ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গুরু-শিষ্যের মনোমুগ্ধকর কত্থক নৃত্যসন্ধ্যা

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮

গুরু-শিষ্যের মনোমুগ্ধকর কত্থক নৃত্যসন্ধ্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাইরে তখন নেমেছে আঁধার। জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে বাজছে নূপুরের নিক্বণ। নীলাভ আলোয় লাল পোশাকের নৃত্যশিল্পীরা মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সম্মিলনে ফুটিয়ে তুলছে কত্থক নাচের নান্দনিকতা। আর এই শিক্ষার্থীশিল্পীদের পরিবেশনাকে নিখুঁতভাবে উপস্থাপনে সহায়তা করছিলেন তাদের গুরু মুনমুন আহমেদ। এই বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পীর তত্ত্বাবধানে ছয় মাসের কত্থক নাচের কর্মশালায় অংশ নেয় পরিবেশনায় অংশগ্রহণকারী ২৪ জন শিক্ষার্থী। ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (আইজিসিসি) আয়োজিত সেই শিক্ষার প্রতিফলন ঘটল সোমবার শীতল সন্ধ্যায়। কত্থক নাচের মোহময়তায় মুগ্ধতা ছড়ালেন গুরু ও তার শিষ্যরা। এই নৃত্যসন্ধ্যার আয়োজন ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন। পরিবেশনা পর্বের আগে ছিল অতিথিদের সংক্ষিপ্ত কথন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। স্বাগত বক্তব্য দেন ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কত্থক নাচের শিক্ষক মুনমুন আহমেদ। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ভাষা নয়, সংস্কৃতির বন্ধনই মানুষকে একীভূত করতে পারে। সংস্কৃতির ভিন্নতার মধ্যেই ঐক্য গড়ে উঠে। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটা দিয়ে তরুণদের বিপথগামিতা থেকে রক্ষা করা যাবে না। তরুণদের সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট করার মাধ্যমে জঙ্গীবাদকে প্রতিহত করতে হবে। সংস্কৃতির আশ্রয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও গভীর করতে সংস্কৃতি হতে পারে মোক্ষম অস্ত্র। এটি ভাষার চেয়েও শক্তিশালী উপাদান যা মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, যদি ভাষাই মানুষকে একতার বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারত, তবে আরবী ভাষাভাষী মধ্যপ্রাচ্য এতগুলো দেশ না হয়ে একটি দেশ হতো। সাংস্কৃতিক ভিন্নতাই তাদের বিভিন্ন দেশে বিভক্ত করেছে। হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে সংস্কৃতি। সংস্কৃতির শক্তি দিয়ে পরাজিত করা যায় কুসংস্কারকে। মুনমুন আহমেদ বলেন, এই কত্থক নৃত্য সন্ধ্যাটি আমার জন্য একটি বড় পরীক্ষা। কারণ, ছয় মাসের প্রশিক্ষণে শিক্ষার্থীরা যা শিখেছে আজ তার প্রতিফলন ঘটবে। যদিও কোন শাস্ত্রীয় নৃত্যই ছয় মাসের কর্মশালায় আয়ত্ত করা যায় না। তারপরও যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। এই কর্মশালাটি অব্যাহত রাখলে ভবিষ্যতে এসব শিক্ষার্থীর মধ্য থেকেই ভাল শিল্পী বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনা শেষে শুরু হয় কত্থক নাচের পরিবেশনা পর্ব। শুরুতেই মুনমুন আহমেদের পরিচালনায় আইজিসিসির শিক্ষার্থীরা উপস্থাপন করে তাদের পরিবেশনা। গুরু বন্দনার মাধ্যমে এগিয়ে যায় উপস্থাপনা। এরপর তিন তালে উপস্থাপিত হয় টুকরা, পারান্থ, তিহাই, লারি ও উঠান। শিষ্যদের পরিবেশনা শেষে মঞ্চে আসেন গুরু মুনমুন আহমেদ। দর্শকের নয়নে প্রশান্তি ছড়িয়ে প্রথমে তিন তালে শুরু করেন পরিবেকশনা। এর পর তিনি গতের আশ্রয়ে মেলে ধরেন নাও ও ময়ূরের ছন্দ। সবশেষে তিনি ‘মোরে গাগারিয়া কাহে’ গানের সঙ্গে ঠুমরি পরিবেশন করেন। নাচের মুদ্রায় উঠে আসে রাধা-কৃষ্ণের মান-অভিমানের বয়ান। শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশনায় অংশ নেয়- শুভার্থী দে, মালিহা তাবাসুসম প্রিয়া, তানশা আরোরা, আঁখি নূর বিনতে আলী, জেসিয়া তাহজিদা, অদিতি শ্রী, রনবীর সাহা, আসিমা কামাল মৌমি, মাসুম রেজা, প্রাজ্ঞন ইয়েনিগালা, শ্রিবালা আলম প্রিয়া, চন্দ্র রোজারিও, দ্যোতনা ভট্টাচার্য, অনামিকা বিশ^াস সুর্বণা, ফারিবা সিনা, তানিশা তাসমিম সিনথিয়া, জামিল হোসেন, জাকোয়ান সালোয়া, প্রিয়তা সরকার, শ্রেয়া হালদার, নার্গিস সুলতানা, নীলাদ্রি পাল ও পৃথ্বি মেহজাবীন। অনুষ্ঠানে তাদের প্রত্যেককে ছয় মাসের প্রশিক্ষণের স্বীকৃতি হিসেবে সনদপত্র প্রদান করা হয়। মহিলা নবাব ফয়জুন্নেছাকে স্মরণ ॥ বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও পিএনএফ ট্রাস্টে যৌথ উদ্যোগে প্রথম মুসলিম মহিলা নবাব ফয়জুন্নেছার উপরে আয়োজিত সেমিনারে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেছেন, ফয়জুন্নেসা তার চিন্তা কাজকর্মে ছিলেন সে সময়ের চেয়ে অনেক বেশি আধুনিক। সেকালের সমাজ ব্যবস্থার সবরকম বাধা পেরিয়ে তিনি সম্পূর্ণ কুসংস্কার মুক্ত সমাজ গঠনে মনোযোগ দিয়েছিলেন। তাই একজন নারী হয়েও সে সময়ে জমিদারির কঠোর দায়িত্ব তিনি সফলভাবে পালন করতে পেরেছেন। তিনি নির্ভীকভাবে শাসনকাজ পরিচালনা করেন। সোমবার জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাকক্ষে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম ও সংস্কৃতিসচিব ইব্রাহিম হোসেন খান। আলোচক ছিলেন মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম, ইতিহাসবিদ সোনিয়া নিশাত আমিন এবং প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক আলতাফ হোসেন। এতে প্রামাণ্যচিত্র ও প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিএনএফ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক সুপন রায়। আলোচকরা বলেন, নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী নিজের অদম্য ইচ্ছার কারণে শিক্ষিত হন। শিক্ষা, সমাজকল্যাণ ও সেবাব্রতে তিনি যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তা ইতিহাসে বিরল। নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা নওয়াব। তিনি সমাজ সংস্কারের অংশ হিসেবে মেয়েদের শিক্ষার প্রতি জোর প্রচেষ্টা করেন।
×