ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কলেজ থিয়েটার বগুড়ার ‘মহাদেব’ ও ‘সংসার’ মঞ্চস্থ

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭

কলেজ থিয়েটার বগুড়ার ‘মহাদেব’ ও ‘সংসার’ মঞ্চস্থ

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ পাবনা ড্রামা সার্কেলের তিনযুগ পূর্তি উপলক্ষে চারদিনব্যাপী নাট্যোৎসবের দ্বিতীয় দিন শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পাবনা টাউন হলে কলেজ থিয়েটার বগুড়া ‘মহাদেব’ এবং ফিউশন পালা ‘সংসার’ মঞ্চায়ন করে। ‘মহাদেব’ নাটকটি রচনা করেছেন ওসমান গণি এবং নির্দেশনা দিয়েছেন শোভন চন্দ্র সরকার। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন সিজুল ইসলাম, ফারিহা রহমান রায়জা, নির্মল মাহাতো, কে এম আশিক, রাসেল মিয়া জাদু, রুহুল আমিন রনি, সাকিব শুভ, বিশাল চাকী, মনিরুল, অনু প্রমুখ। আবহ সঙ্গীতে সুবাস চন্দ্র দাস মিঠু, সুব্রত কুমার সজল, রাশিয়ান চন্দ্র। বাংলার মানুষ হাজার বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন নিয়ে বসবাস করছে। দীর্ঘদিন আবার ছিল পরাধীন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মুখে ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে ধর্মভিত্তিক দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তান। ৪৭ সালের দেশ ভাগের সময় কিছু কিছু জায়গায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি হয় যার জের ধরে মুসলমানরা দলে দলে পাকিস্তানে আর হিন্দুরা ভারতে চলে যায়। অনেকে এই স্রোতে গা ভাসায় কিন্তু কেউ কেউ আবার আটকে যায় নাড়ীর টানে। এই নাটকের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় সূত্রধর মহাদেব শৈশব কৈশরের স্মৃতি, সবুজ প্রকৃতি, বয়ে চলা নদী, মায়ের স্মৃতি নিয়ে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে চায় পৈত্রিক ভিটায়। গ্রামে গ্রামে যখন হিন্দু মুসলমানের দ্বন্দ্ব প্রকট তখন মহাদেবের বাবা ছোট ভাই সঞ্জয় আর স্ত্রী পুষ্পরাণী ভারতে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পরিবারের এই সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে মহাদেবের দেশপ্রেম আর মমত্ববোধ তীব্র হয়ে উঠে সে দেশান্তরী না হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। ফলে বিভেদ সৃষ্টি হয়। হিসাব নিকাশ না জানা সহজ সরল মহাদেবের এমন সিদ্ধান্তে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়া তার স্ত্রী ও ছোটভাই পুলকিত হয়ে উঠে চরিত্রের অবনমন ঘটে। এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে সকলকে মুক্তি দিতে মায়ের স্মৃতি বিজড়িত দেশের মাটি ছাড়বে না বলে মহাদেব আত্মহননের পথ বেছে নেয়। স্তম্ভিত হয়ে যায় সকলে। শ্মশানের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় মহাদেবের মনোহর নিস্তার দেহ সেখানে মায়ের মুখ আগনি করতে শেষবার গিয়েছিল মহাদেব। মহাদেব জয় করে মাতৃপ্রেম আর বাকিরা সাম্প্রদায়িকতার উর্ণজালে দেশ জাতির কাছে পরাজিত হয়। এমনি গল্পের নাটক ‘মহাদেব’। ফিউশান পালা ‘সংসার’ এর পালা ভাবনা সাইফুল ইসলাম বুলবুল এবং নির্দেশনা নির্মল মাহাতো। ফিউশন পালার দল সঙ্গীরা সিজুল ইসলাম, নির্মল মাহাতো, সাইফুল ইসলাম বুলবুল, রাসেল মিয়া জাদু, কে এম আশিক, স্বাধীন, মুগ্ধ। আবহ সঙ্গীত সুবাস চন্দ্র দাস মিঠু, সুব্রত কুমার সজল, রাশিয়ান চন্দ্র,পবিত্র কুমার। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের স্লোগান ‘হাতের মুঠোয় হাজার বছর আমরা চলেছি সামনে’। নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন তার বর্ণনাত্মক রীতি ও দ্বৈতাদ্বৈতবাদ তত্ত্বে বার বার বলার চেষ্টা করেছেন আমরা যে নাট্যচর্চা করে যাচ্ছি তা কয়েক যুগের নয় কয়েক শতকের নয় হাজার বছরের। যে আদিসত্তা খুঁজে পাওয়া যায় বাংলার নানা লোকজ পালায়। এ দেশের পথে প্রান্তরে মাঠে ময়দানে পালার প্রচলন দীর্ঘদিনের। পালার সঙ্গে বাংলার লোকজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মেল বন্ধন গড়ে উঠেছে। সে সংস্কৃতি লালনের লক্ষ্যে বগুড়ার শিকড় সন্ধানী কলেজ ভিত্তিক নাটক সংগঠন প্রথম বারের মতো কুশানপালা, বিয়ের গীত, নসিমন পালা, বেহুলার পালা, ময়মনসিংহ গীতিকা, আলকাপ এবং যাত্রাপালার আঙ্গিক নিয়ে পরিবেশন করছে ফিউশন পালা সংসার।ফিউশন একটি ইংরেজী শব্দ যার আভিধানিক অর্থ সংমিশ্রণ।এই নব সংমিশ্রণে শাশ্বত ধারাকে কলেজ থিয়েটার ‘সংসার’ ফিউশান পালার মাধ্যমে তুলে ধরে।
×