ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিঃস্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফের চিকিৎসার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ৮ জানুয়ারি ২০১৮

নিঃস্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফের চিকিৎসার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ মর্মস্পর্শী এক ফেসবুক স্ট্যাটাস দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তাঁরই নির্দেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে রাজনীতিক ও শ্রমিক আন্দোলনে নিবেদিত প্রাণ বীর মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মোহাম্মদ ইউসুফের। রাঙ্গুনিয়া থেকে নির্বাচিত এ সংসদ সদস্য সম্পূর্ণ নিঃস্ব অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে এগোচ্ছেন মৃত্যুর দিকে। চিকিৎসার অভাবে তার শরীরে পচন ধরেছে, অসহনীয় যন্ত্রণায় কাঁতরাচ্ছিলেন তিনি। রবিবার তাকে নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সরকারী খরচে সাবেক এই এমপির চিকিৎসা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী। আন্দোলন সংগ্রামে এক সময়ের তুখোড় কমিউনিস্ট নেতা মোহাম্মদ ইউসুফ ’৯১ সালের নির্বাচনে আটদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে সাকা চৌধুরীকে পরাজিত করে এমপি হয়েছিলেন। নির্লোভ এ নেতা এমপি হয়েও নিজের স্বার্থ গড়ার চিন্তা করেননি। রণাঙ্গনের সম্মুখযোদ্ধা ইউসুফ ঘর সংসারও করেননি ব্যক্তি জীবনে। একপর্যায়ে কমিউনিস্ট পার্টির বেশ ক’জন নেতার সঙ্গে তিনিও যোগ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগে। অকৃতদার মোহাম্মদ ইউসুফের এমন কোন সহায় সম্পদ নেই। ছোট ভাইয়ের আয়ের উৎস ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। তিনি বড় ভাইকে রেখে তার সামর্থ্য অনুযায়ী চিকিৎসা এবং সেবা দিয়ে আসছিলেন। সতেরো বছর ধরে ছোট ভাই সেকান্দরের সঙ্গেই আছেন সাবেক এমপি ইউসুফ। কিন্তু হঠাৎ করে তার শারীরিক অবস্থার বেশি অবনতি ঘটে। অবস্থা এতটাই খারাপ এবং চিকিৎসা এমনই ব্যয়বহুল যে ছোট ভাইয়ের পক্ষে তা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। মোহাম্মদ ইউসুফের পায়ে পচন ধরে। সপ্তাহখানেক ধরে তিনি অনেকটাই নির্বাক। কেউ দেখতে গেলে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মাসিক ভাতাটাই ছিল তার আয়। কিন্তু এ দিয়ে চিকিৎসার খরচ চলে না। শেষ পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি স্ট্যাটাস দৃষ্টি কেড়েছে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আশরাফুল আলম খোকনের। তিনি বিষয়টি অবহিত করলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দ্রুত তার চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাসুকুর রহমান সিদ্দিকী এ বিষয়ে এক দাফতরিক চিঠিতে সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুর রহমান সিদ্দিকীকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানান। রবিবার সকালেই সিভিল সার্জন দুটি এ্যাম্বুলেন্স এবং তিন চিকিৎসক নিয়ে রাঙ্গুনিয়ায় মোহাম্মদ ইউসুফের বাসায় যান। সেখান থেকে তাকে এনে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একটি কেবিনে ভর্তি করা হয়। চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এক সময়কার বামপন্থী ছাত্র সংগঠন নেতা হাসান ফেরদৌস গত ৫ জানুয়ারি তার ফেসবুক ওয়ালে মর্মস্পর্শী একটি স্ট্যাটাস দেন নিঃস্ব এমপি মোহাম্মদ ইউসুফকে নিয়ে । এতে তিনি মোঃ ইউসুফের সংগ্রামী জীবন, মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং নির্লোভ রাজনীতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে লেখেন, ‘আসুন আমরা আমাদের বিবেককে জাগ্রত করি। এভাবে আর কোন রাজনীতিক, সাবেক সংসদ, বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অর্থকষ্টে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে যেন মরতে না হয়।’ স্ট্যাটাসটি অনেকেই শেয়ার করেন। এতে অনেক প্রবাসী তার চিকিৎসায় সাহায্যে আগ্রহ ব্যক্ত করেন। চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তিনি রবিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সাংবাদিক হাউজিং কার্যালয়ে একটি বৈঠকও আহ্বান করেন। কিন্তু এর মধ্যেই এলো প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই মহানুভবতায় তার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা। তিনি সব সময়ই এ ধরনের দুস্থদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে থাকেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। একইসঙ্গে হাসান ফেরদৌস স্ট্যাটাসটি শেয়ার করে যারা দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে ভূমিকা রেখেছেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান।
×