবিবার। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের অনুরাগী শ্রোতা-দর্শকের ঘাটতি হয়নি। উৎসব আঙিনায় কথা হয় ধানমন্ডি থেকে আসা উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের অনুরাগী সামেরা জামালের সঙ্গে। উচ্ছ্বসিত এই শ্রোতার অভিব্যক্তিটি ছিল এরকম- একসময় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত আমাকে তেমনভাবে টানত না। কেমন জানি দুর্বোধ্য ও একঘেয়েমিপূর্ণ মনে হতো। সেই প্রেক্ষাপটে ২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবে শামিল হয়ে পরিবর্তিত হয়ে যায় মনোভাব। উপমহাদেশের প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পীদের পরিবেশনায় শুরু হয় এই ধারার সঙ্গীতের প্রতি মুগ্ধতা। এই শহরের অসংখ্য শ্রোতার মতো আমার কানটিও তৈরি হয় এবং ধীরে ধীরে এই সঙ্গীতের সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করতে শিখি। সেই ভাললাগা থেকে এখন সুযোগ পেলেই রাজধানীর যে কোন প্রান্তে অনুষ্ঠিত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতাসরে হাজির হই। আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেশে এখন উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের নবজাগরণ ঘটছে। পুরনো পরম্পরায় চর্চা বাড়ার পাশাপাশি ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে নতুন প্রজন্মের শিল্পী। সূর্যাস্তের পর শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে শুরু হয় দ্বিতীয় দিনের উৎসব। রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত চলা আয়োজনে প্রথম পরিবেশনাটি ছিল কণ্ঠসঙ্গীতের। সূচনায় সম্মেলক কণ্ঠে খেয়াল পরিবেশন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিল্পীরা। কণ্ঠসঙ্গীতের পর উপস্থাপিত হয় শাস্ত্রীয় আঙ্গিকের নান্দনিক নাচ। শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় পরিবেশনা উপস্থাপন করেন একঝাঁক নৃত্যশিল্পী। নাচের পর সেতারে রাগাশ্রয়ী সুর ছড়িয়েছেন নিশিত দে। বেহালার বাদনে শ্রোতার শ্রবণেন্দ্রিয় ভালোলাগার অনুভব ছড়িয়েছেন শিউলী ভট্টাচার্য। কণ্ঠসঙ্গীতের আশ্রয়ে ঠুমরি পরিবেশন করেন সুপ্রিয়া দাস। সেতারের স্নিগ্ধ সুরে মন রাঙিয়েছেন এবাদুল হক সৈকত। রাগাশ্রয়ী সঙ্গীত শুনিয়েছেন ফকির শহিদুল ইসলাম। সারেঙ্গীতে সুর তুলেছেন মতিয়ার রহমান। সানাই বাজিয়েছেন কবির আলী। কণ্ঠসঙ্গীতে খেয়াল পরিবেশন করেছেন রেজওয়ান আলী লাভলু। ইউসুফ খান শুনিয়েছেন সরোদের স্নিগ্ধ সুর। তামান্না রহমানের পরিচালনায় মনিপুরী নাচের মোহনীয়তা মেলে ধরে একঝাঁক নবীন নৃত্যশিল্পী। এককভাবে মনিপুরী নৃত্য পরিবেশন করেন সামিনা হোসেন প্রেমা। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শুনিয়েছেন সাইফুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল ও দিলরুবা সাথী। আজ সোমবার একই ভেন্যুতে সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে সমাপনী দিনের উৎসব। সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য পুরস্কার প্রদান ॥ প্রদান করা হলো ২০১৭ সালের সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য পুরস্কার। প্রবন্ধ সাহিত্যে এ পুরস্কার পেয়েছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং ছোটগল্পের জন্য পুরস্কারটি পেয়েছেন কথাশিল্পী বদরুন নাহার। একই আয়োজনে ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। রবিবার সন্ধ্যায় তেজগাঁওয়ের বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসের সেমিনার হলে এ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএনএম মেশকাত উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সম্মানিত অতিথি ছিলেন সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল করিম। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, রেজিস্ট্রার, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, পরিচালকসহ উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ। পুরস্কার প্রদান ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছায়ানটের শিকড় কার্যক্রমে ভর্তি চলছে ॥ দেশজ সংস্কৃতির বিকাশে অনন্য ভূমিকা রাখা প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। সংস্কৃতির মাধ্যমে স্বাধিকারের কথা বলা প্রতিষ্ঠানটির শিশু-কিশোরদের সামূহিক বিকাশে ‘শিকড়’ কার্যক্রমে ভর্তি চলছে। ৬ থেকে ১৩ বছরের শিশু-কিশোররা অংশ নিতে পারবে এ কার্যক্রমে। প্রতি শনিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১টা এবং বুধবার ও সরকারী ছুটির দিন ছাড়া বাকি দিনগুলোয় দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ধানমন্ডির ছাযানট সংস্কৃতি-ভবনে আবেদনপত্র পাওয়া যাবে। শহীদ মিনারে একুশের অনুষ্ঠানমালা ॥ ভাষাশহীদদের নিবেদিত গান, কবিতায় প্রাণের প্রবাহ বইছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। একুশের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ো স্লোগানে এখানে চলছে একুশের অনুষ্ঠানমালা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত দুই সপ্তাহব্যাপী এ অনুষ্ঠানের চতুর্থ দিন ছিল রবিবার। বিকেল থেকে রাত অবধি চলা আয়োজনে পরিবেশিত হয় নৃত্য-গীত, কবিতা ও পথনাটক। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে পঞ্চভাস্কর ও সুরতালের শিল্পীরা। আজ সোমবার পঞ্চম দিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল সাড়ে চারটায়।
×