ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

দৃষ্টিনন্দন এ লেকের দুধারে থাকবে ৮৬ কি.মি ওয়াকওয়ে, ঝুলন্ত সেতু, ভাসমান রেস্তরাঁ

পূর্বাচলে তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের দীর্ঘ লেক

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

পূর্বাচলে তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের দীর্ঘ লেক

মশিউর রহমান খান ॥ সবচেয়ে দীর্ঘ ও আন্তর্জাতিক মানের কৃত্রিম লেক তৈরি হচ্ছে পূর্বাচল আবাসিক এলাকায়। ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ও গড়ে ১৫০ ফুট চওড়া এ লেকটি পূর্বাচল প্রকল্পের সমস্ত এলাকাজুড়ে আকাবাঁকা হয়ে বহমান থাকবে। একইসঙ্গে থাকবে লেকের দু’ধারে ৮৬ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে। লেকের মাঝখানে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করে স্থাপন করা হবে ইকোপার্ক। ইকোপার্কের সঙ্গে সংযোগ করা হবে ঝুলন্ত ব্রিজ। লেকে থাকবে ভাসমান রেস্তরাঁ। দৃষ্টিনন্দন এই লেকের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ শ’ কোটি টাকা। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক জনকণ্ঠকে জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটি হবে একটি বিশ্ব মানের স্থাপনা। শুধু এলাকার বাসিন্দা নয়, এটি সারা বিশ্বের পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে বলে আমাদের ধারণা। রাজউক সূত্র জানায়, গোটা পূর্বাচল প্রকল্পেই আধুনিকতা এবং সৌন্দর্যের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত খোলা জায়গা, খেলার মাঠ, ওয়াকওয়ে, প্রচুর গাছ-পালা, জলাধারের বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে। গোটা প্রকল্পটি সাজানোর চেষ্টা করা হয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মাথায় রেখে। শহরের কোলাহলে যাতে এলাকার বাসিন্দারা একটি নিরিবিলি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে এই ব্যবস্থা থাকবে উপশহরটিতে। প্রকল্পে মোট জমির পরিমাণ ৬ হাজার ২ শ’ ২৭ দশমিক ৩৬ একর। এর মধ্যে ৮৬১ একর জমিতে লেক নির্মাণ করা হবে। যা প্রকল্পের মোট জমির ৭ দশমিক ৫৮ ভাগ। ১৯ লাখ, ২৯ হাজার ৪৯২ বর্গফুটের দৃষ্টিনন্দন এই বিশাল লেকটির বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সুন্দর সুন্দর নামকরণ করা হয়েছে। কোন কোন স্থানে এই লেক দুই শ’ থেকে ক্ষেত্রবিশেষ চার শ’ ফুট চওড়া হবে। চোখ ধাঁধানো নির্মাণ শৈলী আর লেকের দু’পাশের পরিবেশ দেখলে যে কারোর এই লেকের পাশে একবারের মতো হলেও বসতে বা হাঁটতে ইচ্ছে করবে। লেকের দু’পাশে সকাল বিকেল হাঁটার জন্য তৈরি করা হবে ওয়াকওয়ে, বসার স্থান ও সাইকেল ট্র্যাক। থাকবে সর্বোচ্চ সবুজায়ন। লেকের ভাসমান রেস্তরাঁয় দর্শনার্থীরা রসনা বিলাসও করতে পারবেন। ১২ এবং ১৭ নম্বর সেক্টরের মাঝখানে লেকের মধ্যে তৈরি করা হবে ইকোপার্ক। নানা গাছ-গাছালিতেপূর্ণ ইকোপার্কে থাকবে পাখির অভয়ারন্ন। দর্শনার্থীদের জন্য কিছুটা বিধি নিষেধ থাকবে পাখি ও প্রকৃতির সৌন্দর্য রক্ষার স্বার্থে। মাঝে মধ্যে দর্শনার্থীদের পার্ক পরিদর্শনের জন্য তৈরি করা হবে একটি ঝুলন্ত ব্রিজ যা লেকের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করবে। পরিবেশ রক্ষার পাশপাশি লেকের পানি দূষণ সম্পূর্ণরূপে রোধ করতে লেকের সঙ্গে দুই নদীর সংযোগস্থলে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হবে। পানি পরিষ্কারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। প্রকল্পের দুপাশে অবস্থিত বালু নদ ও শীতলক্ষ্যা নদীর সাঙ্গে এই বিশেষ লেক যুক্ত থাকবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের সাড়ে আট কিলোমিটার লেক নির্মাণ কাজ চলছে। বাকি প্রায় ৩৫ কিলোমিটার লেকের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০১৮ তে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নানা সমস্যা ও সার্বিক দিক বিবেচনায় নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা সম্ভব হবে না। এ জন্য আরও কিছু সময় নেয়া হয়েছে। প্রকল্প সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মানদ-ের ভিত্তিতে নকশা প্রনয়নসহ সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন কাজ চলমান রয়েছে। বিশ্বের উন্নত সকল আবাসিক এলাকার আদলে পূর্বাচল শহরকে আধুনিক ও স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। এরই অংশ হিসেবে বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তুলতে দৃষ্টিন্দন এই লেকটি তৈরি করা হচ্ছে। জানা গেছে, বিশাল এ লেকটির দু’ধার সংরক্ষণ করা হবে। পানিতে যাতে লেকের পাড় ভেঙ্গে না পড়ে সেজন্য স্থায়ীভাবে প্রটেকশন দেয়া থাকবে। লেকের পাশে সকাল সন্ধ্যা হাঁটার জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় চওড়া ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। বাচ্চাসহ সকল শ্রেণীর মানুষের সাইকেল চালানোর জন্য পৃথক সাইকেল ট্র্যাক তৈরি করা হবে। এ ছাড়া কিছদূর পরপর হাঁটা শেষে বিশ্রামের জন্য চেয়ার ও বেঞ্চ থাকবে। শোভা বর্ধন ও পরিবেশ রক্ষার পাশপাশি হাঁটা ও চলাফেরার জন্য লেকের দুপাশের জমিতে অসংখ্য দেশীয় ঔষধি ও দৃষ্টিনন্দন গাছ লাগানো হবে। প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এই লেকের উন্নয়ন কাজের মধ্যে ইতোমধ্যে আড়াই কিলোমিটার লেক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে ও ৪ কিলোমিটারের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের গাজীপুর অংশের ১০ কিলোমিটার লেক উন্নয়ন ও প্রটেকশন কাজের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ অংশের ২৬ কিলোমিটার লেক উন্নয়ন ও প্রটেকশন কাজ শুরু করতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ড্রইং, ডিজাইন, স্পেসিফিকেশন ও ইস্টিমেট জমা দিয়েছে। বর্তমানে তা যাচাই বাছাই পর্যায়ে রয়েছে। চূড়ান্ত যাচাই বাছাই শেষে কাজ শুরু করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রাজধানীর পরিবেশসম্মত সবচেয়ে বড় জলাধার হিসেবে পরিণত হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক জনকণ্ঠকে বলেন, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন লেক নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি হবে দেশের সর্ববৃহৎ কৃত্রিম লেক। বিশ্বের কোথায় কোন আবাসিক এলাকায় এর চেয়ে বড় কোন লেক আছে কি-না তা আমাদের জানা নেই। গড়ে দেড় শ’ ফুট চওড়া লেকটি পূর্বাচল প্রকল্পের সমস্ত এলাকাজুড়ে আকাবাঁকা হয়ে বহমান থাকবে।
×