ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

গুচ্ছগ্রামের জমি নিয়ে মামলা

শেরপুরে গ্রেফতার আতঙ্কে গ্রামছাড়া ২০ ভূমিহীন পরিবার

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭

শেরপুরে গ্রেফতার আতঙ্কে গ্রামছাড়া ২০ ভূমিহীন পরিবার

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর, ২০ ডিসেম্বর ॥ ঝিনাইগাতী সীমান্তের ডেফলাই ঝিনুক গুচ্ছগ্রামের জায়গার মালিকানা দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে বন বিভাগের দায়ের করা মামলায় পুলিশী গ্রেফতার আতঙ্কে গ্রাম ছাড়া হয়ে পড়েছে ২০ ভূমিহীন পরিবার। সোমবার থেকে ওই এলাকাটি জনশূন্য হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে ওই জমির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন বলছে ভিন্ন কথা। জানা যায়, ১৯৯০ সালে জেলা প্রশাসনের বরাদ্দে স্থানীয় গজনী মৌজার ২৫ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ডেফলাই ঝিনুক গুচ্ছগ্রাম। ওই গুচ্ছগ্রামে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় এলাকার ২০ ভূমিহীন পরিবারের। সেইসঙ্গে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ওই জমিরও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পাঁয়তারা। পরবর্তীতে তারা ব্যাংক ঋণসহ অন্যান্য সহায়তা নিয়ে ওই জমিতে ফলজ বাগান ও খামার বাড়ি গড়ে তোলেন। সম্প্রতি ওই জমির মালিকানা নিয়ে বন বিভাগ ও ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে শুরু হয় বিবাদ। এক পর্যায়ে গত ১৫ নবেম্বর বন বিভাগের গজনী বিটের লোকজন ভূমিহীনদের খামার বাড়ি ও ফলজ বাগান গুড়িয়ে দেয়। এতে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ওই ঘটনায় ভূমিহীন কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুল হাই বাদী হয়ে দ্রুতবিচার আইনে একটি মামলা এবং পরে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। পরবর্তীতে তদন্ত শেষে দ্রুতবিচার আইনের মামলায় আদালতে দাখিল হয় অভিযোগপত্র। আর ওই রিট পিটিশনের আলোকে উচ্চ আদালত ভূমিহীনদের ওই জমির উপর স্থিতিবস্থা বজায় রাখতে স্ট্যাটাসকো আদেশ দেন। এরপর ১৭ ডিসেম্বর ওই জমিতে ভূমিহীনদের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতের আদেশ সংবলিত একটি সাইনবোর্ড জমিতে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে স্থানীয় বন বিভাগের লোকজন। অভিযোগ উঠেছে, গজনী বিট কর্মকর্তা আব্দুর রফিকের নেতৃত্বে বন বিভাগের লোকজন উচ্চ আদালতের ওই আদেশ উপেক্ষা করে ওই সাইনবোর্ডটি গুড়িয়ে দেয় এবং উল্টো ভূমিহীন নেতা আব্দুল হাইসহ ১০ জনকে স্বনামে ও অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১৫ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা ঠুকে দেয়। এরপরই ভূমিহীন পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে পুলিশী গ্রেফতার ও হয়রানির আতঙ্ক। সেই আতঙ্ক মাথায় নিয়ে তারা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে গজনী বিট কর্মকর্তা আব্দুর রফিক বলেন, ঝিনুক গুচ্ছগ্রামের অধিবাসীদের সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত কোন বিরোধ নেই। জায়গাটির মালিকানা বন বিভাগের হওয়ায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে মাত্র। আর ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা করিম বলেন, জায়গাটি সিএস ও আরওআর মূলে খাস খতিয়ানের হওয়ায় এক সময় প্রশাসন ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্দ দিয়ে সেখানে গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় গ্রহণকারীরা বন্দোবস্তের শর্ত ভঙ্গ করে সাবলিজ দিয়ে সেখানে অন্যদের উঠায় এবং বিআরএস রেকর্ডে জমির মালিকানা বর্তায় বন বিভাগের। তাই পরবর্তীতে লিজটি বাতিল করা হয়েছে এবং জমির মালিকানা বন বিভাগের হওয়ায় তারা সেটা রক্ষায় পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে অন্যকিছু ভাবার সুযোগ নেই।
×