ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের রোডম্যাপ ইরানকে কোণঠাসা করা -এনামুল হক

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭

ট্রাম্পের রোডম্যাপ ইরানকে কোণঠাসা করা   -এনামুল হক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনীদের মধ্যে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান। কিন্তু যেহেতু বিষয়টি খুবই জটিল তাই শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজটাও খুব কঠিন এবং বলা যেতে পারে কঠিনতম। আমেরিকার এ সংক্রান্ত শান্তি পরিকল্পনা বা রোডম্যাপ সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখন জানুয়ারি মাসে দেয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে। এ পরিকল্পনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ট্রাম্পের উপদেষ্টা ও জামাতা জাবেড় ক্রুজনার। তাকে সহযোগিতা করছেন মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের দূত জ্যাসন গ্রীনব্লাট, ইসরাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রিডম্যান এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপ-উপদেষ্টা দিনা পাওয়েল। এদের প্রথম তিন জন গোঁড়া ইহুদী যাদের ইসরাইলের প্রতি সহানুভূতি করার সন্ধান হয়। কাজেই মার্কিন পরিকল্পনায় মূলত কাদের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে তা বলাই বাহুল্য। মার্কিন প্রশাসন এই রোডম্যাপের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে একেবারেই মুখ খুলছে না। তবে যেটকু এ পর্যন্ত জানতে পারা গেছে তা হলো এটা এমন এক পথ মানচিত্র যার সুবর্ণিত কোন পথ নেই। নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্পের একটা অঙ্গীকার ছিল যে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে নিয়ে যাবেন। গত জুন মাসেই মার্কিন সিনেট জেরুজালেমকে ইসরাইলের অবিভক্ত রাজধানী ঘোষণা করে একটি প্রস্তাব পাস করে। মার্কিন প্রশাসন শেষ পর্যন্ত যে সমাধানই হাজির করুক না কেন সৌদি আরব সম্ভবত তা সমর্থন করবে। কারণ এ ব্যাপারে ট্রাম্প জামাতা ক্রুজনারের সঙ্গে সৌদি যুবরাজ সালমানের একটা সমঝোতা হয়ে গেছে বলেই মনে হয়। সৌদি দৃষ্টিকোণ থেকে সেই সমঝোতার মূল লক্ষ্য ইরানকে মোকাবেলা করা। এই প্রশ্নে রিয়াদ-ওয়াশিংটন উভয়ে এককাট্টা। সৌদি যুবরাজের বৈদেশিক নীতি খুব একটা প্রশংসিত নয়। তার পরও সম্ভবত তিনি ক্রুজনারকে আশ্বস্ত করতে পেরেছেন যে তিনি মধ্যপ্রাচ্যকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে সাহায্য করতে পারেন যা আমেরিকার স্বার্থের উপযোগী হয়। ট্রাম্পের কথাতেই তিনি গত নবেম্বরের প্রথমদিকে ফিলিস্তিনী নেতা মাহমুদ আব্বাসকে রিয়াদে ডেকে এনে মার্কিন পরিকল্পনা গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আব্বাস এ ব্যাপারে সময় ক্ষেপণ করে চলেছেন। যুবরাজ সালমানের কাছে ফিলিস্তিনীদের রাষ্ট্র লাভের আকাক্সক্ষার চাইতে ইরানকে মোকাবেলা করা ঢের বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইরান এ অঞ্চলে তার প্রভাব বাড়িয়ে চলছে। ইসরাইলও ইরানকে মোকাবেলা করার প্রশ্নে সৌদি দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত। তাই যুবরাজ সালমান ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছেন। খবর আছে যে ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সৌদি আরবকে সাহায্য করার জন্য ইসরাইল তাদের গোয়েন্দা তথ্য যুগিয়েছে। যুবরাজ সালমান হয়ত হিসাব করে দেখেছেন যে ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটা টেকসই শান্তি প্রক্রিয়া চললে ইসরাইলের সঙ্গে তাদের জোটটা আরও প্রকাশ্য রূপ দেয়ার জন্য একটা রাজনৈতিক ছত্রছায়া পাওয়া যাবে। ফিলিস্তিনী শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করার ব্যাপারে অন্যান্য আরব দেশেরও স্বার্থ আছে। সিসির নেতৃত্বে মিসর শান্তি প্রক্রিয়ায় আরও সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে এবং সম্প্রতি হামাস ও ফাতাহর মধ্যে বিবাদ অবসানে সাহায্য করেছে। সিরিয়ারও লক্ষ্য হচ্ছে ইরান ও কাতার থেকে হামাসকে বিচ্ছিন্ন করা। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এ ব্যাপারে সিসিকে সমর্থন দিচ্ছে। এক চুক্তির অধীনে তারা সম্ভবত ফিলিস্তিনী এলাকার উন্নয়নে তহবিল চালালে এবং সেই সঙ্গে ইসরাইলকে নিরাপত্তার ব্যাপারটিও দেবে। ফিলিস্তিনীরাও শান্তি আলোচনা চায়। কিন্তু তাদের আশঙ্কা তাদের এমন এক সমঝোতায় ঠেলে দেয়া হবে যাতে ইসরাইল পশ্চিম তীরের ওপর সামরিক নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যায়। এদিকে ইসরাইলও চাপ দিচ্ছে যে শান্তি আলোচনা শুরুর আগে হামাসকে অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে। নেতানিয়াহু বা আব্বাস কেউ আমেরিকান পরিকল্পনাকে বর্জন করতে চান না। তাই বলে তাদের কারবার এই পরিকল্পনার ব্যাপারে বাস্তব আগ্রহ নেই। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন যে আমেরিকার রোডম্যাপ, তা সেটা যাই হোক না, সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কারণ রোডম্যাপের উদ্দেশ্য যত না ফিলিস্তিন ইসরাইল শান্তি প্রতিষ্ঠা তার চেয়ে বেশি ইরানকে মোকাবেলা করা ও কোণঠাসা অবস্থায় ফেলা। সূত্র : ইকোনমিস্ট
×