ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষে রাখাইন পরিদর্শনে মিয়ানমারের না

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পরিস্থিতি জটিল রূপ নিচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পরিস্থিতি জটিল রূপ নিচ্ছে

মোয়াজ্জেমুল হক/ এইচএম এরশাদ ॥ রোহিঙ্গা ইস্যুতে সামগ্রিক পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে। অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে প্রত্যাবাসন বিষয়টিও। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের গন্ডি ছাড়িয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক আলোচিত হয়ে আসছে গত চার মাসেরও বেশি সময় ধরে। বিশ্ব চাপের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুকে নিজ দেশে যাচাই বাছাই করে ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত জানালেও হঠাৎ করে সামগ্রিক তৎপরতা নতুন করে হোঁচট খেয়েছে। এ অবস্থায় চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে নিরাপত্তা পরিষদকে রাখাইন সফরে যেতে নিষেধ করেছে মিয়ানমার। অপরদিকে, মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ দূত ইয়াং হি লি বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের গণহত্যার আলামত পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলপ্রয়োগ করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফেরত না পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া ইউএনএইচসিআর এর পক্ষ থেকে আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলা হয়েছে, আগামী বর্ষা মৌসুমে উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রিত এক লাখ রোহিঙ্গা পাহাড় ধস ও বন্যার কবলে পড়তে পারে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে রাখাইন রাজ্যে গণকবরের সন্ধান নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কর্মীদের সেখানে যাওয়ার যে আহ্বান জানানো হয়েছিল মিয়ানমার সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে জাতিসংঘ। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে, আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন (এআরইউ) ও ইউরোপে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংগঠন ইউরোপীয় রোহিঙ্গা কাউন্সিল (ইআরসি) যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মিয়ানমার সরকারের কাছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আটটি দাবি পেশ করেছে। বাংলাদেশ আশ্রয় ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার আগে নিরাপত্তা, মানবাধিকার এবং নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন দুই সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সর্বশেষ শুক্রবার পার্বত্য জেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর সীমান্তের তিনটি ক্যাম্প থেকে ৭৭ রোহিঙ্গা পরিবারের ৩৬৫ জনকে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে ঘুমধুমের কোনাপাড়া সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অভ্যন্তরে এখনও ৬ সহ¯্রাধিক রোহিঙ্গা সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তার মাঝে দিনাতিপাত করছে। মিয়ানমারের নিষেধ ॥ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষে রাখাইন পরিদর্শনের প্রস্তাব আপাতত নাকচ করে দিয়ে মিয়ানমার সরকার বলেছে, এখন সফরের উপযুক্ত সময় নয়। জাতিসংঘে নিযুক্ত কুয়েতের রাষ্ট্রদূত মানসুর আয়াদ আল ওতাইবিকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য দিয়েছে। মূলত কুয়েতের নেতৃত্বে এ সফরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এখন মিয়ানমারের পক্ষ থেকে নেতিবাচক বক্তব্য আসায় এ সফর আর হচ্ছে না। অপরদিকে, মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ দূত বৃহস্পতিবার সিউলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে যেসব আলামত পাওয়া যাচ্ছে তা রোহিঙ্গাদের গণহত্যার আলামত হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
×