ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

গোপনে সত্য তথ্য জোগাড় করে প্রকাশ করলে ভয়ের কিছু নেই ॥ তোফায়েল

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮

গোপনে সত্য তথ্য জোগাড় করে প্রকাশ করলে ভয়ের কিছু নেই ॥ তোফায়েল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সঠিক সংবাদ প্রকাশ করা হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের ভয়ের কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, কোন সাংবাদিক গোপনে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে তা যদি সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ব্যবস্থা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। মঙ্গলবার সচিবালয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) নব-নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। ওই সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন সাংবাদিক যদি একটা সত্য রিপোর্ট প্রকাশ করেন, এটাতে বোঝা যাবে এটা সত্য না মিথ্যা, তাহলে তার ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আমি মনে করি না, ‘ইফ দ্য রিপোর্ট ইজ কারেক্ট।’ প্রসঙ্গত, সমালোচিত ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা তথ্য প্রযুক্তি আইন থেকে সরিয়ে সেগুলো আরও বিশদ আকারে যুক্ত করে সোমবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সরকারী গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত ডিজিটাল উপায়ে ধারণ, স্থানান্তর বা সংরক্ষণ করা এবং তাতে সহয়তাকে গুপ্তচারবৃত্তির অপরাধ হিসেবে গণ্য করে ১৪ বছরের কারাদ- বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। এতে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার মতই এ আইন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে ব্যবহার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। ইতোমধ্যে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এই আইন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্য প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এছাড়া আইনের ৩২ ধারা নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যেও তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। গণমাধ্যম কর্মীদের আশঙ্কা, এই আইন বাস্তবায়িত হলে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও স্বাধীন মত প্রকাশ নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে বড় ধরনের বাধার মুখে পড়বেন গণমাধ্যম কর্মীরা। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানান, এ আইন পাস হলে হ্যাকিং, ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে অপপ্রচার, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করতে বা ভয়ভীতি সৃষ্টির জন্য কম্পিউটার বা ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং ডিজিটাল উপায়ে গুপ্তচরবৃত্তির মতো অপরাধে ১৪ বছরের কারাদা-ের পাশাপাশি কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদ- বা উভয় দ- দেয়া যাবে। আর ইন্টারনেটে কোন প্রচার বা প্রকাশের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধে আঘাত করার শাস্তি হবে ১০ বছরের জেল, ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-। বাণিজ্যমন্ত্রী দাবি করেন, বিএনপি সরকারের সময় প্রণীত আইসিটি আইনের ৫৭ ধারাকে নতুন আইনে স্পষ্ট করা হয়েছে। সঠিকভাবে, স্বচ্ছতার সঙ্গেই এটা করা হয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, পত্রপত্রিকায় একেকজন এমপির নামে চরিত্র উদঘাটন করে সে কোথায় গিয়েছে, কি করছে যেভাবে ছবি-টবি দিয়ে সাজানো হচ্ছে, কম তো হচ্ছে না। নির্বাচিত প্রতিনিধি, তারাও তো মর্যাদাশীল, যেভাবে লেখা হয়। তিনি বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অনেকে তথ্য সরবারহ করার চেষ্টা করে, যেগুলো সঠিক নয়। আবার দলের মধ্যেও আছে আমি নমিনেশন চাই, তাকে ছোট করি, এভাবেও তথ্য দেয়। প্রস্তাবিত আইন নিয়ে সাংবাদিকদের উদ্বেগের কথা জানানো হলে তোফায়েল বলেন, আপনারা আপনাদের মতো লিখে যান, কিন্তু সঠিকভাবে লেখেন। ভারত চাল রফতানি বন্ধ করেনি, আপনারা যদি লেখেন যে ভারত চাল রফতানি বন্ধ করেছে। আর (ব্যবসায়ীরা) দাম যদি বাড়িয়ে দেয়, তাহলে আমরা কী করব? দুর্নীতির তথ্য অনুসন্ধানে গেলে প্রস্তাবিত আইনে সেই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হতে পারে-এক সাংবাদিকের এমন শঙ্কার পর মন্ত্রী বলেন, গোপনে করবেন কেন? আমার এখানে আইসেন, আপনারা কোনটা জানতে চান আমি দেখিয়ে দেব। আমরা এই আইন করেও আপনাদের থামাতে পারব বলে আমার মনে হয় না।
×