ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফিল্ড ট্রেনিংয়ে এসে রোগীর ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছে প্রাইভেট মেডিক্যাল এ্যাসিস্টেন্ট

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসকের চেয়ারে বহিরাগত

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসকের চেয়ারে বহিরাগত

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবায় প্রতারণা করা হচ্ছে। চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে চেম্বারে বসে রোগীর ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন বহিরাগতরা। আসলে তারা কোন চিকিৎসক নয়। প্রাইভেট মেডিক্যাল এ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে তারা সরকারী এ হাসপাতালে বিনা বেতনে ৬ মাসের জন্য মাঠ প্রশিক্ষণে (ফিল্ড ট্রেনিং) এসেছেন। রোগীরা উন্নত চিকিৎসার আশায় এ হাসপাতালে এসে না জেনে বহিরাগতদের দেয়া ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। গত মঙ্গলবার হাসপাতালের বহির্বিভাগের ১২৩ নম্বর কক্ষে অর্থোপেডিক বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ আ ন ম বজলুর রশীদ টুলুর অনুপস্থিতিতে তার কক্ষে রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছিলেন দয়াময় ম-ল নামে এক বহিরাগত। তার প্রতারণা ফাঁস হওয়ার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এর কয়েকদিন আগে ডেন্টাল ও চক্ষু বিভাগে বহিরাগতরা রোগীর চিকিৎসা দেয়ার ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল। যশোর সদর উপজেলার চান্দুটিয়া গ্রামের ইয়াকুব সরদারের স্ত্রী মোমেনা খাতুন পা পিছলে পড়ে অসুস্থ হলে মঙ্গলবার তাকে আনা হয় যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে। এ সময় জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক কল্লোল কুমার সাহা তাকে অর্থোপেডিক বিভাগে রেফার্ড করেন। স্বজনেরা তাকে নিয়ে যান বহির্বিভাগের ১২৩ নম্বর কক্ষে। দরজার সামনে ডাঃ আনম বজলুর রশীদের নাম সংবলিত সাইনবোর্ড টানানো থাকলেও ভিতরে রোগীর চিকিৎসাসেবা দিচ্ছিলেন আরেকজন। মোমেনা খাতুনের ছেলে শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে ডাঃ বজলুর রশীদ টুলুকে চেনেন। তার কক্ষে আরেকজনকে দেখে তার সন্দেহ হয়। এ সময় তিনি বিষয়টি এক সংবাদকর্মীকে জানান। ওই সংবাদকর্মীসহ কয়েকজন রোগীর স্বজন সেখানে গিয়ে চিকিৎসক সেজে রোগীর ব্যবস্থাপত্র দেয়া ব্যক্তির কাছে তার পরিচয় জানতে চায়। তখন তিনি জানান তার নাম দয়াময় ম-ল। তিনি চিকিৎসক নন। প্রাইভেট মেডিক্যাল এ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে ৬ মাসের ফিল্ড ট্রেনিংয়ে এ হাসপাতালে এসেছেন। তাহলে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন কেন জানতে চাওয়া হলে দয়াময় ম-ল কক্ষ থেকে দ্রুত বের হয়ে নিজেকে আত্মগোপন করেন। অর্থোপেডিকের ডিউটি রোস্টারের তথ্যানুযায়ী গত মঙ্গলবার বহির্বিভাগে ১২২ নম্বর কক্ষে অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ গোলাম ফারুক ও ১২৩ নম্বর কক্ষে দায়িত্ব ছিল মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ আ ন ম বজলুর রশীদ টুলুর। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে সহযোগী অধ্যাপকের চেয়ারে বসে রোগী দেখছেন মেডিক্যাল অফিসার। আর মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ আ ন ম বজলুর রশীদ টুলুর কক্ষে রোগীর চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন বহিরাগত দয়াময় ম-ল। কয়েক রোগীর স্বজন জানান, ডাঃ বজলুর রশীদ টুলুর প্রশ্রয়ে তার কক্ষে বসে বহিরাগত দয়াময় ম-ল চিকিৎসাসেবায় প্রতারণার সাহস পেয়েছেন। হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (নিট) যশোর শাখা থেকে প্যারামেডিক বিষয় শেষ করা ৬ জনকে ৬ মাসের মাঠ প্রশিক্ষণ করার সুযোগ চেয়ে গত ১১ জুন প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মেহেদী হাসান যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে আবেদন করেন। ওই ৬ জন হলেন কাকলী মুস্তারী, খালেদা সুলতানা, বিকাশ দেবনাথ, কৃষ্ণ গোপাল, রবিউল ইসলাম ও দয়াময় ম-ল। গত ১ জুলাই তত্ত্বাববধায়ক ডাঃ একেএম কামরুল ইসলাম বেনু তাদের প্রশিক্ষণের অনুমতি দেন। আর এ সুযোগে এসব বহিরাগতরা চিকিৎসক সেজে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। কয়েকদিন আগে বহিঃবিভাগের চক্ষু ও ডেন্টাল বিভাগে চিকিৎসকের পরিবর্তে বহিরাগতরা রোগীর ব্যবস্থাপত্র দেয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে ওইসব বহিরাগতদের ট্রেনিং অনুমোদন বাতিল করে হাসপাতাল থেকে বের করার হুমকি দেয়া হয়। তবুও তাদের প্রতারণা থেমে নেই। চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে তারা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। মেডিক্যাল এ্যাসিস্টেন্টের প্রতারণার ব্যাপারে ডাঃ বজলুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য না করে তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ গোলাম ফারুক জানান, আমি বেলা পৌনে ১২টার দিকে চেম্বার থেকে বেরিয়ে মেডিক্যাল কলেজে গিয়েছিলাম। এ সময় ডাঃ বজলুর রশীদ টুলুকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন মেডিক্যাল এ্যাসিস্টেন্ট কোনভাবেই রোগীর চিকিৎসা দিতে পারবেন না। তার কাজ হলো চিকিৎসক স্বাক্ষরিত ছোট কাগজে ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধের নাম লিখে দেবেন। হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডাঃ ওয়াহিদুজ্জামান ডিটু জানান, মেডিক্যাল এ্যাসিস্টেন্ট চিকিৎসক সেজে রোগীর ব্যবস্থাপত্র দেয়া মানে প্রতারণা। তিনি অর্থোপেডিক বিভাগে খোঁজ নিয়ে দেখছেন। এর আগে চক্ষু ও ডেন্টাল বিভাগে এমন ঘটনায় তাদের কঠিনভাবে সতর্ক করা হয়েছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম কামরুল ইসলাম বেনু জানান, কোন মেডিক্যাল এ্যাসিস্টেন্ট রোগীর ব্যবস্থাপত্র দিতে পারবেন না। তাদের কাজ হলো রোগীর চিকিৎসাসেবা প্রদানের সময় চিকিৎসককে সাহায্য করা। আমি কয়েকদিনের ছুটিতে আছি। যদি কোন মেডিক্যাল এ্যাসিস্টেন্ট চিকিৎসক সেজে রোগীর চিকিৎসা দেন তাহলে কর্মস্থলে ফিরে তার ট্রেনিং অনুমোদন বাতিল করে দেব।
×