ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা, তারেকসহ ছয় আসামির রায় ৮ ফেব্রুয়ারি

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮

খালেদা, তারেকসহ ছয় আসামির রায় ৮ ফেব্রুয়ারি

বিকাশ দত্ত ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় রায় ঘোষণা করা হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে বকশীবাজার কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান রায়ের জন্য এ দিন নির্ধারণ করেন। আদালতে দুদকের পক্ষে প্রধান কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল খালেদা জিয়াসহ ছয় আসামির সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী আবদুর রেজাক খান মামলাটিকে সারবত্তাহীন উল্লেখ করে খালেদা জিয়ার খালাস চান। আলোচিত এ মামলায় দুদক ও আসামিপক্ষ মোট ১৬ কার্যদিবস যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে। মোট ২৩৬ কার্যদিবস শুনানির পর মামলাটি রায়ের পর্যায়ে এলো। বিচারক যখন রায়ের দিন ঠিক করে দিচ্ছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও তখন বিচারকক্ষে উপস্থিত ছিলেন। এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়া তার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার জন্য ৩০, ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৮ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা আরও ১৪টি মামলার কার্যক্রম এখন থেকে বকশীবাজারের সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা ও সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখন থেকে এ মামলাগুলো সেখানেই চলবে। মামলাগুলো হলো দারুস সালামের নাশকতার আট মামলা, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা, নাইকো দুর্নীতি মামলা, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা, যাত্রাবাড়ী থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা ও মানহানির দুই মামলা। বর্তমানে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রায় তিন ডজন মামলা চলমান আছে। গত বুধবার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুবার্ষিকীতে আদালতে হাজিরা থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে বিচারক রেহাই দিলেও আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া। সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণের পর রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আমরা সকল প্রকার অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। মামলার রায়ে তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।’এ মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদ- বলে জানা গেছে। এর আগে ১৯ ডিসেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তি উপস্থাপন কালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল যুক্তিতর্কে বলেছিলেন, ‘বিদেশী অনুদানের অর্থ এতিমদের কল্যাণে খরচ না করে আসামিরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে হস্তান্তর, রূপান্তর করেছেন। বছরের পর বছর তারা ওই অর্থ পাচার করেছেন। সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে যে অর্থ প্রাইম ব্যাংকে আসে, এ অর্থ দুই ভাগে ভাগ হয়। পরে আসামি মোস্তাফিজুর রহমান ও তারেক রহমানের যৌথ এ্যাকাউন্ট থেকে এ অর্থ উত্তোলন করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বগুড়া ও বাগেরহাটে এতিমখানা নির্মাণের জন্য আদালতে যে অর্থের তথ্য দেয়া হয়েছে, তার কোন ভিত্তি নেই। সাক্ষীদের সাক্ষ্য অনুযায়ী যে টাকা দেশে এসেছে, সে টাকা রাষ্ট্রের। এ টাকা আত্মসাতের দায় আসামিদের নিতে হবে।’ আসামি পক্ষের আইনজীবীদের ইঙ্গিত করে মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, ‘এ টাকা কোথায় ব্যয় হলো বা কোথায় গেল এই ব্যখ্যা তারা দিয়ে যাবেন।’ ‘ভুয়া সম্পত্তি কিনে এবং একটি সিভিল মামলা দায়ের করে টাকা আত্মসাতের নাটক সাজিয়েছিলেন আসামিরা। ৩২ জন সাক্ষীর জবানবন্দী উপস্থাপন করে আমি আদালতে যে বিবরণ দিয়েছি, এর মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি বলে মনে করি। আর তাই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০৯ ও ৪০৯ দ-বিধিতে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করছি। খালেদা জিয়া খালাস পাবেন ॥ অপরদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী আব্দুর রেজ্জাক খান বলেন, এ মামলাটি একটি সারবত্তাহীন মামলা। রাষ্ট্রপক্ষ কোন অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি। কোন এভিডেন্সেই মামলাটি প্রমাণিত হয়নি। কুয়েত থেকে আসা অর্থে খালেদা জিয়ার কোন সংশ্লিষ্টতাও প্রমাণ হয়নি। মামলায় বেগম খালেদা জিয়া খালাস পাবেন। এদিকে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল জনকণ্ঠকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রায় ৩৭টি মামলা রয়েছে। এগুলো সবই রাজনৈতিক মামলা। হেরেজমেন্ট করার জন্যই এ সমস্ত মামলা গুলো দায়ের করা হয়েছে। আমরা আইনী ভাবেই এ গুলো মোকাবেলা করব। কোন মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয় ॥ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক শ.ম রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেন, আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান। রাজনৈতিক নেতা বা অর্থবিত্তে প্রভাবশালী কারও জন্যই আইনে কোন আলাদা বিধান রাখা হয়নি। সংবিধান অনুসারে সকলেই আইনের দৃষ্টিতে সমআচরণ প্রাপ্য। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা সমূহ গুরুতর অভিযোগ সম্বলিত। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থায় তিনি আতœপক্ষ সমর্থনের সকল সুযোগ পাবেন। ফলে মামলাগুলো দ্রুত বিচার হওয়াটাই সংবিধান সম্মত। অনাহূতভাবে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রলম্বিত, করা আইন সমর্থন করে না। সে কারণেই আইন সম্মত উপায়েই বিচার নিষ্পতি হলে বিচারপ্রার্থী উভয় পক্ষই উপকৃত হবেন। কোন মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়। ফৌজদারি অপরাধ অভিযোগে তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পাবার পরেই অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে। এই বিচার ব্যবস্থা কে রাজনীতির নামে প্রশ্নবিদ্ধ করা কোনভাবেই যুক্তি সঙ্গত নয়। শেষ দিনের যুক্তিতর্ক ॥ এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৩৮ মিনিটের দিকে আদালতে পৌঁছান বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এ মামলার দুই আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তাদের আইনজীবী আহসান উল্লাহ। তাকে সহায়তা করেন সৈয়দ মিজানুর রহমান। তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল। তার বক্তব্য শেষে খালেদা জিয়ার পক্ষে আবার রিপ্লাই বক্তব্য রাখেন সিনিয়র আইনজীবী রেজাক খান।
×