ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

সহকারী মহাসচিব পদে বাংলাদেশ প্রার্থী

ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন আগামী মে মাসে ঢাকায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১২ জানুয়ারি ২০১৮

ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন আগামী মে মাসে ঢাকায়

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ মুসলিম দেশগুলোর জোট ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের ৪৫তম সম্মেলন আগামী মে মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় সাড়ে তিন দশক পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ওআইসির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কোন সম্মেলনের আয়োজন করতে চলেছে। এদিকে ওআইসির সহকারী মহাসচিব পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। ওআইসি পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সম্মেলনকে সামনে রেখে ওই প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়েছে। আর আগামী ৫-৭ ফেব্রুয়ারি ওআইসির পর্যটন মন্ত্রীদের সম্মেলন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৮৩ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো ওআইসি পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় আসন্ন এ সম্মেলন থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারে দেশের মাটিতে বড় ধরনের সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওআইসি সম্মেলনের জন্য সম্ভাব্য দুটি স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। তবে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) হওয়ার বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া প্রটোকল সেবা এবং থাকার জন্য অভিজাত বেশ কয়েকটি হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে রেখেছে মন্ত্রণালয়। সম্মেলন আয়োজনে এখনও চার মাসেরও বেশি সময় হাতে রয়েছে। সে কারণে সম্মেলন নিয়ে প্রাথমিক অগ্রগতি সম্পন্ন করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সম্মেলনের জন্য কমপক্ষে ২২০ গাড়ি লাগবে। সম্মেলনে আসা অতিথিদের যাতায়াতের জন্য ৩০টি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি কেনা হচ্ছে। এছাড়া ১০টি কোস্টার, পাঁচটি বাস ও পর্যাপ্ত মাইক্রোবাসের প্রয়োজন হবে। উন্নতমানের ৪০টি দামী গাড়ি এবং ১০টি কোস্টার প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ থেকে অনুদান হিসেবে সংগ্রহ করা হবে। গত বছর মে মাসে আইভরি কোস্টের আবিদজানে ৪৪তম সম্মেলনে ওআইসিভুক্ত সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশে ৪৫তম সম্মেলন হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র, ওআইসির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ ওআইসি ট্রয়কার অংশ এবং আগামী তিন বছরের ওআইসির ৮ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য হয়। এবারের ওআইসির সম্মেলন ঢাকায় হওয়ায় এর গভীর তাৎপর্য রয়েছে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকার্তারা। তারা বলেছেন, সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করবে ওআইসি। আন্তর্জাতিক ফোরমগুলো রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় যেভাবে সোচ্চার রয়েছে, ঠিক এমন সময়ে এই ধরনের বড় আয়োজন বাংলাদেশকে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে। সম্মেলন থেকে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা নিজ নিজ দেশের অবস্থান আরও দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করবেন এবং সেখান থেকেও একটি রেজ্যুলেশন পাশ হবে। এতে করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আরও সহজতর হবে। সব মিলিয়ে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা ঘনীভূত হবে। সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ইসলামিক কমন মার্কেটের গন্তব্যে পৌঁছার লক্ষ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য ও এফটিএ বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সম্মেলনে উন্নয়ন ও ইসলামী সংহতির গুরুত্বের ওপর জোর দেয়া, বৃহত্তর আন্তঃওআইসি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম প্র্যাকটিস বিনিময়, দারিদ্র্য বিমোচন, আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি, শান্তিরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থা দমন এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ওপরে গুরুত্বারোপ করবে বাংলাদেশ। ঢাকায় ওআইসি পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠানের আগে আগামী ৫-৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ওআইসি পর্যটন মন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলন নিয়েও প্রস্তুতি চলছে। এতে ওআইসি জোটের দেশগুলোর মধ্যে পর্যটন সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এদিকে ওআইসির সহকারী মহাসচিব পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। ঢাকায় অনুষ্ঠেয় ওআইসি পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের ৪৫তম সম্মেলনকে সামনে রেখে এই প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়েছে। ওআইসির ৫টি সহকারী মহাসচিব পদ রয়েছে। মহাসচিবের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তার অন্যতম ওই পদে এবারে বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল আহসান। এ পদে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী কাজাখস্তান। ওআইসিতে প্রতিটি মহাদেশ থেকে একজন করে সহকারী মহাসচিব থাকেন। এশিয়া মহাদেশ থেকে কাজাখস্তান ও বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তবে ৫৭ মুসলিম রাষ্ট্রের জোট ওআইসির অনেক সদস্যের সমর্থন পাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, এবারে ওআইসির যে পদে বাংলাদেশ লড়ছে সেটির অবস্থান সংস্থাটির অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী দ্বিতীয় সারিতে হলেও তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮৩ সালের পর এবারই প্রথম বাংলাদেশ ওআইসি পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সম্মেলন আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে। সেই বিবেচনায় এবারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন বা সিএফএম আয়োজনের হোস্ট কান্ট্রি হিসেবেও সহকারী মহাসচিব পদে নির্বাচনে বাংলাদেশ বাড়তি সুবিধা পেতে পারে বলে আশা ঢাকার।
×