ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

এবার পুলিশ সপ্তাহে ১৮২ জনকে পদক দেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৮ জানুয়ারি ২০১৮

এবার পুলিশ সপ্তাহে ১৮২ জনকে পদক দেয়া হচ্ছে

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশ জঙ্গী দমনে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার কারণে এবারের পুলিশ সপ্তাহে ‘১৮ তে সবচেয়ে বেশি পদকে পুরষ্কৃত হচ্ছেন জঙ্গী দমনের কৃতিত্বের অধিকারী পুলিশ কর্মকর্তারা। এবারের পুলিশ সপ্তাহ যে ১৮২ জনকে পদক দেয়া হচ্ছে তার মধ্যে ১০৬ জনই পদক পাচ্ছেন জঙ্গী দমনের কৃতিত্বের জন্য। এর মধ্যে ৩ জন কর্মকর্তা জঙ্গী দমন করতে শহীদের স্বীকৃতি পেয়ে মরণোত্তর পদক পাচ্ছেন। এ ছাড়াও জঙ্গী দমন করতে গিয়ে আহত হয়ে যন্ত্রণায় ভুগছেন এমন ২০ কর্মকর্তাকেও পদকে ভূষিত করা হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানান, এবারের পুলিশ সপ্তাহে ১৮২ জন কর্মকর্তার মধ্যে ৪ ধরনের পদক প্রদান করা হবে। যেই ৪ ধরনের পদকে পুলিশ সদস্যদের পদকে ভূষিত করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (পিপিএম), বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল-সেবা (বিপিএম-সেবা), প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম), প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল-সেবা (পিপিএম-সেবা)। এবারের পুলিশ সপ্তাহে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ৩০ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), ৭১ জনকে রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) দেয়া হচ্ছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ২৮ সদস্যকে বিপিএম-সেবা ও ৫৩ জনকে পিপিএম-সেবা পদক দেয়া হচ্ছে। এবারের পদক তালিকায় জঙ্গী দমনে যুক্ত পুলিশ-র‌্যাবের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রাধান্য রয়েছে। সোমবার পদকপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের পদকে ভূষিত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, যেই ৩ কর্মকর্তা মরণোত্তর পদক বিপিএম পাচ্ছেন তারা হচ্ছেন র‌্যাবের গোয়েন্দাপ্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ পরিদর্শক চৌধুরী মোঃ আবু কয়ছর ও পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম। অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ মরণোত্তর বিপিএম দেয়া হচ্ছে এই তিন কর্মকর্তাকে। তারা গত ২৫ মার্চ সিলেটের শিববাড়ির আতিয়া মহলের জঙ্গী আস্তানায় অভিযানের সময় এ তিন কর্মকর্তা বোমা হামলায় নিহত হন। বিদায়ী বছর দেশব্যাপী জঙ্গীবিরোধী অভিযানে বাংলাদেশ পুলিশের ০৩ জন সদস্য সম্মুখসমরে শহীদ হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করছেন কনস্টবল হতে সহকারী পুলিশ সুপার পদবির ২০ জন পুলিশ সদস্য। আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা, নৈপুণ্য, কৌশল, গোয়েন্দা কার্যক্রম, গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে অপারেশনগুলোতে মূল্যবান এবং অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছেন বাংলাদেশ পুলিশের চৌকস গোয়েন্দা সদস্যরা। এবছরে সাহসিকতা ও সেবামূলক কর্মকা- এবং জঙ্গীবিরোধী কাজকর্মে অভূতপূর্ব অবদান, আত্মত্যাগ ও সাফল্যের জন্য নিহত ও আহতসহ মোট ১০৫ জনকে পদকের জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় বেশি। বিগত বছর পুলিশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ১৮২ জনকে পদকের জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় বেশি। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানান, এবারের পুলিশ সপ্তাহে জঙ্গী দমনের লক্ষ্যে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য বিপিএম পদকে ভূষিত হচ্ছেন অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি ও বর্তমানে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত আইজিপি শফিকুল ইসলাম, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম, পুলিশ সদর দপ্তরের ইন্টেলিজেন্স এ্যান্ড স্পেশাল এ্যাফেয়ার্স বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামান, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ডিসি মহিবুল ইসলাম খান, এডিসি এসএম নাজমুল হক, এডিসি রহমত উল্লাহ চৌধুরীসহ ৩০ কর্মকর্তা। বিপিএম-সেবা পদক পাচ্ছেন সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি শেখ হিমায়েত হোসেন, পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহম্মেদ, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান, ঢাকা জেলার এসপি শাহ মিজান শাফিউর রহমান, সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের এডিসি নাজমুল ইসলামসহ ২৮ জন। পিপিএম পদক পাচ্ছেন র‌্যাবের লে. কর্নেল আরিফ উদ্দিন মাহমুদ, লে. কর্নেল মাহাবুব আলম, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ডিসি প্রলয় কুমার জোয়ারদারসহ ৭১ জন। অন্যদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি রৌশন আরা বেগম, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলামসহ ৫৩ জন পিপিএম- সেবা পদক পাচ্ছেন। পুলিশ সপ্তাহের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গী দমনের কারণে বেশিসংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তা হতাহতসহ কৃতিত্ব প্রদর্শন করার কারণেই এবছর বেশিসংখ্যক পুলিশ সদস্য পদকে ভূষিত হচ্ছেন। বিদায়ী বছর ২০১৭ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী ও উগ্র মৌলবাদীরা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থেকে হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ, বোমাবাজি ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করেছিল। জঙ্গীবাদীদের এ চক্রান্ত আপাতভাবে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণের সার্বিক সহযোগিতায়। পুলিশ কর্মকর্তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই আজ সমগ্র জাতি, সরকার বিশ্ববাসীর কাছে জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুলিশের বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সাফল্য রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পয়েছে। জঙ্গীবাদ মোকাবেলা করতে গিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের অকুতোভয় সদস্যগণ ধৈর্য, বিচক্ষণতা, সাহস ও পেশাদারিত্ব সর্বোপরি দেশপ্রেমের অনুপম পরিচয় দিয়ে চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেশকে জঙ্গী দমনে রোল মডেল পরিচিতি এনে জঙ্গীমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।
×