ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

সব বৈষম্য-দারিদ্র্য দূর করার চেষ্টার কথা বললেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ নির্মূলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের তাগিদ

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭

সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ নির্মূলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ, বৈষম্য দূর করতে হলে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ধারাবাহিক আন্দোলন করার তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, আমাদের সবাইকে শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে। সকল গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া সবচেয়ে বড় বিষয় হলো দেশের সবচেয়ে বড় শত্রু উগ্র- সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ। যে কোন মূল্যে এই শ্বাপদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় আরও এগিয়ে থাকা উন্নয়ন সূচকগুলো দেশকে সামনের দিকে নিতে ব্যর্থ হবে। এজন্য যারা উগ্রবাদী শক্তিকে লালন করছে তাদের চিহ্নিত করে জাতি তথা বিশ্ববাসীর কাছে মুখোশ উন্মোচিত করারও তাগিদ দেয়া হয়। শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার কর্মীসহ বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘সাম্প্রদায়িক, জঙ্গীবাদ ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলুন’ এই স্লোগান সামনে রেখে এবারের সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারেক আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, জাসদ একাংশের সাধারণ সম্পাদক সাংসদ শিরীন আক্তার, নাট্য সংগঠক রামেন্দ্র মজুমদার এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল্লাহ। সম্মেলনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সম্মেলন উদযাপন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারোয়ার আলী। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ, বৈষম্য দূর করতে হলে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ধারাবাহিক আন্দোলন করতে হবে। এই এমিরিটাস অধ্যাপক বলেন, আজকের বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংবিধানের যে চার মূলনীতি তা অনেকখানি বিকার আমরা দেখছি। গত কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের ঘটনা দেখছি। আদিবাসীদের প্রতি আচরণে যে অন্যায্য সেটা দেখছি। যা মোটেও আমরা কেউ আশা করিনি। কোন দিনও আশা করব না। বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ বলেন, দেশে বৈষম্য দূর করতে ব্যর্থ হয়েছে, সেটা দেখছি। আজকে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি আমাদের চলতে হয়, তাহলে ধারাবাহিকভাবে আবার আন্দোলন পরিচালনা করা দরকার। তিনি বলেন, জনগণের কাছে আমাদের মূল্যবোধগুলো নিয়ে যেতে হবে এবং তাদের সেই মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, যাতে এই যে বিভীষিকাময় সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারি। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন এই কাজটি করতে পারবে বলে বিশ্বাস করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তিনি বলেন, যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ অবস্থায় তৃণমূলে যেতে পারি, তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক মঞ্চে উদ্বুদ্ধ করতে পারি তাহলে আজকের বাংলাদেশের যে অবস্থা তা থেকে উত্তরণ করা সম্ভব হবে। সকল বৈষম্য-দারিদ্র্য দূর করার জন্য চেষ্টা করার কথা বলেছেন বরেণ্য এই শিক্ষাবিদ। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নের পথে যেন সরকার অগ্রসর হয় সেই চেষ্টা আমাদের করতে হবে। আমাদের শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে। সকল গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে আমরা সময়ে সময়ে যা কিছু অর্জন করি সেটা আমরা ধরে রাখতে পারব না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, রাষ্ট্রের সংবিধান রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তরা তা রক্ষা করছে না। যারা সংবিধান রক্ষার দায়িত্বে আছে, তারা সংবিধানের কোন ধারাটা মানছে ? কোন অংশটা মানে ? সেটা নিয়েও নিজেদের মধ্যে আমরা অনেক কনফিউশন তৈরি করেছি, অনেক অস্বচ্ছতা তৈরি করেছি। সেটা বন্ধ করার একটা ব্যাপার রয়েছে। তিনি বলেন, সংবিধানে এখনও আমরা যে কথাগুলো রেখেছি যে, রাষ্ট্রের চোখে সকল নাগরিক সমান অধিকারের দাবিদার থাকবেন। সেই জায়গা যদি আমরা গোছাতে না পারি তাহলে আজকের সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ, অন্যের ওপর অত্যাচার, ভূমিগ্রাস করার যে প্রক্রিয়া চলছে, অনবরত আমরা এই দেশটাকে একরৈখিক ও অত্যন্ত সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে পরিণত হতে দেখব। তিনি বলেন, দেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি করলেও ‘সুশাসন ও মানবাধিকারের’ দিক থেকে ইতিবাচক সংবাদ দিতে পারছে না। কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য দিয়ে গত এক বছর দেশের মানবাধিকারের ক্ষেত্রে অবনতির কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরেন দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবির চেয়ারপার্সন সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, এক বছরে নারী নির্যাতনের ঘটনার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনায় ঘটেছে প্রায় হাজার খানেক। ধারাবাহিকভাবে সাম্প্রদায়িক যে হাঙ্গামা হয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪৫ বাড়িঘর ধ্বংস-অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, ৫৭ জনকে আটক করা হয়েছে। ১৭৪ মন্দির-মঠ ধ্বংস করা হয়েছে। ৫৭৪ শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে, এটা যেকোন বিবেকবান ব্যক্তিকে কাঁপিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। গুম-খুন প্রসঙ্গে সুলতানা কামাল বলেন, আমরা দেখছি মানুষ প্রতিদিন গুম কিংবা বিচারবহিভর্িূত আচরণের শঙ্কার মধ্যে বাস করছে। এই পর্যন্ত ৫৪টি গুমের ঘটনা ঘটেছে, তাদের কেউ কেউ ফিরেছেন। কেউ কেউ ফিরে আসেননি। যারা ফিরে এসেছেন তারা কিভাবে গুম হলেন, কিভাবে ফিরে এলেন তার তা বলার সাহস পাচ্ছেন না, এমনি আতঙ্কের মধ্যে বাস করতে হচ্ছে। সিপিবির উপদেষ্টা মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চলমান রাখতে হবে। দেশের প্রতিটি মানুষকে বোঝাতে হবে আমাদের সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা চলছে। যেখানেই এ রকম বাস্তবতা দেখা যাবে সেখানেই সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
×