ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১২ জানুয়ারি এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল

রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংকের অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮

রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংকের অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংকে সাত হাজারের বেশি অফিসার পদে নিয়োগের জন্য গত ১২ জানুয়ারি যে সমন্বিত পরীক্ষা নেয়া হয়েছিল, তা বাতিল করেছে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত এক জরুরী সভায় সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির। সভা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামাল। সদস্য সচিব থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন মহাব্যবস্থাপক। সদস্য থাকবেন রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, রাকাব এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একজন করে প্রতিনিধি। তিনি জানান, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য দুই সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার, অফিসার ও ক্যাশ অফিসারের মোট ৭ হাজার ৩৭২টি শূন্য পদে নিয়োগের এ পরীক্ষায় আবেদন করেছিল পৌনে ১১ লাখ চাকরি প্রত্যাশী। সমন্বিত এই নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগকে। অব্যবস্থাপনার বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে জানিয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, যারা পরীক্ষার দায়িত্বে ছিলেন, তাদের কাছে একটি ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। তদন্ত প্রতিবেদন ও ব্যাখ্যা আসার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কবে এবং কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হবে। এর আগে এক রিট আবেদনে এ পরীক্ষা হওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হলেও শেষ মুহূর্তে সুপ্রীমকোর্টের চেম্বার আদালতের আদেশে এই নিয়োগ পরীক্ষার পথ তৈরি হয় গত বৃহস্পতিবার। আগের ঘোষণা অনুযায়ী ১২ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এমসিকিউ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। রাজধানীর ৬১ কেন্দ্রে এই নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হলেও সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী সেদিন পরীক্ষা দিতে পারেননি। এরমধ্যে রাজধানীর শাহ আলী মহিলা কলেজে ৫ হাজার ৬০০ পরীক্ষার্থীর জন্য পর্যাপ্ত বসার জায়গা ছিল না। মাত্র ৩০ জনের বসার ব্যবস্থা থাকা কক্ষে গাদাগাদি করে এক থেকে দেড় শ’ পরীক্ষার্থীকে বসতে দেয়া হয়। লাইব্রেরি কক্ষ, সেমিনার কক্ষ, শিক্ষকদের মিটিং রুমে গাদাগাদি করে বসতে দেয়া হয়। শিক্ষকদের অফিসরুম এমনকি প্রিন্সিপালের নিজের চেয়ারে বসতে দেয়া হয় পরীক্ষার্থীদের। এরপরও শ’ শ’ পরীক্ষার্থী বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন। তারা জায়গা পাননি। এমন অব্যবস্থাপনার কারণে পরীক্ষার্থীরা কলেজটির জানালা দরজা ভাংচুর করে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও ওএমআর শিট ছিঁড়ে ফেলে। বাধ্য হয়ে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যসচিব মোশাররফ হোসেন খান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ওই কেন্দ্রের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেন। আগামী ২০ জানুয়ারি শুধু ওই কেন্দ্রের পরীক্ষা নেয়া হবে বলে তিনি ঘোষণা দেন। অন্যদিকে দনিয়া এ কে স্কুল এ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট পর প্রশ্নপত্র এসে পৌঁছায়। এরপর গত শুক্রবারের ওই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেয়া, ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির (বিএসসি) সদস্য সচিবের পদত্যাগ, প্রতিটি কেন্দ্রে আসনবিন্যাস নিশ্চিত করা, বিতর্কিত কেন্দ্র বাদ দেয়া, বিকল্প কোন প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্ন প্রণয়নের দায়িত্ব দেয়াসহ নয় দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে চাকরি প্রত্যাশীরা। এর আগে গত সোমবার আন্দোলনরতদের দুজনকে দৈনিক বাংলা মোড় থেকে আটক করে পুলিশ। এরপর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন, ১২ ঘণ্টার মধ্যে ওই দুজনকে ছেড়ে দেয়া না হলে এবং ১২ জানুয়ারির পরীক্ষা বাতিল না করলে তারা কঠোর আন্দোলনে যাবেন। এই পরিস্থিতিতে গবর্নর ফজলে কবির মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি এবং ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের জরুরী বৈঠক ডাকেন। মঙ্গলবার দুপুরে ওই বৈঠক শেষে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দিলে শাহবাগে উল্লাসে ফেটে পড়ে আন্দোলনরত চাকরি প্রত্যাশীরা।
×