ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

রসিক নির্বাচন

শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত প্রার্থীরা, সঙ্গে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত প্রার্থীরা, সঙ্গে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ

স্টাফ রিপোর্টার ঢাকা ও নিজস্ব সংবাদদাতা রংপুর \ শেষ মুহ‚র্তে জমে উঠেছে রংপুর সিটি নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা। প্রার্থীরা ভোট প্রার্থনা করতে সকাল থেকে রাত অবধি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। প্রার্থীদের সঙ্গে ভোট প্রার্থনায় যুক্ত রয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। সময় যত এগিয়ে আসছে নির্বাচনী উত্তাপ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর একদিন পরেই অনুষ্ঠিত হবে কাক্সিক্ষত সিটি নির্বাচন। এ নির্বাচনকে বিশেষজ্ঞরা জাতীয় নির্বাচনের আগে ইসির অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে উল্লেখ করেছে। বৃহস্পতিবারই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কাক্সিক্ষত নির্বাচন। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতিসম্পন্ন করা হয়েছে। আর একদিন পরেই নির্ধারণ হয়ে যাবে কে হবেন এবারের রসিক পিতা। এদিকে কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে নিজ দলের প্রার্থীর জয়ের বিষয়ে আশবাদ ব্যক্ত করেছেন। তারা জানান নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তাদের দলের প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবেন। আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। অপরদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ সোমবার রংপুরে এক নির্বাচনী সভায় বলেন, রসিক নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে কোন শঙ্কা আছে বলে মনে করেন না। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবে। অপরদিকে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমেই প্রমাণ হবে দেশে জনগণ এই সরকারের সঙ্গে নেই। এদিকে রাজধানী নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে (রসিক) বিএনপির সমর্থকরা যাতে ভোট দিতে না পারে সেজন্য তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন রংপুর সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। ২০১২ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই সিটির নির্বাচন। আইন অনুযায়ী দলীয়ভাবেই মেয়র পদে ভোট অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। সাধারণ কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত কাউন্সির পদে নির্দলীয়ভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। মেয়র পদে আওয়ামী, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থীসহ মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতি›িদ্বতা করছেন। অপরদিকে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ২১২ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিল প্রার্থী ৬৫ জন মোট ২৮৪ জন প্রার্থী এ সিটিতে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। তবে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে যেমন তাদের দলীয় বিবেচনা রয়েছে তেমনি রয়েছে প্রার্থীর ইমেজ। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু এ সিটির সদ্য সাবেক মেয়র ছিলেন। তিনি ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো রংপুর সিটির মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। এলাকাবাসী জানিয়েছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নিজের জেলা হিসেবে জাতীয় পার্টি একটি আলাদা ভোট ব্যাংক রয়েছে এখানে। পাশাপাশি ভোটের ময়দানে বেশ প্রভাবশালী হওয়ায় এবারের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফিজার রহমানের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী কাওসার জামান বাবলাও দলীয় বিবেচনায় বেশ ভোট টানতে পারেন। তবে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে আওয়মী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর। এলাকাবাসী সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফিজার রহমানের দলীয় ভোটের পাশাপাশি ব্যক্তি ইমেজও তার ভাল রয়েছে। ব্যক্তি ইমেজেও তিনি অনেক ভোট পাবেন। এছাড়া সদ্য সাবেক মেয়র হিসেবে সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর প্রভাব থাকলেও অনেকে তার আচার ব্যবহার নিয়ে অভিযোগ করেছেন। জানা গেছে, প্রথমবারের মতো নির্বাচনে মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু এক লাখের বেশি ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার সঙ্গে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় ছিলেন মোস্তাফিজার রহমান। তিনি ৭৭ হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থান ছিলেন। অপরদিকে প্রথমবারে নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ভোট পেয়েছিলেন ২১ হাজারের কিছু বেশি। এবাবও আওয়মী লীগ জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির পক্ষ থেকেও এই তিনজন প্রার্থীই প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। এলাকাবাসী জানিয়েছে এবারের ভোটের হিসাবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান গতবারের চেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছেন। তিনি বর্তমানে এলাকায় পার্টির চেয়ারম্যানের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তাই ভোটের ময়দানে সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর সঙ্গে এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে তার। তবে দলীয় ইমেজের কারণে বিএনপি প্রার্থী ভোট আগের তুলনায় এবার বেশি ভোট পেলেও প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হচ্ছে না। তারা জানায়, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জামায়াতের একটা ভোট ব্যাংক রয়েছে। এর একটি অংশ বিএনপি প্রার্থীর ঝুলিতে যাবে। এ কারণে গতবারের চেয়ে এবার তিনি বেশি ভোট পেলে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় আসবেন না। গতবার ২১ হাজার ভোট পেলেও একার তার ভোট বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৩০ হাজারের বেশি। এদিকে শেষ মুহূর্তে এসে জমে উঠেছে রংপুর সিটি নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা। নির্বাচনী প্রচারে যোগ দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। তারাও প্রার্থীদের সঙ্গে দিন-রাত মাঠে চষে বেড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর পক্ষে প্রচারণার জন্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহাম্মেদ হোসেনের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বিভিন্ন এলাকায় নিজ দলের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সমাবেশও করেন। দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার পক্ষে গণসংযোগের জন্য শনিবার থেকে প্রচার চালাচ্ছেন দলটির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিজ দলের মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তফাকে সাহস যোগাতে সোমবার সকালে রংপুরে এসেছেন দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরশাদের আগমনে তার দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে এরশাদের রংপুরে আগমন ভোটারদের মাঝে একটি প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ৩ দিন ধরে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী কাওসার জামান বাবলার পক্ষে রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক। তারা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কাওসার জামান বাবলাকে নিয়ে গণসংযোগ করছেন। এদিকে ইসি সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচনের প্রচারের সময়সীমা শেষ হচ্ছে আজ ১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাত ১২টায়। এ সময়ের পর বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকায ত্যাগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী উত্তাপ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। নির্বাচনী প্রচার বন্ধ হওয়ার পরে শুরু হবে সময় গণনার পালা। প্রচার-প্রচারণা শেষে জনগণ এখন হিসাব করছেন কে হবে এই সিটির পিতা। প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তের প্রতিটি সময়কেও মূল্যবান ভাবছেন। তাই ভোটের পূর্ব মুহ‚র্তে শেষবারের মতো ভোটারদের কাছে ছুটছেন প্রার্থীরা। এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সোমবার দুপুরে ঢাকা থেকে বিমানযোগে রংপুর আসেন। পরে নগরীর দর্শনা এলাকায় তার নিজ বাস ভবন ‘পল্লী নিবাস’ এ উপস্থিত সাংবাদিকদেরকে এসব কথা বলেন। জাপা প্রার্থী মোস্তফা দলীয় প্রতীক লাঙ্গলের কারণে জয়ী হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মোস্তফা নিজেও জনপ্রিয়। এছাড়া দলের প্রতীক লাঙ্গলও নির্বাচনে জয়ী হতে বিশেষ ভ‚মিকা রাখবে বলে মনে করি।’ এরশাদ বলেন, ‘নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার কোনও প্রয়োজন নেই। তবে নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে কি করবে এখনও আমরা জানি না।’ নির্বাচনে কালো টাকা ছড়ানো ও আচরণবিধি লঙ্ঘন করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা অসম্ভব জনপ্রিয়। আমার বিশ্বাস সে বিজয়ী হবে। তবে বিএনপির বিভিন্ন সমালোচনার বিষয়ে কোনও কথা বলেননি তিনি। এর আগে এরশাদ ঢাকা থেকে বিমানযোগে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখান থেকে সরাসরি মোটর শোভাযাত্রা সহকারে তার বাস ভবন পল্লী নিবাসে এসে পৌঁছলে দলের নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। এদিকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিতে সোমবারই রংপুর আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তিনি বলেন, দেশের রাজনীতিতে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এই নির্বাচন দিয়ে হয়ত সরকার পরিবর্তন হবে না। কিন্তু এই নির্বাচন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে একটি বাণী দিতে পারবে যে জনগণ আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে। সোমবার দুপুরে রংপুর মহানগরীর সিও বাজারে বিএনপির মেয়র প্রার্থী কাওসার জামান বাবলার পক্ষে প্রচার সভায় এসব কথা বলেন তিনি। আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে ঝন্টুকে ইসির শোকজ \ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়। সহকারী নির্বাচন কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, রবিবার দুপুরে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে যুবলীগের প্রতিনিধি সভা করা হয়। সেখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর সমর্থনে ব্যানার টাঙ্গিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালানো হয়। এটি নির্বাচন আচরণ বিধির ৭ (খ) ধারার পরিপন্থী। এ অভিযোগ পাওয়ার পর রবিবার রাতেই মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। জাতীয় পার্টির মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির বলেন, সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন । এর ফলে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। এ বিষয়ে সময় মতো যথাযথ পদক্ষেপ নিতে তিনি নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
×