ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাইপলাইনে থাকা অর্থের পরিমাণ ৪ হাজার কোটি ডলার;###;সরকারের উন্নয়ন কাজের গতি বাড়ায় বিদেশী ঋণ-সহায়তা বাড়ছে

বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি ॥ ছয় মাসেই বছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮

বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি ॥ ছয় মাসেই বছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন

আনোয়ার রোজেন ॥ গত অর্থবছরের মন্দাভাব কাটিয়ে উঠেছে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ প্রতিশ্রুতি। বিদেশি সহায়তার পালে সুবাতাস লেগেছে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই। সেই ধারাবাহিকতায় অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এযাবতকালের সর্বোচ্চ অর্থছাড় হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিশ্রুতি আদায়ে বাজেটে এক বছরের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা পূরণ হয়েছে ছয় মাসেই। এ সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৬৮৭ কোটি ৩৯ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার ঋণ প্রতিশ্রুতি আদায় করা গেছে, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৬০০ কোটি ডলারের। যদিও এটি গত অর্থবছরের তুলনায় কম। তবে গত অর্থবছর ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্পের একবারেই অনেক বেশি টাকার ঋণ চুক্তিসই হয়েছিল। তাই সেটিকে অস্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গত ছয়মাসে অর্থছাড় হয়েছে ২৬১ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের প্রায় দ্বিগুণ। গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থছাড় হয়েছিল ১৩২ কোটি ৪১ লাখ ৭০ হাজার ডলার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের উন্নয়ন কাজের গতি বাড়ায় বিদেশী ঋণ-সহায়তা বাড়ছে। এটি এক অর্থে সরকারের উন্নয়ন সক্ষমতার স্বীকৃতিও বটে। সরকার দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারছে বলেই দাতারা দ্রুত অর্থছাড় করছেন। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, আমরা অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। দেশে উন্নয়নের এক ধরনের জোয়ার তৈরি হয়েছে। আর এতে সন্তুষ্ট হয়ে ডোনাররা এখন বেশি অর্থ ছাড় করছে। একইসঙ্গে দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর প্রতিশ্রুত অর্থের পরিমাণ, যা পাইপলাইনে রয়েছে, ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। একই বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, হলি আর্টিজান ট্র্যাজেডির কারণে মাঝখানে একটি বছ মেগাপ্রজেক্টগুলোতে স্থবিরতা এসেছিল। এই সময়ে আমরা বিদেশীদের আশ্বস্ত করেছি। ফলে তারা ফিরে এসেছেন। এখন পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ বাদে বাকি ৯টি মেগাপ্রকল্পের কাজ পূর্ণগতিতে এগিয়ে চলেছে। অর্থছাড় সামনের বছর আরও বাড়বে। ইআরডি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোট অর্থছাড় হয়েছে ২৬১ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ঋণের পরিমাণ হচ্ছে, ২৪১ কোটি ৬৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার এবং অনুদান ২০ কোটি ৩ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থাৎ ছয় মাসে অর্থছাড় হয়েছিল ১৩২ কোটি ৪১ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এর মধ্যে ঋণ ছিল ১১১ কোটি ৯৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার আর অনুদান ছিল ৪৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার। ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে প্রতিশ্রুতি ॥ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি এসেছে মোট ৬৮৭ কোটি ৩৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এর মধ্যে ঋণ ৬৭২ কোটি ১২ লাখ ডলার আর অনুদান ১৫ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে প্রতিশ্রুতি ১ হাজার ৪২৬ কোটি ১৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার। এর মধ্যে ঋণ ছিল ১ হাজার ৩৯৭ কোটি ৫২ লাখ ৯০ হাজার ডলার আর অনুদান ২৮ কোটি ৬৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার। এ প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, শুরু থেকেই প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে নজর দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার সুফল মিলেছে। ফলে বৈদেশিক অর্থছাড় বেড়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিশ্রুতিও অনেক পাওয়া গেছে। এটাকে ইআরডির সাফল্য বলা যায়। ইআরডি সূত্র জানায়, ২০১১-১২ হতে ২০১৫-১৬ পর্যন্ত পাঁচ বছরে অর্জিত বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতির পরিমাণ ২৮ দশমিক ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (গড়ে প্রতি অর্থবছরে ৫ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার)। একই সময়ে বৈদেশিক সহায়তা ছাড়করণের পরিমাণ ১৪ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার (যা গড়ে প্রতি অর্থবছরে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ)। উল্লেখ্য, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি প্রথমবারের মতো ছয় বিলিয়ন ডলারের ল্যান্ডমার্ক অতিক্রম করেছে এবং বৈদেশিক সহায়তার ছাড়করণও স্বাধীনতার পর সর্বোচ্চ। গত পাঁচ বছরে দাতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি ও ছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপানভিত্তিক উন্নয়ন সহযোগী জাইকা। বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত পাঁচ বছরে দেয়া সহায়তার দ্বিগুণেরও বেশি। এডিবি আগামী পাঁচ বছরে (২০১৬-২০২০) সহায়তার পরিমাণ ৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা আগের একই সময়ের চেয়ে (২০১১-২০১৫) তিন বিলিয়ন ডলার বেশি। এই সময়ে জাইকার সহযোগিতার পরিমাণও বেড়েছে। বেড়েছে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ॥ সরকারের বিদেশী ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাও একই সময়ে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। গত ছয় মাসে পরিশোধ করা হয়েছে ৬৫ কোটি ৯০ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এর মধ্যে আসলের পরিমাণ হচ্ছে ৫২ কোটি ২১ লাখ ৮০ হাজার ডলার এবং সুদের পরিমাণ ছিল ১৩ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ পরিশোধ করা হয়েছিল ৫৩ কোটি ৭৯ লাখ ২০ হাজার ডলার। এর মধ্যে আসলের পরিমাণ ছিল ৪২ কোটি ৫২ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং সুদের পরিমাণ ছিল ১১ কোটি ২৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার। এ হিসাব করার দায়িত্বপ্রাপ্ত ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ও ফাবা ইউং এর প্রধান ফরিদা নাসরিন বলেন, বাজেটে চলতি অর্থবছর ৫৭ হাজার কোটি টাকার বিদেশী ঋণ পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা আশা করছি সেটি পুরোপুরি অর্জন করতে না পারলেও তার কাছাকাছি পাওয়া যাবে। গত ছয় মাসে যে অর্জন হয়েছে সেটি অনেক ভাল। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন নীতিমালা ও কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে অর্থছাড়ও। প্রতিশ্রুতি আদায়ের যে লক্ষ্য তা পূরণ হয়েছে ছয় মাসেই।
×