ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় ফুলপ্রেমী পাঁচ ভাই

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নওগাঁয় ফুলপ্রেমী পাঁচ ভাই

ফুলকে যে ভালবাসে না, সে নাকি মানুষ খুন করতে পারে- পুরাকালের সেই প্রবাদটি এখনও ছড়িয়ে আছে মানুষের মনে। প্রতিটি মানুষের কোন না কোন শখ আছে। আর ফুল ভালবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ ইউনিয়নের কুন্দুনা গ্রামের জনৈক কাজেম উদ্দীন সরদারের ৫ পুত্র আনারুল ইসলাম, ইউনুস আলী, আতাউর রহমান, আলতাফ হোসেন ও ইউসুফ আলী এই ফুলের প্রতি অনন্য ভালবাসার নজির সৃষ্টি করেছেন। ওরা ৫ সহদোর। ৫ ভাই মিলেমিশে দেশী ও বিদেশী প্রায় অর্ধশত প্রজাতির ফুলের গাছ লাগিয়ে নিজ পরিচর্যায় গড়েছেন একটি শৌখিন পুকুরপাড়। পুকুরের চারপাশে শত শত ফুলের গাছ। আর সেই সঙ্গে পুকুরে চলছে মাছ চাষ। তাদের পুকুরে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন জাতের ফুলে সুশোভিত দৃশ্য দেখতে পুকুরে প্রতিনিয়তই আসছে লোকজন। তারা পুকুরের চার পাড়ে ফুলের বাগানে নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে ফেরেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই ৫ ভাই সকলেই ছোটবেলা থেকে ফুলকে ভালবেসে বিভিন্ন জাতের ফুলের গাছ বাড়ির উঠানসহ আশপাশের জায়গায় রোপণ করতেন। একপর্যায়ে ৫ ভাই মিলে পরামর্শ করে বাড়ির কাছেই ধনজইল-মাতাজীহাট পাকা সড়কের সঙ্গে লাগানো তাদের নিজস্ব পুকুর পাড়ে দেশী-বিদেশী ফুলের গাছ লাগিয়ে সাজানোর সিদ্ধান্ত নেন। এর পরই ৫ ভাই মিলে প্রায় বছর তিনেক আগে প্রথমে দেশী জাতের কিছু ফুলের গাছ রোপণের মধ্য দিয়ে শৌখিন পুকুর পাড় গড়ে তোলার স্বপ্ন শুরু করেন। মাত্র ৩ বছরেই তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। পুকুরটির চার পাড়ে ইতোমধ্যেই তাদের লাগানো পপি, পিটুনিয়া, চন্দ্র মল্লিকা, কসমস, জেনিয়া, সেলফিয়া, পান বাটিয়াসহ প্রায় অর্ধশত প্রজাতির দেশী-বিদেশী জাতের ফুলের গাছে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। আর দেশী-বিদেশী ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো শৌখিন পুকুরটি দেখতে এলাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন প্রতিনিয়তই আসতে শুরু করেছে এ পুকুর পাড়ে। সম্প্রতি নওগাঁ জেলা শহর থেকে ২৪ কিমি দূরে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ধনজইল-মাতাজীহাট পাকা সড়কের ধারের ৫ ভাইয়ের এ শৌখিন পুকুরে গিয়ে দেখা যায়, ছোট আকারের এ পুকুরটির চার পাশে দেশী ও বিদেশী প্রায় অর্ধশতাধিক প্রজাতির শত শত ফুল গাছে বাহারি রকমের প্রচুর ফুল ফুটে রয়েছে। পুকুরের মাঝখানে বসানো হয়েছে, একটি পানির ফোয়ারা। তাছাড়া পুকুরের মাঝে পানিতে সদ্য ফোটা লাল শাপলাও ভাসছে। এক কথায় পুকুরটি যে কোন লোকজন দেখলে তাকে সুন্দর করে সাজানো-গোছানো শৌখিন পুকুর হিসেবেই মেনে নিতে হবে নিঃসন্দেহে। পুকুর পাড়ে ফুল গাছের পরিচর্যা কাজেরত ৫ ভাইয়ের মধ্যে সকলের বড় ভাই আনারুল ইসলাম সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বলেন, আমরা ৫ ভাই সবাই ছোট থেকেই ফুল খুব ভাল বাসতাম। এ জন্য আমরা শখ করেই পুকুর পাড়টি ফুলগাছ দিয়ে সাজিয়েছি, আমরা বাড়ির সকলে মিলেই প্রতিদিন ফুল গাছের যতœ নেয়াসহ যাবতীয় পরিচর্যা করে থাকি। তিনি আরও জানান, আমাদের এ শৌখিন পুকুরটি ও দেশী-বিদেশী ফুল দেখার জন্য প্রতিনিয়তই এলাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে নারী-পুরুষ ও শিশুরা এসে ঘুরে ঘুরে দেখেন। এতে আমরা খুবই আনন্দ পাই। তিনি বলেন, আমরা কোন টাকা পয়সা নেই না। শখ করে গড়েছি, লোকজন দেখে আনন্দ পাচ্ছে এতে আমরাও আনন্দ পাচ্ছি। সবার ছোট ভাই রাইগাঁ উচ্চ-বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইউসুফ আলী জানান, আমরা পাঁচ ভাই এখনও একই সংসারের মধ্যে রয়েছি মিলেমিশে। আমরা ছোটবেলা থেকেই ফুল ভাল বাসতাম। আর এ ভালবাসা থেকেই শখ করে আমরা প্রথমে একটি পুকুর পাড় দেশী-বিদেশী ফুলগাছ দিয়ে সাজিয়েছি মাত্র। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×