ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার উচ্চপর্যায়ের সংলাপ আগামী মাসে

যুদ্ধের আশঙ্কা কমল

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮

যুদ্ধের আশঙ্কা কমল

উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী মাসে শীতকালীন অলিম্পিক শুরু হওয়ার আগেই এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর ফলে কোরিয়া উপদ্বীপে যুদ্ধের যে আশঙ্কা যুক্তরাষ্ট্র করেছিল সাময়িক তার অবসান হলো। ইয়াহু নিউজ। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী পরমাণু বা ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী থেকে বিরত হওয়ার কোন ইঙ্গিত দেননি। বরং নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তিনি এই আলোচনার সুযোগকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। আঞ্চলিক উত্তেজনা হ্রাসের চেষ্টা স্বল্প স্থায়ী হতে পারে। দুই বছর থেমে থাকার পর মঙ্গলবার দুই কোরিয়া ফের আলোচনার টেবিলে ফিরছে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বা ট্রাম্প নিজেও এ নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নন। ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার ওপর সীমিত আকারের সামরিক আক্রমণ করার ইচ্ছা পোষণ করতেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমগুলোতে ফাঁস হওয়া মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাতে এটি জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মকর্তারা এসব জানিয়েছেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাকমাস্টার সব সময়ই উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষপাতী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস এবং অন্যান্য সামরিক কর্মকর্তারা অবশ্য কূটনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন। তারা মনে করেন, কূটনৈতিক উপায়ে কাজ না হলে বিকল্প পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে প্রশাসন সামরিক ও অসামরিক বহু বিকল্প নিয়ে কাজ করেছে। তবে এ বিষয়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে কোন মতভেদ ছিল না সে প্রসঙ্গে তিনি কোন মন্তব্য করতে চাননি। অভ্যন্তরীণ এসব আলোচনার বিষয়ে পেন্টাগন কোন মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। তবে একজন মুখপাত্র বলেছেন যে, ম্যাটিস সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক উপায়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ওপরই গুরুত্ব আরোপ করেছেন। পররাষ্ট্র দফতরকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, কূটনৈতিক তৎপরতার নেপথ্যে সামরিক বিকল্প ব্যবস্থারও সমর্থন থাকবে। জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন সামরিক ব্যবস্থার কথা বিবেচনা করলেও তার মাত্র একটি টার্গেট থাকত। কিম উনের সরকারের পতন ঘটানো এর উদ্দেশ্য হতো না। কেবল তাকে সতর্ক করার লক্ষ্যে ওই হামলা পরিচালনা করা হতো। এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে উত্তর কোরিয়ারা আঞ্চলিক মিত্র চীনের কাছ থেকে কঠিন পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসত না। ট্রাম্প প্রশাসন করে কেবল গালে আঘাত করলেই কিম উনের টনক নড়বে। পূর্ববর্তী কোন প্রশাসনই বিষয়টি নিয়ে কাজ করেনি। এছাড়া এটি করা হলে চীনের ওপরও কিছুটা চাপ সৃষ্টি করা হবে যেন তারা কিম উনকে পরমাণু বা ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী থেকে বিরত রাখার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এটি স্পষ্ট নয় যে যেসব তথ্য ফাঁস হয়েছে সেটি ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকৃত পরিকল্পনা নাকি কিম উনের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল। দক্ষিণ কোরিয়ায় ফেব্রুয়ারিতে শীতকালীন অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হবে। উত্তর কোরিয়া এতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে বলে জানিয়েছে। কোন কোন মার্কিন কর্মকর্তা বলছেন, উত্তর কোরিয়া চায় ওয়াশিংটনের আঞ্চলিক মিত্র সিউলের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগবাড়িয়ে নিজের একটি সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করতে। ১৯৫০ থেকে ৫৩ সাল পর্যন্ত চলা কোরিয়া যুদ্ধ কোন শান্তিচুক্তি বা যুদ্ধবিরতি ছাড়াই শেষ হয়েছে। এ কারণে পিয়ংইয়ং এখনও তাত্ত্বিকভাবে ওয়াশিংটন ও সিউলের সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় রয়েছে। এদিকে কিম উনের সঙ্গে সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘আমার তো মনে হয় কিম জং উনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভাল।’ পরমাণু প্রকল্প নিয়ে ট্রাম্প ও উন উভয়ই পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ বাক্যবাণ ছুড়েছেন। দুজন দুজনকে পাগলও বলেছেন। কয়েক মাস আগেও ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার উপর ‘আগুনের বৃষ্টি ঝরানোর’ হুমকি দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, কিম যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখ-ে আঘাত হানতে সক্ষম পরমাণু অস্ত্র তৈরিকে তার দেশ অনেকটা অগ্রসর হয়েছে বলে সতর্ক করেছেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন, শীতকালীন অলিম্পিক উপলক্ষে কোরীয় উপদ্বীপে যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়া সামরিক মহড়া স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটা উত্তর কোরিয়ার জন্য একটি ভাল বার্তা।’
×