ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

পৌষের সন্ধ্যায় ছায়ানটে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুর

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭

পৌষের সন্ধ্যায় ছায়ানটে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরে জেঁকে বসা শীতের সন্ধ্যা হয়ে ওঠে উপভোগ্য। উচ্চাঙ্গের সুর, তাল ও লয়ের খেলায় শ্রোতার অন্তরে ছড়ায় প্রশান্তির পরশ। সেই সুরসুধা অবগাহনে সন্ধ্যা থেকে সুররসিকের ভিড় জমেছিল ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে। রাত দশটা অবধি চলা সেই সুরভ্রমণে পরিপূর্ণ ছিল মিলনায়তন। রাগ-রাগিণীর সুরের সঙ্গে শাস্ত্রীয় ধারার যন্ত্রসঙ্গীতের সুরমূর্ছনার নির্যাসে বিমোহিত হয়েছে শ্রোতাকুল। এভাবেই নির্মল আনন্দের বারতায় বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো ছায়ানট আয়োজিত দু’দিনব্যাপী শুদ্ধসঙ্গীত উৎসব। দুই অধিবেশনে বিভক্ত উৎসবের সূচনা হয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। সম্মেলক কণ্ঠে শিল্পীরা গেয়ে শোনায় জাতীয় সঙ্গীত। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি গানের সুরে শুরু হয় প্রথম অধিবেশন। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন ছায়ানটের সহসভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল। স্বাগত কথন শেষে শুদ্ধসঙ্গীত উৎসব উ™ে^াধন করেন রাজশাহী থেকে আগত প্রবীণ উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী মঞ্জুশ্রী রায়। তরুণ প্রজš§সহ সব বয়সীর কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের গুরুত্ব তুলে ধরতে ১৪১৫ বঙ্গাব্দের হেমন্তে প্রথম শুদ্ধ সঙ্গীত উৎসবের আয়োজন করে ছায়ানট। তারই ধারাবাহিকতায় এবার বসল এ উৎসবের দশম আসর। উৎসবে কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীতের সুর মূর্ছনায় অংশ নিচ্ছেন ঢাকা, রাজশাহী, নওগাঁ ও চট্টগ্রামের অর্ধশতাধিক শিল্পী। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরু হয় সাড়ে চার ঘণ্টা ব্যাপ্তির প্রথম অধিবেশনের পরিবেশনা। অষ্টকল্যাণ রাগের আশ্রয়ে শুরু হয় পরিবেশনা পর্ব। অনেক কণ্ঠ গেয়ে যায় এক সুরে। রেজোয়ান আলীর পরিচালনায় ছায়ানটের শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে উপস্থাপন করে পরিবেশনাটি। এ সময় শিল্পীদের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন ইফতেখার আলম ডলার। সম্মেলক সুর থামতেই একক কণ্ঠের পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন ঢাকার শিল্পী দীপ্তি সমাদ্দার। পরিবেশন করেন রাগ ‘মধুবন্তী’। এ শিল্পীর সঙ্গেও তবলায় সঙ্গত করেন ইফতেখার আলম ডলার এবং হারমোনিয়ামে ছিলেন টিংকু শীল, তানপুরায় সঞ্চিতা দাস তৃষা ও লায়েকা বশীর। এরপর মঞ্চে আসেন ঢাকার কণ্ঠশিল্পী সতীন্দ্রনাথ হালদার। তিনি গেয়ে শোনান রাগ ‘শ্রী’। তার সঙ্গে বাদ্যযন্ত্রে তবলায় সঙ্গত করেন সবুজ আহমেদ, হারমোনিয়ামে বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি এবং তানপুরায় বিপ্লবী রানী কর্মকার। টানা দুটি কণ্ঠসঙ্গীতের সুরলাপ থামতেই বেজে ওঠে বাদ্যযন্ত্র সেতারের স্নিগ্ধ সুর। রাগ ‘জয়িতকল্যাণ’ বাজিয়ে শোনান ঢাকার সেতার বাদক এবাদুল হক সৈকত। এ শিল্পীর সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন সুরজিৎ মুখার্জী। সেতারের সুরের মুগ্ধতায় যখন আবিষ্ট শ্রোতা, সেই মুগ্ধতাকে বিস্তৃত করে ভেসে বেড়ায় বেহালার সুরনিনাদ। বেহালায় আবেগী সুর-লহরী ছড়িয়ে দেন রাজধানীর বেহালাবাদক শিল্পী শিউলী ভট্টাচার্যী। তিনি পরিবেশন করেন রাগ ‘ঝিনঝুটি’। পরিবেশনায় তবলায় সঙ্গত দেন সবুজ আহমেদ। বেহালার সুরের অনুরণন থামতেই মঞ্চে আসেন খায়রুল আনাম শাকিল। কণ্ঠে তুলে নেন রাগ ‘ভিন্নষড়জ’। মাধুর্যময় পরিবেশনায় আবারও বিমোহিত হতে হয় শ্রোতাদের। শিল্পীর সঙ্গে তবলায় ছিলেন ইফতেখার আলম ডলার এবং হারমোনিয়ামে ছিলেন বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি। প্রথম দিনের আয়োজনের সব শেষ পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন শিল্পী অনিল কুমার সাহা। তিনি পরেবেশন করেন রাগ ‘মালকোষ’। তার সঙ্গে তবলায় ছিলেন সৈয়দ সাজিদ হোসেন, হারমোনিয়ামে বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি এবং তানপুরায় ছিলেন তাসাউফ ইসলাম ও রিদম। আজ শুক্রবার এ উৎসবের সমাপনী দিন। এদিন দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হবে সন্ধ্যা ছয়টায়। চলবে রাতব্যাপী। রাত পেরিয়ে শনিবার ভোর পাঁচটা অবধি বয়ে যাবে শাস্ত্রীয় সুরের অনুরণন। এদিনের আয়োজনে ঢাকার শিল্পীদের কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীতের পাশাপাশি থাকবে রাজশাহীর কণ্ঠশিল্পী অসিত রায়ের কণ্ঠসঙ্গীত, চট্টগ্রামের যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী দোলন কানুনগোর মোহনবীণা বাদন এবং নওগার শিল্পী বিপুল কুমারের কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন। ঢাকার কণ্ঠশিল্পী খায়রুল আনাম শাকিলের কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে উৎসবের সমাপনী দিনের আয়োজন। এছাড়াও এ সমাপনী আয়োজনে ঢাকার বেশ কয়েক কণ্ঠশিল্পী অংশ নেবেন। তারা হলেন রেজোয়ান আলী, অসিত কুমার দে, জগদানন্দ রায়, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি, শ্রাবন্তী ধর, সুপ্রিয়া দাশ, অভিজিৎ কুন্ডু এবং তাসাউফ ইসলাম। আর, ঢাকা শিল্পী হিসেবে অনুষ্ঠানে যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশনে বাঁশি বাজিয়ে শোনাবেন মোঃ মনিরুজ্জামান ও মর্তুজা কবীর মুরাদ এবং সেতারে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুর-লহরী তুলবেন শিল্পী নিশিত দে ও তবলায় প্রশান্ত ভৌমিক। উৎসবের এ শেস দিনের আয়োজনে সবশেষে থাকবে ছায়ানটের যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীদের বৃন্দ তবলা বাদন ও বেহালা বাদন এবং বৃন্দ কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশনা। শিল্পকলায় মুদ্রা প্রদর্শনী ॥ তিন দিনব্যাপী মুদ্রা প্রদর্শনী শুরু হলো বৃহস্পতিবার। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনের ভাস্কর্য গ্যালারিতে ‘মুদ্রা প্রদর্শনী-২০১৭’ শীর্ষক এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ নিউমিসম্যাটিক কালেক্টরস সোসাইটি (বিএনসিসি) ঢাকা ফোরামের সহযোগিতায় এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের প্রচলিত ধাতব মুদ্রা, ব্যাংক নোট এবং মডেল এতে প্রদর্শন করা হচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনসিসির সভাপতি অমলেন্দ্র সাহা। বিএনসিসির সাধারণ সম্পাদক এমএ কাশেম এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। শিশু-কিশোরসহ মোট ৩০ সংগ্রাহক এ প্রদর্শনীতে অংশ নেন। এরা হচ্ছে স্কলাসটিকা, সানবিম, বিয়াম ল্যাবলেটরি স্কুল, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল এ্যান্ড কলেজ, ঢাকা আইডিয়াল প্রিপারেটরি স্কুল, জোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ এবং নয়াটোলা এইউএন মডেল কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। আগামী ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এ প্রদর্শনী সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আজ থেকে বাংলা একাডেমিতে পৌষমেলা ॥ বাংলা একাডেমি চত্বরে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের পৌষমেলা। পৌষমেলা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে ও বাংলা একাডেমির সহযোগিতায় এ মেলা চলবে আগামী রবিবার পর্যন্ত। পৌষমেলা উপলক্ষে একাডেমির নজরুল মঞ্চে প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে দশটা এবং বিকেল চারটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত বাঙালী সংস্কৃতির নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া প্রাঙ্গণজুড়ে ৫০ থেকে ৬০টি স্টল থাকবে। সেখানে রকমারি পিঠা ও দেশীয় কারুপণ্যের সমাহার ঘটবে। সকালে উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি থাকবেন বরেণ্য সাংবাদিক ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক কামাল লোহানী। বরাবরের মতো এবারও আইল্যা জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ। আলোচক থাকবেন বাংলা একাডেমির পরিচালক শাহিদা বেগম, নাট্যব্যক্তিত্ব ঝুনা চৌধুরী ও উৎসবের পৃষ্ঠাপোষক হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াক্ফ) বাংলাদেশের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক কাজী মনসুরুল হক। উৎসবের ঘোষণা পাঠ করবেন পৌষমেলা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়। এবারের পৌষমেলার প্রথম দু’দিন শুক্র ও শনিবার সকালের অনুষ্ঠানটি যথাক্রমে এটিএন বাংলা ও দেশ টিভি সরাসরি সম্প্রচার করবে।
×