ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় দেশে ১৪ লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় দেশে ১৪ লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় আগামী এক যুগে বাংলাদেশে ১৭ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ক্লাইমেট-স্মার্ট বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। টাকার অঙ্কে যা দাঁড়ায় ১৪ লাখ কোটি টাকারও বেশি। এ বিরাট বিনিয়োগ হবে পরিবহন, পরিবেশবান্ধব আবাসন, নগরে পানি সরবরাহ, কৃষি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়। ২০১৮ থেকে ২০৩০ সালে এ বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। এমনটাই মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি)। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে আইএফসি এমন আভাস দিয়েছে। প্রতিবেদনে আগামী ১২ বছরে দক্ষিণ এশিয়ায় মোট বিনিয়োগের সম্ভাবনা হচ্ছে ৩ হাজার ৩৭৯ বিলিয়ন ডলার বা ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে বিনিয়োগের সম্ভাবনার দিক দিয়ে ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। ভারতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা ৩ লাখ ৯ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। জাতিসংঘের জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। আইএফসির প্রতিবেদনেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিবেচনায় ঝুঁকি সূচকে বিশ্বের শীর্ষ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর এজন্য ঝুঁকি কমাতে সরকার এরই মধ্যে ২০০’র বেশি আইন ও ধারা তৈরি করেছে। আইএফসির প্রতিবেদন মতে, সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হবে পরিবেশবান্ধব আবাসনে। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে ১১ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। জ্বালানিসাশ্রয়ী ভবনকে গুরুত্ব দিয়ে খাতটিতে এ বিনিয়োগ হবে। বার্ষিক ৫০ লাখ বাসস্থানের চাহিদা পূরণে নগরে ৫ লাখ ও গ্রামে ৩৫ লাখ বাড়ি তৈরি গুরুত্ব পাবে। আবাসনের পর সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হবে পরিবহন অবকাঠামো খাতে। এ খাতে ২ হাজার ৩৭০ কোটি ডলার বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখছে আইএফসি। মূলত বহুমুখী গণপরিবহনকে গুরুত্ব দিয়ে খাতটিতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি নগরের দূষিত পানি ব্যবস্থাপনার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে এ খাতে ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখছে আইএফসি। এক্ষেত্রে পানিসম্পৃক্ত অবকাঠামো ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রাধান্য পাবে। এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ হবে ৩২০ কোটি ডলার। আইএফসি বলছে, নগরের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আগামী এক যুগে বিনিয়োগ হবে ৪০০ কোটি ডলার। ২০৩০ সাল নাগাদ নগরের ৮০ শতাংশ কঠিন বর্জ্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অপসারণের লক্ষ্য অনুযায়ী এ বিনিয়োগ হবে। এছাড়া জলবায়ু সহনীয় কৃষির উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে হবে ৯১০ কোটি ডলার। মূলত খাতটির আধুনিকায়ন ও জলবায়ু সহনীয় আধুনিক সেচ ব্যবস্থা প্রচলনে এ বিনিয়োগ করতে হবে। প্যারিস চুক্তির অধীনে বাংলাদেশের ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) সংশ্লিষ্ট সব খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিয়ে মোট ৪ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রাক্কলন করা হয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত এ প্রাক্কলন করা হয়। এছাড়া বিদ্যুত, পরিবহন ও শিল্প খাতে শর্তহীনভাবে ৫ শতাংশ ও শর্তসাপেক্ষে ১৫ শতাংশ নিঃসরণ কমিয়ে আনার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে এনডিসিতে। আইএফসি বলছে, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ আনতে কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের জোগান ও বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক ঋণ প্রদানে ব্যাংকগুলোকে আশ্বস্ত করতে প্রদর্শনী প্রকল্প পরিচালনা। ভূমি ক্রয় প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও ছাদে সৌরবিদ্যুত প্রকল্প জনপ্রিয়করণসহ পরিবেশবান্ধব নতুন ভবন তৈরির সুযোগ আসবে। ভূগর্ভস্থ পানির মূল্যবৃদ্ধি পানি সংরক্ষণে ভূমিকা রাখতে পারে।
×