ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ভাষণ

আমরা জনগণের ভাগ্য গড়তে এসেছি ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৫ জানুয়ারি ২০১৮

আমরা জনগণের ভাগ্য গড়তে এসেছি ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা সরকারে এসেছি নিজেদের ভাগ্য গড়তে নয়, জনগণের ভাগ্য গড়তে। আর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া মানিলন্ডারিং (অর্থ পাচার) আর মানুষ পোড়ানোতে পারদর্শী। এরা মানুষের ক্ষতি করতে পারে, উপকার করতে পারে না। মানুষের ভাল করতে পারে না। কারণ, তাদের (খালেদা জিয়া) হাত দিয়ে মানুষের ভাল আসে না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার তার সরকারী বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সাক্ষাত করতে গেলে তাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কড়া সমালোচনা করে বলেন, আজকে যখন আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করছি তখন খালেদা জিয়া বক্তৃতা দেন যে, ওই পদ্মা সেতু নাকি জোড়াতালি দিয়ে করা হচ্ছে। কেউ নাকি পদ্মা সেতুতে উঠবে না! প্রধানমন্ত্রী জবাব দিতে গিয়ে বলেন, একদিকে ঠিক, যেহেতু একেকটি পার্টস তৈরি করে তারপর একেক স্থানে বসানো হচ্ছে পদ্মা সেতুতে। এটা কী জোড়াতালি বলে? এখন যার (খালেদা জিয়া) এটুকু জ্ঞান নেই যে, একটা জিনিস নির্মাণ করতে হলে কিভাবে, কি পদ্ধতিতে করতে হয়। তার জবাব কী দেব? তিনি বলেন, আসলে উনার (খালেদা জিয়া) মাথায় যা আছে সেটা হচ্ছে কীভাবে চুরি করা, টাকা বানানো, এতিমের টাকা মেরে খাওয়া, মানুষ পোড়ানো, মানুষ হত্যা করা; এসব। একটা সেতু বানানোর মতো ঐ ক্ষমতা বিএনপি নেত্রীর নেই। উনি এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন ওনার কথার মধ্য দিয়েই। বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, একদিকে আমরা যখন শিক্ষা, চিকিৎসাসহ মানুষের সব ধরনের সেবার দিকে নজর দিচ্ছি তখন আমরা দেখি: যারা নিজেদের লেখাপড়ার দিকে তো নজর নেই, সেই দলটি নানা ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, একটা ব্যাপারে তারা (বিএনপি) পারদর্শী তা হলো মানিলন্ডারিং করা। ইতোমধ্যে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে মানিলন্ডারিং করে ধরা পড়েছে। বিএনপি নেত্রীর অর্থ পাচারের ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টে ধরা পড়েছে এবং সেই আদালতে প্রমাণ হয়েছে যে, সে মানিলন্ডারিং করেছে। যার জন্য তারেক রহমানের বিচারে সাজা হয়েছে ৭ বছর কারাদ-, ২০ কোটি টাকা জরিমানা। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপি নেত্রীর আরেক ছেলের (আরাফাত রহমান কোকো) পাচারকৃত অর্থ ধরা পড়েছে সিঙ্গাপুরে। সেই টাকা আমরা সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত এনেছি। আর বিএনপি নেত্রীও কম যান না। যারা এতিমের টাকা মেরে খান, বিদেশে অর্থ পাচার করে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে, তারা (খালেদা জিয়া) দেশের মানুষকে কি দেবে? ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মন দিয়ে লেখাপড়া করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগের জন্মই হয়েছে বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায় করার জন্য। বাংলাদেশের সব অর্জনের পেছনেই রয়েছে ছাত্রলীগের অনেক ত্যাগ। তাই ছাত্রলীগের প্রতিটি ছেলে-মেয়েকে আমি বলব, মনোযোগ দিয়ে সবাইকে লেখাপড়া করতে হবে। খালি অংক আর উর্দুতে পাস করলে চলবে না। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, আমাদের সংস্কৃতি-সাহিত্য সব কিছুই পড়তে হবে, জ্ঞানার্জন কতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে দেশকে আগামীতে নেতৃত্ব দিতে হলে শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা ছাড়া কখনও নিজেকে গড়ে তোলা যাবে না, দেশকে এগিয়ে নেয়া যাবে না। শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগের যে মূল নীতি সে নীতি ধরে এগুতে হবে। শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার আলোকবর্তিতা হাতে নিয়ে শান্তি ও প্রগতির দিকে এগিয়ে যেতে হবে ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে- এটাই বড় কথা। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, বাড়িতে গেলে আশপাশে কেউ যদি নিরক্ষর থাকে তাকে অন্তত অক্ষরজ্ঞান দিতে হবে। ছেলেমেয়েদের উৎসাহিত করতে হবে পড়াশোনার দিকে। শত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আজকে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করছি। তাই আমরা সরকারে এসেছি নিজের ভাগ্য গড়তে নয়, জনগণের ভাগ্য গড়তে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বক্তব্য রাখেন। এ সময় মঞ্চে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের উপস্থিত থাকলেও তিনি কোন বক্তব্য রাখেননি। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়, মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। তবে গণভবনে বিপুল সংখ্যক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর উপস্থিতির কারণে তাদের তল্লাশি করে ভেতরে প্রবেশ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেশ বেগ পেতে হয়। ভেতরে প্রবেশ নিয়ে মৃদু ধাক্কাধাক্কি হলেও সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে তা শান্ত হয়।
×